না বলা কথা:
"একদিন বাঙালী ছিলাম রে".... এখন তাইলে কি?
Palash BiswasBANGALEER ITHASE SAPTAM SATABDITE SHASHANKER RAJATYA AVSAANER PAR THEKE PAL BANSHER ABHUDAY PARJANTO ABODHI KE BRAHAMAN ITIHASBIDRA ANDHOKAR JUG BOLE CHINHIT KORECHHEN. ATHOCHO EISMAYEI CHARJA PAD SRISHTI HOYECHHILO. JANMO NIYECHHILO BANGLA SAMET BIBHINNO BAHASHA.
BHARAATIAY UPAMAHADESHER ITIHAS NIYE JOR JOCHHURI CHOLCHHE. GAURE KHANAN KARJO BANDO KORE DEOYA HOYECHHE JEHETU PURATAN BRATYA ANTYAJ ITIHAS TATHKATHIT BIDYATJANDER KHUSHI KORTE PARENI.
PASCHIM BANGE JARA DALIT ANDOLAN BA UDVASTU ANDOLAN KORE THAKEN , TARA SABAI MUSLIM BIDWESHE AKRANTO AVAM BHARAT BHAGER JANYO MUSLIM LEAGEUE, MD. ALI JINNAH AVAM MUSLMANDER DAYEE KORE THAKEN.
TARKER KHATIRE MENE NILAM. KINTU GATO 1947 SAAL THEKE BHARATE BRAHMAN BANIYA RAJ STHAPITO HABAR PAR THEKE MULNIVASI DALIT ANTYAJ ADIVASI MANUSHDER JANYO JE MRITYU NIYATI ABODHARITO ABAM TARA NAGARIKATVA CIVIL HUMAN RIGHT THEKE BANCHITO. TADER BIRUDDHE JE CORPOORATE JUDDHA GHOSHANA HOYECHHE , TAR JANYO KI MUSLMANRA DAYYE?
BANGALI MULNIVASI SC UDBASTU JAR 90 PERCENT NAMOSHUDRA, PAUNDRA KHATRIYO, JARA DESHBHAGER BALI ABAM JADER PUNARBASAN AAJO HAI NEE ATHACHO PANJABEE UDVASTUDER NAGARIKATYO NIYE KAKHANO PRSHNAO OTHE NEE.
BANGLAR ITIHASE BRAHAMANDER AAGAMAN SEN BANSHER SHASHANKALE, DIRGHO KAL DHORE BUDDHA JUG CHOLECHILO. BAUDDHADER DHARAMNTRANER ADALE TADER NIRMAM HATYALILA SANGTHITO HAI. ANATIBILAMBE JARA BENCHE JAI, TADER SHUDRAYAN HAI. SHUDRA JIBANE BRAHAMNYBADER ATYACHARE TARAI AABAR DHARMANTRIT HOYE SAAMYER DHARMO ISLAMER SHARANAPANNO HAI. TARA AAMADER I RAKTER MANUSH. BRAHAMNDER DNA URASIAN. SEI BIDESHIRA DUI BANGLAY AAMADER BICHHINO KORE RAJATA YA I CHALACHHE NAA BARANG GENOCIDE CULTURE CHALU KORECHHEN, BANGLADESH ATHOVA PASCHIM BANGER RAKTATO SANGHARSHO O SANTRASE MRITO PRATITI MANUSHI AAMADER ATYIO. ATHACO AAMRA HINDU HOYE MUSALMANDER GHRINA KORI ABAM MANUSMRITI SHASHONE BIBHAKTA 6 HAJAR JATIR ANDARE EKE ANYAKE ASHPRISHYA MONE KORI. HINDU MUSLIM, TARPAR ADIVASI, SC, ST- AAMRA MULNIVASI 85 SHATANGSO ATHACHO JIBANER PRATITI KHETRE 3 PERCENT BRAHAMNDER RAJATVA.
BIUDDHA AVAM PRANAB ABAM ADVANI AAMADER DHANKSO KARAR CHAKRANTO KORECHHEN. PRATHAME NAGARIKTVA AAAINE SNGSHODHAN KORE AAMADER BANGLADESHI GHUSPATHIA SABYASTO KARA HOLO.
EBAR UNIQUE IDENTITY NUMBER. PRIVATE COMPANI AAMADRE NAGARIKTVA THIK KORBEN POICE INTELLIGENCE REPORTER BHITTITE.CABIMET RANKE UNNITO INFOSIS ER PURBA CHAIRMAN BRAHAMAN NILEJKANI BOLEI DIYECHEN JE MATRO 60 KOTI MANUSHKE EI NUMBER DEOYA HABE. AAMADER MANUSH KOTHAYA JABE?
UDBASTUDER PUNARBASAN HAINI. HOLE BANGLAY MATRO DU BA OPANCH KATHA BASAT BADEER JAMI. BAHIRBANGE JARA PUNARBASN PEYECHEN TADER JAMIR MALAIKAN SWTYA NEI. PASCHIM BANGE UDVASTU UPONIVESH BESHI BHAGAI JABAR DAKHAL COLONY. 23 LAKHHO MANUSH AAGEI DOUBTFUL BANGLADESHI BOLE CHINHIT ABAM VOTER LIST THEKE BAD PASCHIM BRAHAM BANGE.
BANGLAR BAIRE JJARA AACHEN JEMON DANDAKARANYE,JADER MARICHJHANPITE DEKE ENE GANOSANGHAR DHARSHAN KARA HOLO, GATO TRISH BATASARE TAR BICHAR CHAINI BUDDHIJIB CIVILSOCIETY MEDI JARA NANDIGRAM SINGUR LALGARH NIYE PARIBARTANER JHAD TULECHHEN.
MAMAT BANAERJEE BRAHAMNA KANYA HOYE MATUA HOYECHHE KINTU DANDAKARNYE TARI MANTRI SABHA OPERATION KAVERY OPERATION GODAVARI KORCHHE JAMI DAKHALER CORPORATE JUDDHA ANTARHGATA. TIN KOTI BANGALI O TAMIL SC UDVASTURA MAOVADI O RASHTRER BANDUKER MUKH BIPARJASTO. BANGLA ABAM TAR TABAD BISHSWA JANNEEN ICON ABAM MAMATAR MATHABYATHA NEI.
TAHALE KI AAMRA BANCHAR JNYO AAMADER SC ST OBC MUSALMAN BHAIDER NIYE BANCHAR LADAI LADBO NAA BRAHAMN FRONTER RAJATVE MITHYA BRAHAMANTVER DAMBHO NIYE MORE BENCHE THAKBO?
Unique Identification Number
From Wikipedia, the free encyclopedia
This article may need to be wikified to meet Wikipedia's quality standards. Please help by adding relevant internal links, or by improving the article's layout. (August 2009) |
Unique Identification Number (UID) is a recently finalized initiative by the Government of India to create and manage a centralized identification system for all the adult citizens and residents of India, which can be utilized for a variety of identification purposes. Nandan Nilekani former co-chairman of Infosys has been appointed as the head of Unique Identification Authority of India and will have a ministerial rank. [1] He has decided to step down from the board of Infosys Technologies.[2] The authority is notified as an attached office under the aegis of the planning commission.
Contents[hide] |
[edit] History
The UID system is being considered since last 6 years, but it gained traction only after the 26/11 attacks on Mumbai.[3]
[edit] Format
The ID system is likely to be a large alpha-numeric string in order to accommodate the count of billion-plus citizens of India and ones that will be born in future. The card is likely to have a 16kb or 64kb storage chip embedded.Adding a photograph and biometric data would be planned progressively. [4]
[edit] Purpose and use
The ID is fundamentally being prepared to identify Indian citizens so that better security can be provided by identifying illegal immigrants and terrorists. However, the real power of the ID is in its ability to provide ease of identity establishment to Indian citizens when accessing a variety of governmental and private-sector services.
The likely benefits of the new ID system to the citizens will be as below: 1) Subsidies on food, energy, education, etc to people who are entitled to receive them. 2) Opening bank accounts 3) Getting new telephone, mobile or internet connections, 4) New light or gas connections 5) Getting a passport 6) The same card may act as a driving license and store your traffic violation records 7) It may act as your electoral card 8) Family genealogy may be traced
[edit] Funding
The Government had allocated Rs 100 crore in the interim Budget to startup this project.[5] The overall cost estimated for the project is likely to be in excess of Rs 10,000 Crore
[edit] Implementation
In the first phase, the UID will be issued to people living in the coastal villages of Andhra Pradesh, Gujarat, West Bengal, Kerala, Goa, Karnataka, Tamil Nadu, Maharashtra and Orissa. The Union Territories of Puducherry, Andaman & Nicobar Islands, Dadar and Nagar Haveli as well as Lakshadweep shall also be covered in the first phase. The first lot of cards is expected to be delivered by early 2010.[6]
[edit] See also
- National identification number
- Social Security number
- Multipurpose National Identity Card
- Unique Identification Authority of India
[edit] External links
- UIDnumber.org - For promoting UID
- India to launch 'ID card' scheme
- Govt downloads Infosys Nilekani, he says first unique ID card within 2 years
- What Nilekani will log on to in the ID project
- Is UID really Unique? Read More and write your views
[edit] References
|
কীসের জন্য তারা পালিয়ে গেল?
দি ইকোনমিস্ট, ১২ জুন, ১৯৭১
কলকাতা থেকে আমাদের বিশেষ প্রতিনিধির পাঠানো রিপোর্ট
অনুবাদ: ফাহমিদুল হক
'আমাদের জনসংযোগের যন্ত্র প্রস্তুত ছিল না। আমাদের সেনাবাহিনীর জনসংযোগ-কর্মকর্তারা ২৫ ও ২৬ মার্চে ঢাকায় ছিলেন না, এবং আমরা অবশ্যই সেখানে বিদেশী প্রতিনিধিদের সঙ্গে একটা ভুল করেছিলাম।' একজন সিনিয়র পশ্চিম পাকিস্তানি কূটনীতিক এভাবে স্বীকার করলেন যে পূর্ব পাকিস্তানকে তার সরকার যেভাবে মোকাবেলা করেছে তা পুরোপুরি সঠিক ছিল না। পূর্ব পাকিস্তানে কী এমন ঘটেছে যে পৃথিবীর সবচাইতে জনবহুল এবং দারিদ্র্যপীড়িত জনগোষ্ঠীর ৫০ লক্ষ মানুষ সীমান্ত অতিক্রম করে উদ্বাস্তুতে পরিণত হলো?
শেখ মুজিবের আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে পশ্চিম পাকিস্তানের সৈন্যরা ২৫ মার্চের রাতে অভিযান চালিয়ে গুলিবর্ষণ করে ও ঢাকার একাংশ ধ্বংস করে ফেলে এবং পরের ছয় মাসে পূর্ব পাকিস্তানের বেশিরভাগ অংশে নিয়ন্ত্রণ স্থাপন করে। এর ফলে লাখ লাখ উদ্বাস্তু সীমান্তবর্তী ভারতীয় রাজ্যগুলোতে পালিয়ে যায়। সেনাবাহিনীর মতে মার্চে আওয়ামী লীগের চরমপন্থীরা একটি অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা করছিল এবং এর ফলে পূর্ব পাকিস্তানে বসবাসরত হাজার হাজার পশ্চিম পাকিস্তানী ও বিহারীরা ( এরা পশ্চিম-পাকিস্তানি শাসকদের সঙ্গে সবসময় ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত) বাঙালিদের দ্বারা নিগৃহীত হতো। আর সেনাবাহিনীর সেদিনের দ্রুত পদক্ষেপ সবকিছু রক্ষা করে।
ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের কিছু সদস্য এবং পুলিশ ও আধা সামরিক সীমান্তরক্ষীরা সেদিন সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল। আওয়ামী লীগের নেতারা, যারা ভারতে পালিয়ে যেতে পেরেছিলেন, তারা স্বীকার করেছেন বেশ কিছু পাঞ্জাবী ও বিহারী নিহত হয়েছিল। কিন্তু এটা কোনো পরিকল্পিত ঘটনা ছিল না। কী ঘটতে যাচ্ছে তা বোঝার আগেই অনেক সৈন্য ও পুলিশকে ধরা হয়েছিল, অস্ত্র কেড়ে নেয়া হয়েছিল, হত্যা করা হয়েছিল। শেখ মুজিবকে তার বাসভবন থেকে ধরা হয়েছিল এবং তারা দলের নেতাদের কাউকে গ্রেফতার করা হয়েছিল, কেউ অল্পের জন্য পালিয়ে বেঁচেছিলেন। সহিংসতা দুই দিক থেকেই হয়েছিল, এবিষয়ে অল্প হলেও সন্দেহ আছে। কিন্তু মুসলিম ও হিন্দু (এবং খ্রিস্টান), শিক্ষিত ও অশিক্ষিত উদ্বাস্তুর ঢল দেখে বোঝা যায়, জনগোষ্ঠীর প্রধান কেন্দ্রগুলোত নিয়ন্ত্রণ স্থাপনের জন্য যা করা প্রয়োজন, পাকিস্তানী সেনাবাহিনী তার চাইতে বেশি কিছু করেছে।
সেনাবাহিনী কী করেছে? প্রতিটি অভিযানের পর দেখা গেছে গ্রামগুলো পুড়ে ছাই হয়েছে এবং মানুষগুলো মরেছে। একটি ব্যাখ্যা এরকম আছে যে, মাত্র ৭০,০০০ সৈন্য দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানী সরকার পুরো পূর্ব পাকিস্তানে নিয়ন্ত্রণ রাখতে চাইলে এধরনের সহিংসতার পথই নিতে হবে। কিন্তু সত্যি কথা হলো ভবিষ্যতের রাজনৈতিক সমাধানের জন্য এধরনের নীতি ক্ষতিকর। কারণ রাজনৈতিক সমাধান অস্ত্রের শক্তির ওপর নির্ভর করে না, এখানে মানুষের গণহারে দেশত্যাগের ব্যাপারও রয়েছে। কিছু শিক্ষিত উদ্বাস্তু ব্যাখ্যা দিলেন, 'সৈন্যদের গুলি করতে উদ্বুদ্ধ করার জন্য অফিসাররা তাদের বলে যে এটা একটা ধর্মযুদ্ধ। তারা বলেছে যে ইসলামী রাষ্ট্রটি হিন্দু, আওয়ামী লীগ নেতা ও বুদ্ধিজীবিদের কারণে হুমকির সম্মুখিন।'
মৃত, ধৃত অথবা পলাতক বেশিরভাগ বুদ্ধিজীবী ও আওয়ামী নেতাদের হিন্দু দেখতে পেলে সেনাবাহিনী খুশি হয়। পূর্ব পাকিস্তানের সাড়ে ৭ কোটি জনগোষ্ঠীর এক কোটি হিন্দু এবং এরা গণহারে সীমান্ত অতিক্রম করে গেছে। কিন্তু কেবল সেনাবাহিনীই হিন্দুদের তাড়িয়ে দিয়েছে তা নয়। বিহারী ও ডানপন্থী মুসলিম লীগারদের নিয়ে সম্প্রতি গ্রামে গ্রামে গঠিত তথাকথিত শান্তিকমিটির সদস্যরাও হিন্দুদের সম্পত্তি দখল করে নিয়েছে, লুট করেছে এবং তাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়েছে।
সীমান্তাঞ্চলে যে যে স্থানে সেনাবাহিনীর শক্তি বেশি এবং যে যে স্থানে সেনাবাহিনী তাদের অভিযান চালিয়েছে সেখানকার লোকজনের সীমান্ত অতিক্রম করে পালিয়ে যাবার হার বেশি। প্রথমে এই পালিয়ে যাবার হার ছিল মোটামুটিভাবে অর্ধেক মুসলমান, অর্ধেক হিন্দু। কিন্তু মে মাসের প্রথম দিকে যখন পাকিস্তানি সৈন্যরা সীমান্তের কাছাকাছি পৌঁছে যায়, হিন্দুদের পালিয়ে যাবার হার তখন অনেক বেড়ে যায়। ভারতের যেসব রাজ্যে তারা বেশি পরিমাণে যেতে থাকে, যেমন পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও ত্রিপুরা, সেসব রাজ্যে এই আশংকা কাজ করা শুরু হয় যে সীমান্তের ওপারে একজন হিন্দু থাকা পর্যন্ত এই প্রবাহ চলতে থাকবে। প্রথমে উদ্বাস্তুর সংখ্যা শুনে মনে হয়েছে রাজ্যগুলো কেন্দ্রের সাড়া দ্রুত পেতে হয়ত সংখ্যাটি বাড়িয়ে বলছে। কিন্তু জাতিসংঘের স্থানীয় সংস্থাগুলো ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো এই সংখ্যাই যে সঠিক তা গুরুত্বাসহকারে বলেছে। বরং মোট সংখ্যার অর্ধেকরও বেশি ক্যাম্পে অবস্থান করছে বলে সহজে গণনা করা গেছে। বাকিদের সীমান্তে এবং খাবার বিতরণের স্থানে গণনা করা সম্ভব হয়েছে। গত সপ্তাহের মাঝামাঝি ভারতীয় পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের হিসেব মতে সাম্প্রতিকতম মোট সংখ্যা হলো ৪৭ লক্ষ, যার মধ্যে ২৭ লক্ষ ক্যাম্পে অবস্থান করছে এবং বাকিরা বন্ধু বা আত্মীয়স্বজনের বাসায় অবস্থান করছে অথবা নিজেদের মতো ব্যবস্থা করে নিয়েছে।
ভারতের প্রাথমিক নীতি ছিল উদ্বাস্তুদের সীমান্তের কাছাকাছি সীমাবদ্ধ রাখতে। এখন সেটা আর কার্যকর নেই। ত্রিপুরার জনসংখ্যা এখন প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম সীমান্ত এলাকায় বেড়ে গিয়েছে, যেসব উদ্বাস্তু ক্যাম্পে নেই তাদের কারণে শ্রমের মজুরি কমে গেছে। কিছু এলাকায়, যেমন পশ্চিমবঙ্গে, নতুন ক্যাম্প স্থাপন করার জন্য খুব সামান্যই স্থান খালি আছে। সহিংসতার হুমকি প্রতিদিনই বেড়ে চলেছে কারণ ভারতীয় সীমান্তাঞ্চলের বেশিরভাগ লোকই হলো মুসলমান। ক্যাম্পগুলোর প্রশাসননিক সাফল্য ভালোই বলতে হবে, যেক্ষেত্রে সীমান্তঅঞ্চলগুলোতে কাজ করাটাই ম্যজিস্ট্রেটদের জন্য বাড়তি দায়িত্ব হিসেবে এসেছে। কলেরা মাহামারি বাকি বিশ্বকে হতবাক করে দিলেও, অনেক বৈদেশিক সংস্থাই কলেরা প্রতিরোধের জন্য কয়েক সপ্তাহ যাবত কাজ শুরু করে দিয়েছে। ভারতীয় সরকারের মে মাসের কেনাকাটার তালিকায় ২৫০,০০০টি তাঁবু ও ত্রিপল থাকলেও তাকে বাড়াতে হবে, যদিও কেউই জানে না কখন প্রকৃত দাবিকে স্পর্শ করা যাবে।
যদি ভারতে পরিস্থিতি খারাপ হয়ে থাকে, তবে পাকিস্তানে অবস্থা অবশ্যই তার চাইতেও খারাপ। এঅঞ্চলের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম থেকে সারা দেশের বিচ্ছিন্ন রয়েছে। শহর এবং গ্রামে জনগণের অসম চলাচল রয়েছে। গত নভেম্বরের ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষত এখনও সারিয়ে তোলা হয়নি। যানবহনগুলোকে খাদ্য-পরিবহণের পরিবর্তে সৈন্য-পরিবহণের কাজে বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে। অনেক এলাকাতেই বর্ষা-পরবর্তী প্রধান ফসল ধানের বীজ বপন করা হয়নি। পাকিস্তান নীতিগতভাবে পূর্বাংশে জাতিসংঘের সাহায্য গ্রহণ করতে সম্মত হয়েছে। এটা একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতিগত পরিবর্তন। একজন কেবল এটাই আশা করতে পারে যে, প্রক্রিয়াটিতে যেন খুব বেশি দেরি না হয়।
বাংলার ইতিহাস : এক নজরে
এখন পড়বেন না। লেখা শেষ হয়নি। সেভ করার অপশন নেই বলে পোস্টই দিয়ে দিতে হচ্ছে।
হাসান মোরশেদের এই লেখাটিতে কোন কুক্ষণেই যে একটা মন্তব্য করেছিলাম! তিনি আবার অনুরোধ করেছেন বাংলার ইতিহাস নিয়ে যেন কিছু লিখি। অবশ্য বাংলার ইতিহাস নয়, তিনি অনুরোধ করেছেন দখদারিত্বের ইতিহাস নিয়ে যেন কিছু বলি। বাংলার অঞ্চলের বারবার অধিকৃত হবার ইতিহাসটিকে তিনি তার লেখায় তুলে ধরতে চেয়েছেন এবং সেই বিষয়ে খানিকটা আলোকপাত করার জন্য আমাকে বলেছেন।
রোমিলা থাপারের ভারতবর্ষের ইতিহাসটা পড়তে পারেন। বাংলার ইতিহাস হবে না হয়তো, কিন্তু বাংলা তো ঠিক বিচ্ছিন্ন ভাবে আজকাল আমরা যেমন দেখি, তেমন ছিল না সবসময়ে, সুতরাং মোটাদাগে একটা ধারণা পাবেন। সাবঅলটার্ন গ্রুপের লেখালেখিগুলোও পড়তে পারেন।
আমি একটা লেখা দিবোনে, শেষ পর্যন্ত। কিন্তু এখন খুব সংক্ষেপে এক লাইনে বাংলার ইতিহাসটা একটু বলে যাই। বিরোধ থাকলে বলবেন। ব্যাখ্যা দরকার হলে করবেন।
এক. প্রাগৈতিহাসিক যুগ মানে পাথরের ব্যবহারের যুগ- প্রায় পুরো বাংলাদেশই গঠিত হয়েছে প্রায় ১৫ থেকে ২৫ লাখ বছর আগে (স্থানভেদে সময়ের হেরফের ঘটে)। বাংলার বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রাগৈতিহাসিক মানুষের বসতির নিদর্শন পাওয়া গেছে।
দুই. সভ্যতার যুগ- সিন্ধু, মিশরীয় এবং চীনা সভ্যতার সমকালে বাংলা অঞ্চলে ঐ ধরনের কোনো সভ্যতা ছিল কিনা তার নিশ্চিত প্রমাণ পাওয়া যায় না। তবে ঐ সময়ে (প্রায় ১৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে) বাংলা অঞ্চলে যে মানববসতি ছিল এবং তাদের বিভিন্ন অ্যাক্টিভিটি ছিল, প্রত্নতাত্ত্বিক খনন থেকে তার ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
তিন. ঐতিহাসিক যুগ- বাংলার ঐতিহাসিক যুগ ধরা হয়, কমবেশি খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয়-চতুর্থ শতক থেকে। ঐ সময়ে ভারত শাসন করতেন অশোক। অশোক যদিও পশ্চিমবাংলার প্রান্তীয় শাসক তবু তাকে বাংলার শাসক বলা যায় হয়তো। কিন্তু অশোক না, তার অনেক আগে থেকেই বাংলা যে সমৃদ্ধ এক জনপদ ছিল তার প্রমাণ পাওয়া যায় বেশ কিছু টেক্সটে। ভারতসহ বিশ্বের বড়ো সামরিকশক্তিগুলো যখন কোনো আগ্রাসী শক্তির কাছে ইতিহাসের বিভিন্ন পর্বে পরাজিত ও অধিকৃত হয়ে গিয়েছিলো, তখনও কিন্তু এক অদ্ভুতভাবে বাংলা (বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পূর্ব বাংলা মানে এখনকার বাংলাদেশ) ওই আগ্রাসীদের রুখে দিয়েছে। আর্যরা তো বাধাপ্রাপ্ত হয়ে "শুদ্ধির অযোগ্য, পক্ষীভাষী" কতো গাল-ই না পাড়লো! আলেকজান্ডারের "হায় সেলুকাস" তো প্রবাদসম হয়ে গ্যাছে! ভার্জিলের বাঙালিগাথা তো জগদ্বিখ্যাত। টলেমি আর প্লিনি বলেছেন এক ঋদ্ধ জাতির কথা। এই সবই অশোকের আগের কথা। মোটামুটি খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ সাল থেকে অশোকের সময় অবধি এর বিস্তার।
অশোকের পর বাংলার শাসনে আসে গুপ্তরা। শুঙ্গ ও কুষাণের সামান্য ও বিচ্ছিন্ন সময়টি বাদ দিলাম। সমুদ্রগুপ্ত তার রাজ্যবিস্তারের জন্য খুবই বিখ্যাত। তাকে উত্তরাপথস্বামী বলা হয়। এখানে একটা কথা খুব ভালো করে খেয়াল করতে বলবো। সেটা হলো
পরবর্তীতে বাংলার শাসক শশাঙ্কের কথা ভারতবাসী চিরদিন মনে রাখবে! কি শাসানিটাই না দিয়েছে! (?) তারপর পালশাসকগণের কথা তো বলাই বাহুল্য। মুসলিম যুগের আয়রনিতে তো মুসলিম আগন্তুকরাই সবচেয়ে কষ্ট পেয়েছে। ভারতে যখন প্রথম পর্বের মুসলিম শাসন শেষ হয় হয়, তখনো বাংলায় মুসলমানরা ঢুকতেই পারেনি। দ্বিতীয় পর্যায়ের মুসলিম শাসনের শেষভাগে যা-ও এলো শুরু হলো "বাংলার স্বাধীন সুলতানী আমল"। ইংরেজ আমলের পুরো সময়টাতেই বাংলা-ই ছিল ভারত-শাসনের কেন্দ্র।
http://www.sachalayatan.com/juthochari/614বাংলার ইতিহাস
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বাংলার ইতিহাস মোটামুটি ভাবে চার হাজার বছরের পুরনো । কিছুটা হলেও গঙ্গা এবং ব্রহ্মপুত্র নদী বাংলাকে ভারতের মূল ভূমি থেকে পৃথক করে রেখেছে । ভারতের ইতিহাসে বাংলা বরাবরই একটি মুখ্য ভূমিকা গ্রহন করেছে।
সূচিপত্র[আড়ালে রাখো] |
[সম্পাদনা] প্রাচীন ইতিহাস
প্রায় চারহাজার বছরের পুরনো তাম্রযুগের ধ্বংসাবশেষ বাংলায় পাওয়া গেছে ।
ইন্দো-আর্যদের আসার পর অঙ্গ, বঙ্গ এবং মগধ রাজ্য গঠিত হয় খ্রীষ্টপূর্ব দশম শতকে । এই রাজ্যগুলি বাংলা এবং বাংলার আশেপাশে স্থাপিত হয়েছিল । অঙ্গ বঙ্গ এবং মগধ রাজ্যের বর্ণনা প্রথম পাওয়া যায় অথর্ববেদে প্রায় ১০০০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে ।
খ্রীষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতক থেকে বাংলার বেশিরভাগ এলাকাই শক্তিশালী রাজ্য মগধের অংশ ছিল । মগধ ছিল একটি প্রাচীন ইন্দো-আর্য রাজ্য । মগধের কথা রামায়ন এবং মহাভারতে পাওয়া যায় । বুদ্ধের সময়ে এটি ছিল ভারতের চারটি প্রধান রাজ্যের মধ্যে একটি । মগধের ক্ষমতা বাড়ে বিম্বিসারের (রাজত্বকাল ৫৪৪-৪৯১ খ্রীষ্টপূর্বাব্দ) এবং তার ছেলে অজাতশত্রুর (রাজত্বকাল ৪৯১-৪৬০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দ) আমলে । বিহার এবং বাংলার অধিকাংশ জায়গাই মগধের ভিতরে ছিল ।
৩২৬ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটের সেনাবাহিনী মগধের নন্দ সাম্রাজ্যের সীমানার দিকে অগ্রসর হয় । এই সেনাবাহিনী ক্লান্ত ছিল এবং গঙ্গা নদীর কাছাকাছি বিশাল ভারতীয় বাহিনীর মুখোমুখি হতে ভয় পেয়ে যায় । এই বাহিনী বিয়াসের কাছে বিদ্রোহ ঘোষনা করে এবং আরও পূর্বদিকে যেতে অস্বীকার করে । আলেকজান্ডার তখন তাঁর সহকারী কইনাস (Coenus) এর সাথে দেখা করার পরে ঠিক করেন ফিরে যাওয়াই ভাল ।
মৌর্য সাম্রাজ্য মগধেই গড়ে উঠেছিল । মৌর্য সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য । এই সাম্রাজ্য অশোকের রাজত্বকালে দক্ষিণ এশিয়া, পারস্য, আফগানিস্তান অবধি বিস্তার লাভ করেছিল । পরবর্তীকালে শক্তিশালী গুপ্ত সাম্রাজ্য মগধেই গড়ে ওঠে যা ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তরাংশে এবং পারস্য এবং আফগানিস্তানের কিছু অংশে বিস্তার লাভ করেছিল ।
[সম্পাদনা] মধ্য যুগের প্রথমাবস্থা
বাংলার প্রথম স্বাধীন রাজা ছিলেন শশাঙ্ক যিনি ৬০৬ খ্রীষ্টাব্দ থেকে রাজত্ব করেছিলেন ।
প্রথম বৌদ্ধ পাল রাজা প্রথম গোপাল ৭৫০ খ্রীষ্টাব্দে গৌড়ে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেন । পাল বংশের সবচেয়ে শক্তিশালী দুই রাজা ছিলেন ধর্মপাল (রাজত্বকাল ৭৭৫-৮১০ খ্রীষ্টাব্দ) এবং দেবপাল (রাজত্বকাল ৮১০-৮৫০ খ্রিষ্টাব্দ) ।
[সম্পাদনা] মুসলমান শাসন
[সম্পাদনা] ওলন্দাজ কলোনি
[সম্পাদনা] ব্রিটিশ শাসন
ব্রিটিশ শাসনের সময়ে দুটি মারাত্মক দুর্ভিক্ষ বা মন্বন্তর বহুমানুষের জীবনহানি ঘটিয়েছিল । প্রথম দুর্ভিক্ষটি ঘটেছিল ১৭৭০ খ্রীষ্টাব্দে এবং দ্বিতীয়টি ঘটেছিল ১৯৪৩ খ্রীষ্টাব্দে । ১৭৭০ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কম্পানির রাজত্বকালে বাংলার দুর্ভিক্ষটি ছিল ইতিহাসের সব থেকে বড় দুর্ভিক্ষগুলির মধ্যে একটি । বাংলার এক তৃতীয়াংশ মানুষের মৃত্যু ঘটেছিল ১৭৭০ এবং তার পরবর্তী বছরগুলিতে ।
১৮৫৭ খ্রীষ্টাব্দের সিপাহি বিদ্রোহ ইস্ট ইন্ডিয়া কম্পানির শাসনের অবসান ঘটায় এবং বাংলা সরাসরি ভাবে ব্রিটিশ রাজবংশের শাসনাধীনে আসে ।
বাংলা ছিল খুব ভালো ধান উৎপাদক অঞ্চল এবং এখানে সূক্ষ সুতিবস্ত্র মসলিন তৈরি হত । এছাড়া এই অঞ্চল ছিল পৃথিবীর পাট চাহিদার মুখ্য যোগানকারী । ১৮৫০ সাল থেকেই বাংলায় ভারতের প্রধান শিল্পাঞ্চল গড়ে উঠতে থাকে । এই শিল্পাঞ্চল গড়ে উঠেছিল মূলত কলকাতার আশেপাশে এবং সদ্য গড়ে ওঠা শহরতলি এলাকায় । কিন্তু বাংলার বেশিরভাগ মানুষ তখনও কৃষির উপরেই বেশি নির্ভরশীল ছিলেন । ভারতের রাজনীতি এবং সংস্কৃতিতে বাংলার মানুষেরা অগ্রণী ভূমিকা গ্রহন করলেও বিশেষ করে পূর্ব বাংলায় তখনও খুব অনুন্নত জেলা ছিল । ১৮৭৭ খ্রীষ্টাব্দে রানী ভিক্টোরিয়া যখন ভারতের সম্রাজ্ঞী উপাধিতে নিজেকে ভূষিত করলেন তখন ব্রিটিশরা কলকাতাকে ব্রিটিশ রাজের রাজধানী বলে ঘোষনা করে ।
[সম্পাদনা] বাংলা নবজাগরন
[সম্পাদনা] বঙ্গভঙ্গ
১৯৪৭ সালের আগষ্ট মাসে ইংরেজ শাসিত ভারতবর্ষ ভাগ হয়ে গণপ্রজাতন্ত্র ভারত এবং ইসলামী প্রজাতন্ত্র পাকিস্তান নামে দুটি রাষ্ট্র আত্মপ্রকাশ পায়। তখন বাংলা ভাগ হয়ে পশ্চিম বাংলা ভারতের একটি অংশ এবং পূর্ব বাংলা পাকিস্তানের একটি অংশে পরিণত হয়।
[সম্পাদনা] বাংলার স্বাধীন বোদ্ধ ও হিন্দু নৃপতি
[সম্পাদনা] পাল বংশ
- প্রথম গোপাল (৭৫৬-৭৮১)
- ধর্মপাল (৭৮১-৮২১)
- দেবপাল (৮২১-৮৬১)
- প্রথম বিগ্রহপাল, মহেন্দ্রপাল ও প্রথম শূরপাল (৮৬১-৮৬৬)
- নারায়নপাল (৮৬৬-৯২০)
- রাজ্যপাল (৯২০-৯৫২)
- দ্বিতীয় গোপাল (৯৫২-৯৬৯)
- দ্বিতীয় বিগ্রহপাল (৯৬৯-৯৯৫)
- প্রথম মহীপাল (৯৯৫-১০৪৩)
- নয়াপাল (১০৪৩-১০৫৮)
- তৃতীয় বিগ্রহপাল (১০৫৮-১০৭৫)
- দ্বিতীয় মহীপাল (১০৭৫-১০৮০)
- দ্বিতীয় শূরপাল (১০৭৫-১০৭৭)
- রামপাল (১০৮২-১১২৪)
- কুমারপাল (১১২৪-১১২৯)
- তৃতীয় গোপাল (১১২৯-১১৪৩)
- মদনপাল (১১৪৩-১১৬২)
[সম্পাদনা] সেন বংশ
- হেমন্ত সেন (১০৯৭)
- বিজয় সেন (১০৯৭-১১৬০)
- বল্লাল সেন (১১৬০-১১৭৮)
- লক্ষ্মন সেন (১১৭৮-১২০৬)
- বিশ্বরূপ সেন (১২০৬-১২২০)
- কেশব সেন (১২২০-১২৫০)
[সম্পাদনা] বাংলার স্বাধীন সুলতান
[সম্পাদনা] ইলিয়াস বংশ (প্রথম পর্ব)
- শামসুদ্দীন ইলিয়াস শাহ (১৩৪২-১৩৫৮) (১৩৪২ থেকে পশ্চিম বাংলার লখনৌতি রাজ্যের সুলতান এবং ১৩৫২ থেকে পুরো বাংলায়)
- প্রথম সিকান্দর শাহ (১৩৫৮-১৩৯০)
- গিয়াসুদ্দীন আজম শাহ (১৩৯০-১৪১১)
- সাইফুদ্দীন হামজা শাহ (১৪১১-১৪১৩)
- মুহাম্মদ শাহ (১৪১৩)
[সম্পাদনা] বায়াজিদ বংশ
- শিহাবুদ্দিন বায়াজিদ শাহ (১৪১৩-১৪১৪)
- প্রথম আলাউদ্দীন ফিরোজ শাহ (১৪১৪-১৪১৫)
[সম্পাদনা] গণেশ বংশ
- রাজা গণেশ (১৪১৪-১৪১৫ এবং ১৪১৬-১৪১৮)
- জালালুদ্দীন মুহাম্মদ শাহ (১৪১৫-১৪১৬ এবং ১৪১৮-১৪৩৩)
- শামসুদ্দীন আহমদ শাহ (১৪৩৩-১৪৩৫)
[সম্পাদনা] ইলিয়াস বংশ (দ্বিতীয় পর্ব)
- প্রথম নাসিরুদ্দিন মাহমুদ শাহ (১৪৩৫-১৪৫৯)
- রুকনুদ্দীন বারবক শাহ (১৪৫৯-১৪৭৪)
- শামসুদ্দীন ইউসুফ শাহ (১৪৭৪-১৪৮১)
- দ্বিতীয় সিকান্দর শাহ (১৪৮১)
- জালালুদ্দীন ফতেহ শাহ (১৪৮১-১৪৮৭)
[সম্পাদনা] হাবসি বংশ
- বারবক শাহ (১৪৮৭)
- সাইফুদ্দীন ফিরোজ শাহ (১৪৮৭-১৪৯০)
- দ্বিতীয় নাসিরুদ্দিন মাহমুদ শাহ (১৪৯০)
- শামসুদ্দীন মুজাফ্ফর শাহ (১৪৯০-১৪৯৩)
[সম্পাদনা] হুসেন বংশ
- আলাউদ্দিন হুসেন শাহ (১৪৯৩-১৫১৯)
- নাসিরুদ্দীন নুসরত শাহ (১৫১৯-১৫৩২)
- দ্বিতীয় আলাউদ্দীন ফিরোজ শাহ (১৫৩২-১৫৩৩)
- গিয়াসুদ্দীন মাহমুদ শাহ (১৫৩৩-১৫৩৮)
[সম্পাদনা] উত্তর ভারতবর্ষের শূর সম্রাটদের অধীনে বাংলা
[সম্পাদনা] শূর বংশ
- শের শাহ শূরি (১৫৪০-১৫৪৫)
- ইসলাম শাহ শূরি (১৫৪৫-১৫৫৩)
- ফিরোজ শাহ শূরি (১৫৫৩)
- আদিল শাহ শূরি (১৫৫৩-১৫৫৭)- তাঁর শাসনকালে ১৫৫৫ সালে বাংলার শাসক মুহাম্মদ খান শূরি স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং 'শামসুদ্দীন মুহাম্মদ শাহ' উপাধী ধারণ করে বাংলার সিংহাসনে বসেন
[সম্পাদনা] বাংলার স্বাধীন সুলতান
[সম্পাদনা] শূর বংশ
- শামসুদ্দীন মুহাম্মদ শাহ (১৫৫৫)
- প্রথম গিয়াসুদ্দীন বাহাদুর শাহ (১৫৫৫-১৫৬০)
- গিয়াসুদ্দীন জালাল শাহ (১৫৬০-১৫৬২)
- দ্বিতীয় গিয়াসুদ্দীন বাহাদুর শাহ (১৫৬২-১৫৬৩)
[সম্পাদনা] কররানি বংশ
- তাজ খান কররানি (১৫৬৩)
- সুলায়মান কররানি (১৫৬৩-১৫৭২)
- বায়াজিদ কররানি (১৫৭২-১৫৭৩)
- দাউদ খান কররানি (১৫৭৩-১৫৭৬)
[সম্পাদনা] মুঘল বাংলার শাসক
[সম্পাদনা] মুঘল বাংলার সুবাহদার
[সম্পাদনা] বাংলার নবাব
- মুর্শিদকুলি জাফর খান ১৭০৩-১৭২৭
- সুজা উদ্দিন ১৭২৭-১৭৩৯
- সফররাজ খান ১৭৩৯-১৭৪০
- আলিবর্দী খান ১৭৪০-১৭৫৬
- সিরাজদ্দৌলা ১৭৫৬-১৭৫৭
[সম্পাদনা] ব্রিটিশ বাংলার নবাব
- মীরজাফর ১৭৫৭-১৭৬০
- মীরকাসিম ১৭৬০-১৭৬৩
- মীরজাফর (দ্বিতীয় বার) ১৭৬৩-১৭৬৫
- নাজম উদ দৌলা ১৭৬৫-১৭৬৬
- সইফ উদ দৌলা ১৭৬৬-১৭৭০
গঙ্গা নদী
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
গঙ্গা | |||
---|---|---|---|
| |||
উৎস | গঙ্গোত্রী হিমবাহ | ||
অববাহিকার দেশ | নেপাল, ভারত, বাংলাদেশ | ||
দৈর্ঘ্য | ২,৫১০ কিমি(১,৫৬০ মাইল) | ||
উৎসের উচ্চতা | ৭,৭৫৬ মিটার (২৫,৪৫০ ফুট) | ||
গড় পানি প্রবাহ | 12,105 m³/s (130,297 ft³/s) | ||
অববাহিকার ক্ষেত্রফল | ৯০৭,৭০০ km² (৩৫৪,৩০০ mi²) |
গঙ্গা ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম প্রধান নদী। এই নদী ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের জাতীয় নদী। হিমালয়ের গঙ্গোত্রী হিমবাহের গোমুখ উৎস হতে উৎপন্ন হয়ে এটি ভারত ও বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে।
[আড়াল করো] | |
---|---|
আন্তর্দেশীয় | সিন্ধু · গঙ্গা · যমুনা · চন্দ্রভাগা · বিতস্তা · ব্রহ্মপুত্র · গোদাবরী · নর্মদা · তাপ্তি · ইরাবতী · বিপাশা · শতদ্রু · দুধকোশী · পদ্মা · সরস্বতী · কৃষ্ণা · কাবেরী · মেঘনা · মহানদী · শোণ · ঘাঘরা · বেতোয়া · চম্বল · কোশী · সপ্তকোশী · তামুর · মো ছু · সঙ্কোশ · দ্রাংমে ছু · গঙ্গা অববাহিকা · গাঙ্গেয় বদ্বীপ · সিন্ধু বদ্বীপ · ডাল হ্রদ · পুকদে হ্রদ · রূপকুন্ড · চিল্কা হ্রদ · পোয়াই হ্রদ · বোরিথ হ্রদ · সাইফুল মুলুক · গোসাইকুন্ড · নিজাম সাগর · লালপাহাড় হ্রদ · মালাম নদী · কেরালা ব্যাকওয়াটার্স · দামোদর |
উপকূলবর্তী | |
বিষয়শ্রেণী |
দিল্লীতে আজ যৌথ নদী কমিশনের বৈঠক
দিল্লীতে আজ ভারত বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশনের বৈঠক শুরু হচ্ছে৻
বাংলাদেশের পানিসম্পদ মন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল গতকালই দিল্লী পৌঁছেছে এই বৈঠকে অংশ নিতে৻
এছাড়া ভারতের যেসব রাজ্যের মধ্যে দিয়ে অভিন্ন নদীগুলো প্রবাহিত হয়, সেই রাজ্যগুলোর কয়েকটি থেকেও প্রতিনিধিরা যোগ দেবেন এই বৈঠকে৻
ভারত ইঙ্গিত দিয়েছে, তিস্তা নদীর পানিবন্টনের প্রশ্নে অন্তর্বর্তী একটি চুক্তির বিষয়টি তারা ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখবে৻
দিল্লী থেকে বিবিসির সংবাদদাতা শুভজিত বাগচি জানাচ্ছেন, অভিন্ন নদীগুলোর প্রবাহের ভিত্তিতে পানি বন্টন এবং দুদেশের মধ্যে একটি অন্তর্বর্তী চুক্তি নিয়ে কথাবার্তা হবে এমন আভাস পাওয়া যাচ্ছে ভারতীয় কর্মকর্তা পর্যায় থেকে৻
রাজনৈতিক দিকনির্দেশনারও অভাবেব জন্যই পানিবন্টন নিয়ে মতৈক্য হচ্ছে না৻
ড.আইনুন নিশাত
ভারত-বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশন তিন দশকেরও বেশী সময় ধরে কাজ করছে৻ তবে কার্যক্রম খুব একটা ফলপ্রসু হয়নি এমন অভিযোগ অনেকেই করে থাকেন, এবং তাদের মধ্যে বৈঠক হওয়াটাও একটা বিরল ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে৻
কমিশনের বর্তমান বৈঠকের আগে শেষ বৈঠকটি হয়েছিল প্রায় চার বছর আগে৻
যৌথ নদী কমিশনের সদস্য হিসেবে দীর্ঘকাল কাজ করেছেন বাংলাদেশের পানিসম্পদ বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত৻ এই কমিশনের বৈঠক এত দীর্ঘদিন পর পর হয় কেন - এই প্রশ্নের জবাবে ড. আইনুন নিশাত বলেন, অভিন্ন নদীগুলোর পানি প্রবাহ বাড়ানোর জন্য কি করা যেতে পারে এবং কিভাবে এই পানি বন্টন হবে, তা নিয়ে দুদেশের মধ্যে ঐকমত্য নেই৻ তা ছাড়া রাজনৈতিক দিকনির্দেশনারও অভাব ছিল এবং এই কারণগুলোর জন্যেই মূলত এটা হচ্ছে না৻
সরুপাথার বাঙালী
মুক্ত বিশ্বকোষ উইকিপিডিয়াত্ত
সরুপাথার বাঙালী | |
রাজ্য - জিলা | অসম - ডিব্রুগড় |
লয়াগ | km² |
লয়াগর সময় | IST (UTC+5:30) |
জনসংখ্যা (২০০১) - ঘনহান | ৬৬০৭ - /km² |
সরুপাথার বাঙালী (ইংরেজি:Sarupathar Bengali), ভারতর অসম রাজ্যর ডিব্রুগড় জিলার শহর আগ।
[পতিক] জনসংখ্যার উপাত্ত
ভারতর ২০০১ মারির মানুলেহা (লোক গননা) অনুসারে সরুপাথার বাঙালী শহরহানর জনসংখ্যা ইলাতাই ৬৬০৭ গ।[১] অতার মা মুনি ৫৫%, বারো জেলা/বেয়াপা ৪৫%।
এহানাত সাক্ষরতার হারহান ৭৮%, । মুনির মা সাক্ষরতার হারহান ৮২%, বারো জেলার মা হারহান ৭৪%। আস্তা ভারতর সাক্ষরতার হারহান ৫৯.৫%, অহানাত্ত সরুপাথার বাঙালী এহানর সাক্ষরতার হারহান বপ/য়্যাম।
এরে শহরর জনসংখ্যার ১২% হান ৬ বসর বা অতার কম বয়সী।
[পতিক] তথ্যসূত্র
- ↑ ভারতর ২০০১ মারির মানুলেহা (লোক গননা). পাসিলাঙতা নভেম্বর ২২, মারি ২০০৬.
"একদিন বাঙালী ছিলাম রে".... এখন তাইলে কি?
আজ পহেলা বৈশাখ। তারেক সকালে পথে নেমেছিল। উদ্দেশ্য ঢাকা ভার্সিটির দিকে ঢু মারা। বাঙালীয়ানা প্রকাশের, নিজেকে বাঙালী হিসেবে জাহির করতে ওদিকেই সবাই এদিনে ভিড় করে। অনেক দিন পর দেশে ফেরা, তাই মনের মাঝে কিঞ্চিত বাঙালী হিসেবে পরিচিত হবার উত্তেজনা অনুভব করে তারেক। যৌবনের এই পড়ন্ত বেলাতেও ছাত্রজীবনের স্মৃতিগুলো মনে পড়ে যায়।বাস থেকে শাহবাগ মোড়ে নেমে কিছুটা বিষম খেয়ে যায় তারেক। এত্ত মানুষ!!! গুটি গুটি পায়ে ভিড়ের মাঝে মিশে এগুতে থাকে সে। কিছু দূর এগিয়ে চারুকলার সামনে আসতেই কিছু ছেলে-মেয়ে ঘিরে ধরে, 'আসেন,আঙ্কেল, আপনার গালে আল্পনা এঁকে দেই।' এই বয়সে মুখে রং মাখলে কেমন দেখাবে, সেই চিন্তার অবকাশ পেল না তারেক, তার আগেই তাকে হিরহির করে টেনে পেতে রাখা একটি টুলে বসিয়ে দিল ছেলেগুলো। আশে-পাশে তাকিয়ে নিজ বয়সী অনেককে দেখে একটু স্বস্তি অনুভব করল মনে মনে। নাহ্, সে একা সঙ সাজছে না, বাসায় ফেরার পর গিন্নীর প্রশ্নবানে অন্ততঃ এই উত্তরটা তো দেওয়া যাবে! ইতিমধ্যে, একটি মেয়ে তার মুখে রং লাগানো শুরু করেছে। পাশের ভদ্রলোকের কাজ বোধহয় শেষ হয়ে গিয়েছিল, তিনি টুল ছেড়ে হাঁটা দিতেই একটা ষন্ডামার্কা ছেলে পথ আগলে দাঁড়ায়, "টাকা দিয়ে যান, আঙ্কল।" "টাকা!!! কিসের টাকা?" ভদ্রলোক অবাক। ছেলেটি উত্তর দেয়, "আল্পনা আঁকার টাকা।" "কিন্তু এটা তো তোমরা আগে বলনি। যাহোক কত দিব?" দাঁতালো হেসে ছেলেটি বলল, "বেশি না, রং-এর দাম যা বেড়েছে। তবু ১০০ টাকা দিলেই চলবে।" ভদ্রলোক এবারে বেশ অবাক হলেন। এতটুক আল্পনার জন্য ১০০টাকা!!! তারেক দেখল বিরস মুখে ভদ্রলোক মানিব্যাগ খুলে পাওনা মেটালেন। ইতিমধ্যে তার মুখে রং মাখানো শেষ হয়ে যাওয়ায় সে উঠে দাঁড়াল। সামনে দন্ডায়মান ছেলেটির হাতে তাড়াতাড়ি ১০০ টাকা গুঁজে দিয়ে সামনে পা বাড়ায়, বলা তো যায় না পান থেকে চুন খসলেই বেইজ্জতি হয়ে যেতে হবে শেষে। চারুকলা বলে কথা!!!
টি,এস,সি-র সামনে আসতেই দেখল একদল ছেলে-মেয়ে তুমুল নাচ লাগিয়েছে, সাথে গলা ছেড়ে গান "একদিন বাঙালী ছিলাম রে...।" তারেক খুব অবাক হয়। বাঙালী ছিলাম রে মানে!? মনে প্রশ্ন জাগে-এখন তাহলে কি!?! বুঝতে না পেরে পাশে দাড়ানো এক ভদ্রলোককে জিগ্যাসা করতেই বললেন, "আরে ভাই বুঝলেন না! জামানা বদলাইয়া গেছেগা। এখন হইতাছে 'ডিজুস' যুগ। ডিজুস কালচার যেমন আমাদের দেশে তৈরী না, তেমনি বত্তমান পোলাপাইনরেও আমার-আপনার মত বাঙালী কওন যায়না। তয়, এইগুলারে 'বাংলিন্দ' কইতে পারেন, বাংলা-ইংলিশ-হিন্দী জট পাকাইয়া জগাখিচুড়ি ধরনের হাইব্রিড জাতি। ঐ যে পোলা-মাইয়াগুলা নাচতাছে হেইগুলোর নাচের দিকে এট্টু নজর দিলেই বুঝতে পারবেন।" যে ছেলে-মেয়েগুলো নাচ-গান করছিল তাদের দিকে ফের দৃষ্টিপাত করতেই ভদ্রলোকের কথার মর্মার্থ বুঝল তারেক। গানের তালে তালে তারা যে তিড়িং-বিড়িং করে নাচ নামের কসরত করছিল, সেটাকে আর যা-ই হোক বাঙালী নাচ বলা যায় না। তবে অনেকটা হিন্দি চ্যানেলগুলোর সিরিয়ালগুলোতে দেখানো নাচের সাথে বেশ মিল চোখে পড়ল।
তাকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে পাশের লোকটি বললেন, "ভাইজান আপনি বোধহয় দেশে থাকেন না। তাই দেশ কোন দিকে যাইতাসে সে খবর পান না। এই যে এত্ত লোক আইছে এইখানে, এর কতজন কইতে পারব আইজ বাংলা কোন বসর শুরু হইলো, কয়জনে খবর রাখে বৈশাখ মাস কত দিনে হয়, বৈশাখ-জৈষ্ঠ্য নামগুলার অর্থই বা কি। আমার কতা বুদঅয় আপনার বিশ্বাস হইতাসে না। এট্টু খাড়ান, ওখনই বিশ্বাস হইব।" এই বলে লোকটি তার হাত ধরে নাচ দেখছিল যেসব দর্শক তাদের কাছে নিয়ে গেলেন। একটা ছেলেকে পাকড়ে তারেকের দিকে ইশারা করে মধ্যবয়সী লোকটি জিগ্গাসা করে বসেনল,"বাবা,কিচু মনে লইও না। ঐ বিদেশী ভদ্দরলোক জানতে চাইতাসেন আইজ বাংলা কোন বসর, আমার তো মনে নাই... তুমি কইতে পারবা?" হঠাত এরকম কঠিন প্রশ্নে বেকয়দায় পড়ে যায় ছেলেটি। আকাশ-পাতাল ভেবে মাথা চুলকে আমতা আমতা করে উত্তর দেয়,"ইয়ে...মনে হয় ১৪১৫।" পাশে দাড়ানো ছেলেটির বন্ধুপ্রবরটি গলা বাড়িয়ে তাদের কথা শুনছিল। বন্ধুর উত্তর শুনে শুনে হা হা করে উঠল,"কি বলতেসস। আজকে তো ১৪১৭ সাল শুরু হলো।" এরইমধ্যে আরো ছেলে-মেয়ে এগিয়ে এলো কি হচ্ছে জানার জন্য। প্রশ্ন শুনে তাদের মাঝেও গোল বেধে গেল। কেউ বলে...১৪১৬, কেউবা ১৪১৭। আবার কেউ ১৪১৫-এর পক্ষে যুক্তি দিতে লাগল। সে কি তর্কের ঝড়!
পাঞ্জাবীর হাতায় টান লাগতেই তারেক পাশে মাঝবয়সী সেই লোকটিকে দেখতে পেল। জটলার মাঝ থেকে কোন ফাঁকে তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন, সে টের পায়নি। মুচকি হেসে ভদ্রলোক বললেন, "কিসু বুঝবার পারতাসেন ভাইজান, আপনার বাঙালী জাতির নতুন ছোকরাগুলার অবস্থা!!! গায়ে গ্রাম-বাংলার পুষাক, মুখে 'বাঙালী ছিলাম রে' কীর্তন, আর নাচের নামে ফাল পারে হিন্দি সিরিয়ালের। ওইদিকে কুন বাংলা বসর শুরু অইলো তা কইবার পারে না। একদিকে ১লা বৈশাখে পান্তা-শুটকি ভর্তা খাইয়া পেট খারাপ হইয়া হপ্তাহ খানেক টয়লেটে খাট পাতনের অবস্থা, কিন্তুক; বৈশাখ মাস ত্রিশা না একত্রিশা তা কইবার পারবো না। ঐ যে মাইয়াগুলা রে শাড়ি পইড়া ঢেং ঢেং কইরা নর্তন-কুর্দন করতে দেখতাসেন, কাইল একবার এইদিকে আইয়েন একবার........ পা-গুটানো স্কিন টাইট জিন্স আর গেঞ্জি পড়া মাইয়া দেইকা উষ্ঠা খাইয়া মাটিত পড়বেন এই ভাইবা যে 'আপনি বিলাতে আসেন না বাংলাদেশে?' যে পোলাগুলারে দেখতাছেন লুঙ্গি পইড়া এর দাম গরীব গো হাতের নাগালের বাইরে নিয়া যাইতে, বৎসরে কয়বার তারা লুঙ্গি পড়ে নিজেরাও কইতে পারব না।"
ভদ্রলোক একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে শুধালেন, "আমাগো বাংলা ভাষা দিবস কুন দিন কইতে পারবেন?" তারেক ক্ষীন স্বরে বলে,"২১শে ফেব্রুয়ারী।" ভদ্রলোক বিষাদ মাখা চোখে অনন্তের পানে চেয়ে ততোধিক ক্ষীণ স্বরে বললেন, "যে জাতি নিজেরে বাংলাভাষী জাতি বইলা পরিচয় দেয়, কিন্তু ভাষা দিবস পালন করে ইংলিশ মাসে, তাগো নতুন জেনারেশনের মইধ্যে এমুন বৈপিরিত্য দেখা যাইব না তো আর কুন জাতির মইধ্যে দেখা যাইব, কন তো?"
তারেক কিছু বলতে পারে না, লোকটির দিকে ফেল ফেল নয়নে তাকিয়ে থাকে।
http://www.somewhereinblog.net/blog/bedeshi_bangali/28938350
পূর্ব পাকিস্তানের উপন্যাসে দেশভাগ
দেশভাগের ৬১ বছর হয়ে গেল গত সপ্তাহে । পশ্চিম বঙ্গে দেশভাগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় । অনেক লেখালেখি হুয়েছে সেদেশে ৪০ দশকের সেই ঘটনাগুলি নিয়ে । কিন্তু বাংলাদেশের লেখকদের কলমে ঘটনাবহুল ৬০-৭০ দশকের কথাই উঠে এসেছে, দেশভাগ রয়ে গেছে আড়ালে । আমাদের কাছে ১৪ আগস্ট কেবলই ক্যালেন্ডারে আরেকটি দিন, আর আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ১৫ আগস্ট ১৯৭৫, ১৯৪৭ নয় । কিন্তু ১৪-১৫ আগস্ট ১৯৪৭ আমাদের ইতিহাসেরও অবিচ্ছেদ্য অংশ । সেই চিন্তা থেকেই আজকের লেখা । পূর্ব পাকিস্তান সময়ের দুটি উপন্যাসে কেমন ভাবে দেশভাগ এসেছে তাই আমরা দেখব ।
আবু রূশদের নোঙ্গর প্রকাশিত হয় ১৯৬৭ সালে । কাহিনীর শুরু ১৯৪৭ এর জুনে, কোলকাতায় । কামাল, গল্পের নায়ক, এই মহানগরেরই ছেলে । কিন্তু সে পারি জমায় নতুন দেশ পাকিস্তানের উদ্দেশ্যে, বাবা ও ভাই কে ফেলে । কেন ? পাকিস্তানের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে ? না, সে দেশত্যাগ করে চাকরীর আশায় । বাঙ্গালী মুসলিম দের পাকিস্তানে ভাল সম্ভাবনা ভারতের থেকে - এই হল কামালের চিন্তা ।
দেশভাগের কাহিনী, তা উপন্যাসই হোক আর চলচ্চিত্রে, বাংলাতেই হোক আর ইংরেজিতে, পাকিস্তানেই হোক আর ভারতে, এখানে হিন্দু-মুসলিম প্রেম থাকবেই । নোঙ্গরেও আছে । কামাল কোলকাতায় ফেলে আসে লতিকাকে । কিন্তু এই পরিণতিহীন প্রেম কাহিনী আমাদের দেখায় কামালের কাটখোট্টা স্বভাব - তার মধ্যে রোমাঞ্চের বড়ই অভাব, তাই শান্তিনিকেতন তার মনে দাগ কাটে না । অন্যদিকে, সে সাম্প্রদায়িকও নয় । সে তেমন কিছু হিন্দু-মুসলিম পার্থক্য দেখে না - খাওয়া দাওয়া ছাড়া ।
যাই হোক, কামাল পাকিস্তানে আসে, চাকরী পায়, বিয়ে করে । কিন্তু পাকিস্তানে সে খুব একটা সুখী নয় । তবে যেখানে পশ্চিম বঙ্গের উপন্যাসে দেশান্তরী চরিত্ররা nostalgiaতে ভোগে ( পূর্ব-পশ্চিম-এর প্রতাপ এর কথা মনে করুন), কামালের সমস্যা অন্যখানে । সে পাকিস্তানে সুখী নয় কারন পাকিস্তান তাকে আশাহত করে । পাঠক, চিন্তা করে দেখুন ব্যাপারটা । একজন কাটখোট্টা লোক, যার মধ্যে কোন রোমাঞ্চ অথবা রাজনৈতিক আদর্শ নাই, সেও পাকিস্তানে নিরাশ !
কিভাবে কামাল এই নিরাশা কাটায় ? সে উপলব্ধি করে পূর্ব পাকিস্তানেই তার নোঙ্গর ফেলতে হবে । সে দেশভাগের বাস্তবতা মেনে নেয়, কিন্তু এই দেশের ১৯৪৭-পূর্ব ইতিহাস, আর পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে পার্থক্য-ও সে পরিষ্কার ভাবে দেখে । তার গল্প শেষ হয় এক নতুন উপলব্ধির মাধ্যমে, নতুন এক আত্ম-পরিচয়ের সন্ধানে । আজকে আমরা সেই পরিচয়কেই কি বাংলাদেশী বলি না ?
আবুল ফজলের রাঙ্গা প্রভাত প্রকাশিত হয় ১৯৫৭ সালে । এই গল্পের নায়কের নামও কামাল, কিন্তু এই কাহিনী হচ্ছে গ্রাম বাংলা আর মফসসলে । কামাল বড় হয় চট্টগ্রামের কাছে একটি গ্রামে, তার ধার্মিক, কিন্তু অসাম্প্রদায়িক দাদা এনামুল হোসেনের কাছে । এনাম সাহেব আর তাঁর বন্ধু চারু বাবু সম্পর্কে আমরা দেখি হিন্দু-মুসলিম সহাবস্থান । আর চারু বাবু'র মেয়ে মায়া'র সাথে গড়ে ওঠে কামালের সম্পর্ক ।
দেশভাগের পরেও এই সহাবস্থান বজায় থাকে কিছুদিন । আর চারু বাবু'র মেয়ে মায়া'র সাথে গড়ে ওঠে কামালের সম্পর্ক । কিন্তু সব এলোমেলো হয়ে যায় যখন সাম্প্রদায়িকতার গরম হাওয়া এসে লাগে এই গ্রামেও । আততায়ীর হাতে নিহত হন চারু বাবু । মায়া কি করে তখন ? সে কি তার মা ও ভাই-এর সাথে কোলকাতায় চলে যায় ?
এই সময় আমরা একটি খুবই তাতপরযপূর্ন ব্যাপার দেখি । আমরা দেখি যে বহু পুরুষের বন্ধুত্ব থাকার পরেও কামাল আর মায়ার পরিবারের কেউ কখনো আরেক বাড়িতে খায়নি । এই রান্নাঘরের বিভাগই দেশভাগের মূলে, কামাল বলে ।
মায়া কিছুদিনের জন্য কোলকাতায় চলে যায় । আর কামালের গ্রামে সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতা আর হিংসা ছড়িয়ে পরে । সেই হিংসার সাথে লড়তে গিয়ে আহত হয় কামাল । আর তার কাছে ফেরত আসে মায়া । কাহিনী শেষ হয় সাগর পারে, এক নতুন সূর্যোদয়ে ।
নোঙ্গরের কামালের মত এই কামালেরও রাজনৈতিক উপলব্ধি হয় । সে উপলব্ধি করে বিশ্বমানবতা আর শ্রেনীহীন সমাজের মাঝেই আছে মুক্তি । আজকে, ৫০ বছর পরে, আমরা কি সেই চিন্তা থেকে অনেকখানি সরে আসি নাই ?
(এই লেখাটি মুক্তি ব্লগেও পোস্ট করা হয়েছে । উপমহাদেশের সাহিত্যে দেশভাগ সম্পর্কে জানতে চাইলে দেখুন নিয়াজ জামানের A Divided Legacy - the partition in selected novels of India, Pakistan, and Bangladeshhttp://www.drishtipat.org/bangla/?p=67
আবার অশনি সংকেত?
সত্যজিত রায়ের অমর চলচ্চিত্র 'অশনি সংকেত' অনেকেই দেখে থাকবেন। শাশ্বত গ্রাম বাংলা এই ছবির পটভূমি, আর ১৯৪৩-এর দুর্ভিক্ষ এর বিষয়বস্তু। গ্রামের মানুষের ধীর-স্থির জীবন কিভাবে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল তেতাল্লিশে, ক্ষুধার নির্মম ছোবল কিভাবে তাদের বারংবার দংশন করেছিল - সত্যজিত দেখিয়েছেন এই ছবিতে। সেই গাঁয়ের একমাত্র ব্রাক্ষ্মন সৌমিত্র আর তার ফুটফুটে বৌ ববিতা, তাদের চারিপাশের জীবনযাত্রা [...]
আপনার মতামত |
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আকাশ লড়াই |
দীপ্তেন |
I have a mathematical certainty that the future will confirm my assertion that aerial warfare will be the most important element in future wars, and that in consequence not only will the importance of the Independent Air Force rapidly increase, but the importance of the army and navy will decrease in proportion.
— General Giulio Douhet, 'Command of the Air,' 1921
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে লড়াইটা ছিল সাগরে ও মাটিতে। এবং মূলত: সেটি ছিল জমিরই লড়াই। লক্ষ লক্ষ ইনফ্যান্টী। আর তাদের পিছনে ভারী কামান। আর সাগরযুদ্ধেও কামান। কেননা নৌ যুদ্ধ ব্যাট্ল্শিপ নির্ভর। মুখোমুখি জাহাজে জাহাজে লড়াই। কামানের পাল্লার উপর যুদ্ধের ফলাফল অনেকটাই নির্ভর করত। আর যুদ্ধবিমান? তারা নেহাত্ই অকিঞ্চিত্কর। যুদ্ধের ফলাফলে হেলদোল করতে পারত না সেই পুঁচকে আকাশচারীরা।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হল কিন্তু যুদ্ধবিমানের হাত ধরেই। যতদিন গেছে ততই বিমানেরা আরো অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। সাগর যুদ্ধ তো পুরোটাই বিমান নির্ভর আর স্থল যুদ্ধও হয়ে উঠল বিমানের উপর খুব নির্ভরশীল। ইতালিয়ান সেনানায়ক গুইলিও দউহেট ও আমেরিকান বিলি মিচেল - এঁরা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরেই বিমান যুদ্ধের তাত্তিÄক নেতা হিসাবে খুব নাম করেন। এঁরা দুজনেই বোমারু বিমানের উপর জোর দিয়েছেন। তাঁদের ধারণা ছিল বিমানবিধ্বংসী কামান যতই থাকুক না কেন, এক ঝাঁক বোমারু বিমান পাঠালে কয়েকটি অন্তত: লক্ষ্যস্থলে ঠিকই বোমা ফেলে আসতে পারবে। সেই মতন হিসাবও কষা হত এত স্কোয়ার ফীট জায়গা চূর্ণ করতে কটি বিমানের দরকার। মনে রাখবেন, প্রথম বিশ্বযুদ্ধে যে প্রায় ৮৫লক্ষ মানুষ মারা গেছিলেন তাঁদের মধ্যে মাত্র ৯০০০ ছিলো বোমারু বিমানের শিকার। কিন্তু এই স্ট্র্যাটেজিস্টরা তখনই ভবিষ্যতের বোমারু বিমানের প্রচন্ড বিধ্বংসী ভূমিকা কল্পনা করতে পেরেছিলেন।
আর বোমারু বিমানের লক্ষ্যটা কি ? মিচেলের মতে, "কলকারখানা, রাস্তা, সেতু,রেল জংশন' আর দউহেট বলেন "নির্বিচার শহর আক্রমণ। প্রচুর অসামরিক লোকে মারা গেলে ভয় পেয়ে যুদ্ধ বন্ধ হয়ে যাবে।' সাফাই গেয়েছেন, "এই ভয়ে তাড়াতাড়ি যুদ্ধ শেষ হবে এবং আখেরে কম লোকই মারা পড়বে!'
আর এই বোমারু বিমানের প্রতিরক্ষা? মিচেল তাও স্বীকার করেছেন যে, "যতগুলি বোমারু বিমান তার দ্বিগুণ ফাইটার বিমানের পার্শ্বরক্ষী চাই।' আর দউহেটের উত্তরটি খুব মজার - তিনি বললেন "আরে আকাশে কি আর ট্রেঞ্চ খুঁড়ে মাইন বসিয়ে প্রতিরক্ষা করা যায়? বিমান হচ্ছে শুধুই আক্রমণের অস্ত্র, প্রতিরক্ষার কোনো দরকারই নেই। '
একই সাথে জার্মান রণনীতি কিন্তু ছিল অন্যরকমের। তারা বিমানকে ইনফ্যান্টীর সহায়ক বলেই সাব্যস্ত করেছে। তাই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ যখন শুরু হল, তখন জার্মানীর স্টুকা ডাইভবম্বার আর স্বল্পপাল্লার ফাইটার প্লেন ছিল দুনিয়ার সর্বোত্তম, আমেরিকা আর ব্রিটেন তখনো লম্বা দৌড়ের বোমারু বিমান বানাতেই ব্যস্ত।
১৯৩৯ :
The bomber will always get through. The only defense is in offense, which means that you have to kill more women and children more quickly than the enemy if you want to save yourselves.
— Stanley Baldwin, British Prime Minister, House of Commons speech 10 November 1932
ব্লিত্সক্রীগ বা ঝটিকাযুদ্ধ কথাটি প্রচলিত হতে আরো একবছর লাগবে। এক পশ্চিমা সংবাদপত্রের দেওয়া ঐ নামকরণ চালু হয় ১৯৪০'এ। যাই হোক, পয়লা সেপ্টেম্বর জার্মানী অঘোষিত আক্রমণ করল পোল্যান্ডকে। জার্মানী যুদ্ধ শুরুই করল একটানা বিমান আক্রমণ দিয়ে। বোমায় বিধ্বস্ত করে দেওয়া হল এয়ারপোর্ট,সেতু,রেলওয়ে জাংশান। এই বিমান হানার পরই ইনফ্যান্টী আর সাঁজোয়া বাহিনী পোল্যান্ডে ঢুকল। মূলত: ইনফ্যান্টী নির্ভর পোল্যান্ড লড়তেই পারল না। তিন সপ্তাহেই যুদ্ধ শেষ। প্রায় দুই হাজার আধুনিক জার্মান বিমানের বিরুদ্ধে ছিল প্রায়-অবসরপ্রাপ্ত ৪০০টি পোলিশ বিমান। যুদ্ধের প্রথম দিনের হানাতেই সেগুলি ধ্বংস হয়। সারা আকাশ জার্মানীর হাতে। বিমান আক্রমণ করে তারা সব পথ-ঘাট-সেতু-রেলইয়ার্ড ভেঙে দিলে পোলিশ সেনাবাহিনী বহুক্ষেত্রে রণাঙ্গনেই পৌঁছতে পারল না। ঐ যুদ্ধেই স্টুকা ডাইভ বোম্বারের কেরামতি টের পেল সারা দুনিয়া। ইনফ্যান্টী আর সাঁজোয়া বাহিনীর সাথে হাতে হাত মিলিয়ে আক্রমণ। এমনটি আর দেখা যায় নি।
স্টুকা অর্থাত্ জাংকার৮৭ বিমান প্রথম ওড়ে ১৯৩৫-এ। জার্মানীর ব্লিত্সক্রীগ যুদ্ধকৌশলের সাথে একেবারে মিশে আছে এই বিমান। এর প্রধান অ্যাডভান্টেজ ছিল এর অটোপাইলট। সেই লিভার চাপলে প্লেনটি নিজে থেকেই ডাইভ শুরু করে এবং বোমা ফেলবার পর ঐ অটো পাইলটই প্লেনটিকে আবার আকাশমুখী করে, ফলে পাইলট ঐ ডাইভ দেবার সময় লক্ষ্যভেদেই পুরো মন:সংযোগ করতে পারেন। স্টুকা খুব অল্প দৌড়েই টেক অফ করতে পারতো, তাই ফ্রন্টলাইনের কাছে তৈরী যেমন তেমন আধাখেঁচড়া রানওয়ে থেকেও দিব্যি উড়তে পারতো এই প্লেন। রণাঙ্গনে একই দিনে দশবার হানা দিতেও অসুবিধে হতো না। আর হিটলারের পরামর্শ মতন স্টুকায় লাগানো হলো একটা সাইরেন। ডাইভ দিয়ে পড়ছে স্টুকা তার সাথে কান ফাটানো চিল চিত্কার। অনেক বিমানবিধ্বংসী গোলন্দাজ ভয়েই কামান ছেড়ে দৌড়ে পালিয়ে যেতেন।
তুলনায় ভারী বম্বারের চাই একেবারে পাক্কা রানওয়ে এবং যেহেতু তখন বম্বসাইটের নিতান্ত শৈশব, তাই অনেকটা উপর থেকে নিক্ষিপ্ত বোমায় লক্ষ্যভেদ হত খুবই কম। রেল সেতু, কালভার্ট ,সড়কের চৌমাথা - এই ধরনের ছোটো লক্ষ্যবস্তুকে আঘাত করতে তাই স্টুকার মতন ডাইভ বম্বার ছাড়া গতি নেই। তবে স্টুকার গতি ও ক্ষিপ্রতা দুটৈ বেশ কম ছিল। তাই সেই সময়ের অন্য কোনো ফাইটারের সাথে ডগ ফাইট হলে স্টুকা এঁটে উঠতে পারত না।
রাশিয়াও সেই পথেই হেঁটেছিল। কোনো ভারী বোমারু তার ছিল না। বিশ্বযুদ্ধের আগাগোড়াই রাশিয়া শুধু তার পদাতিক সেনার জন্য গ্রাউন্ড সাপোর্ট বিমান (মুখ্যত:) বানিয়ে এসেছে। আর বানিয়েছিল অতিকায় পণ্যবাহী বিমান। এগুলির সাহায্যে দূরের ফ্রন্টলাইনেও রসদ সরবরাহ অব্যাহত রাখতে পারত।
১৯৪০ :
. . . when I look round to see how we can win the war I see that there is only one sure path . . . and that is absolutely devastating, exterminating attack by very heavy bombers from this country upon the Nazi homeland. We must be able to overwhelm them by this means, without which I do not see a way through.
— British Prime Minister Winston Churchill in a letter to Minister of Aircraft Production, Lord Beaverbrook, July 1940.
হিটলার যতোটা ট্যাঙ্ক বা জাহাজ নিয়ে মাথা ঘামাতেন ততোটা বিমান বাহিনী নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন না। যার ফলে জার্মানীর বিমান বাহিনী কোনোদিনই খুব স্ট্র্যাটেজিক ভূমিকা পালন করতে পারে নি। এক তো উপযুক্ত বিমানের অভাব। দূরপাল্লার এবং আধুনিক প্রযুক্তির ভারী ও মাঝারী বিমান তখন জার্মানীর ছিল না। দূরপাল্লার ফাইটারও নয়। উত্তর ফ্রান্সের বিমানপোত থেকে ইংলন্ডে আঘাত হেনে ফিরে যেতে সময় লাগে প্রায় এক ঘন্টা আর তখনকার এম ই ১৯০ ফাইটার নাগাড়ে উড়তে পারত মাত্র আশী মিনিট। অর্থাত্ ব্রিটেনের আকাশে লড়বার সময় থাকত মাত্র কুড়ি মিনিট, আসলে আরো কম - বড় জোর মিনিট দশেক। সেই কারণেই ব্যাট্ল অফ ব্রিটেনের জার্মান হানাদারী লন্ডন শহর ও ইংলন্ডের দক্ষিণ পূর্ব কোণেই সীমাবদ্ধ ছিল।
ব্যাট্ল অফ ব্রিটেনকে যুদ্ধ না বলে ক্যামপেন বলা উচিত্। একটা সরকারী শুরু ও শেষ আছে , কিন্তু সেটা সর্বজনগ্রাহ্য নয়।
ব্রিটেনের এয়ার চীফ মার্শাল ডাওডিং ছিলেন খুব দূরদর্শী। চার্চিলের অনুরোধ সত্তেÄও তিনি ফ্রান্সের যুদ্ধে খুব কিপটেমি করে তাঁর ফাইটার প্লেন ছেড়েছিলেন। এমন কি জাহাজের কনভয় রক্ষার জন্যও তিনি আদৌ দরাজহস্ত ছিলেন না। এর ফলে যুদ্ধের শুরুতেই ব্রিটেনকে ফাইটার বিমানের সঙ্কটে পড়তে হয়নি। অগাস্ট নাগাদ যুদ্ধ বেশ জমে উঠলো। ক্ষয়ক্ষতি জার্মানীরই বেশী। যুদ্ধশেষে দেখা যাবে যে, প্রতিটি ভূপাতিত ব্রিটীশ বিমানের তুলনায় প্রায় দুটি করে জার্মান বিমান ধ্বংস হয়েছে।
এর একটি প্রধান কারণ ছিল রেডার। ব্রিটেনের উপকূল ঘেঁষে এইরকম বাহান্নটি রেডার স্টেশনের প্রহরামালা ছিল, যার সাহায্যে প্রায় ৭০ মাইল দূর থেকেই ব্রিটীশরা শত্রুবিমানের আগমনবার্তা পেয়ে যেত এবং উচ্চতা ও বিমানের সংখ্যাও মোটামুটি আন্দাজ করতে পারত। সেইসময় জার্মানীতে রেডার নিতান্ত শৈশবে, তাঁরা রেডারের সাথে বিমানের যোগাযোগ ভালো করে বুঝতে পারেন নি। আর এর সাথে ছিল গোয়েরি-ংএর দূরদৃষ্টির অভাব। তিনি এক নির্দেশনামায় রেডার স্টেশনগুলিকে আক্রমণ করা নিষিদ্ধ করলেন। ফলে এই প্রযুক্তির সুফল ব্রিটেন স্বছন্দেই ভোগ করল। যে স্টুকা ডাইভবোমারু বিমান আগের বছর ইওরোপ কাঁপিয়ে দিয়েছিল, সেই বিমানটি এই দূরপাল্লার আকাশযুদ্ধে নেহাত্ই অচল। অগাস্ট মাসেই এই বিমানটিকে তুলে নেওয়া হল। এর ফলে জার্মানীর হাতে বোমারু বিমানের সংখ্যাও প্রায় এক তৃতীয়াংশ কমে গেল।
সেপ্টেম্বরের প্রথমেই ব্রিটেন পরপর তিন রাত বার্লিনে বোমা ফেলে এল। মেঘে ঢাকা আকাশে অনেক উপরে ওড়া ব্রিটীশ বিমানগুলিতে আঁচড়ও পড়ল না, কেননা বিমানবিধ্বংসী কামানের গোলারা অতদূর যেত না। বার্লিনের ক্ষতি হল সামান্যই। কিন্তু এর ফলে জার্মানীর প্রতি আক্রমণ শুরু হয়ে গেল লন্ডনের উপর। সাতই সেপ্টেম্বর প্রায় হাজার খানেক বিমান উত্তর ফ্রান্সের বিমানবন্দর থেকে উড়ান শুরু করল। ডাউডিং প্রমাদ গুনছেন - এত বড় আক্রমণ সামাল দেবেন কি করে? রেডারে দেখলেন ঐ বিমানের বিশাল আর্মাডা লন্ডনের দিকে মোড় নিয়েছে। ডাউডিং নিশ্চিন্ত হয়ে বললেন "এটা একটা মির্�৯AFাকল।'
সন্ধ্যা পাঁচটা নাগাদ লন্ডন আক্রান্ত হল। নগরীর পূর্ব প্রান্ত ও মাইলের পর মাইল জুড়ে বন্দর জ্বলে খাক হয়ে গেল। টেমস নদীতেও আগুন জ্বলল,পেট্রলের ট্যাঙ্কার পুড়ে। প্রায় দুই হাজার মানুষ হতাহত। রাতের বেলায় দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকা লন্ডনের উপর আবার হানা দিল প্রায় আড়াইশো বোমারু।
এবং ব্রিটেন বেঁচে গেল। কেননা আর বেশীদিন টানবার মতন যথেষ্ট বিমান ও বৈমানিক ব্রিটেনের ছিল না। এর আগে জার্মানী ব্রিটেনের বিমানপোত, এই যুদ্ধের অপারেশন কেন্দ্রগুলি, কভেন্টীর কলকারখানা - এই সব সামরিক দিক দিয়ে তাত্পর্যপূর্ণ লক্ষ্য টার্গেট করেছিল। খোদ লন্ডন শহরে পার্লামেন্ট হাউস আর বাকিংহাম প্যালেসে বোমা পড়লেও সেগুলির সামরিক মূল্য কিছুই ছিল না।
একটানা লন্ডন শহরে বোমা ফেলবার জন্য জার্মানীর বোমারু বিমানের ক্ষতি এতই বেড়ে গেল যে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি থেকেই জার্মান বিমান দিনের বেলা লন্ডন আক্রমণ ছেড়েই দিল। রাতের আক্রমণে লক্ষ্যভেদ কিছুই হত না,আন্দাজে আনতাবড়ি বোমা ফেলা হত। তাতে লোকজন মারা যেত ঠিকই, কিন্তু কোন স্ট্র্যাটেজিক সুবিধা হত না। জেনারেল এডল্ফ গ্যালান্ড ছিলেন গোয়েরি-ংএর বিশ্বস্ত অধস্তন। লন্ডন শহরে বোমা আক্রমণের কারণ হিসাবে বলেছেন সার্বিক অজ্ঞতা। পরবর্তীকালে জার্মান শহরে যেরকম বোমাবর্ষণ হয়েছিলো সেই তুলনায় লণ্ডনে বোমাবর্ষণ নিতান্তই হাল্কা ধরণের। কোনো বড় নগরীর উপর এইরকম বোমারু আক্রমণও ইতিহাসে প্রথম। যার ফলে জার্মান বাহিনী জানতই না কত তাড়াতাড়ি লন্ডন আবার উঠে দাঁড়াতে পারবে। কত টন বোমা ফেললে একটি নগর ধ্বংস হয় - এই সহজ প্রশ্ন আর তার সুবিদিত উত্তর জানা ছিল না নাত্সীদের। গ্যালান্ড এও স্বীকার করেছেন যে সামরিক লক্ষ্যবস্তুর উপর আঘাত হেনে যেতে থাকলে ব্রিটেনের লড়াইয়ের ফলাফল অন্যরকম হত।
এই যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী এক ব্রিটীশ বৈমানিকের বিবরণ: "আমার হ্যারিকেন বিমানের মার্লিন ইঞ্জিন তীক্ষ্ম চিত্কার করে উঠল আর আমি ঝাঁপিয়ে পড়লাম আমার শিকার জার্মান হেইনকেল১১১ বোমারু বিমানটির উপর। আকাশে চারদিকেই বিমানগুলো উড়ছে, কিন্তু আমার সমস্ত লক্ষ্য ঐ বোমারুটির উপর। আমার ডাইভ একবারে সরলরেখায় বোমারুটির উপর এসে পড়ল - আমার জানলা প্রায় সবটাই ঐ বোমারুর দেহে ঢাকা পড়েছে। আমি অবাক হয়ে দেখলাম বোমারুটির যেন কোনো ভ্রূক্ষেপই নেই। পিছনে এক ফাইটার রক্ষককে নিয়ে সে দিব্যি একই গতিতে উড়ে চলেছে। আমিই ভাবলাম এই বোকাটা কেন পালিয়ে যাচ্ছে না? আমি মেশিনগানের ঘোড়া টিপলাম। আটটা মেশিনগানের গুলির ফোয়ারা একবারে বেরিয়ে এল আমার প্লেনটিকে ঈষত্ দুলিয়ে। দুসেকেন্ড ধরে গুলি চালালাম। আমার ককপিট কর্ডাইটের ধোঁয়ায় ভরে গেল। গরম তেলের গন্ধের সাথে মিশে এক কটু মিশ্রণ। আমি দেখলাম আমার প্রথম ঝাঁকের গুলি বোমারুটিকে বিঁধেছে। আমি এবার পাশ কাটাবার জন্য দ্রুত ঘুরবার সময় দেখতে পেলাম বোমারুটির থেকে আগুনে শিখা বেরিয়ে আসছে এবং ঘুরতে ঘুরতে সেটি মাটিতে আছড়ে পড়ছে। ।। দূর দিগন্তে বিলীয়মান দুটি শত্রু বিমানকে তাড়া করে আমি খোদ লন্ডন শহরের উপরে এসে পড়লাম। স্পষ্টই দেখছিলাম রাস্তাগুলি। কেনসিংটন গার্ডেনের সবুজ প্রান্তরও চোখে পড়ল। সেই সময় আকাশে এক অদ্ভুত উড়ন্ত " মিছিল ' চোখে পড়ল। একটি জার্মান হেইনকেল১১১ বোমারু আর তাকে পিছন থেকে তাড়া করে আসছে আমাদের এক হ্যারিকেন ফাইটার আর ঠিক তার পিছনেই পরপর দুটি জার্মান এমই১০৯ ফাইটার। সামনের বোমারু টের পায় নি তার পিছনের শিকারী হ্যারিকেনকে আর হ্যারিকেনটিও বুঝতে পারেনি তার পিছনেই দুই শিকারী ফাইটার। জার্মান ফাইটার দুটির গতিপথ আমার থেকে একটু তেরচা ভাবে। আমি একটু ঘুরে ডাইভ দিলাম আর মেশিনগান চালালাম। আটটি মেশিনগানের বুলেটের স্রোতের ভিতর দিয়ে চলে গেল প্রথম এমই১০৯ এবং মুহূর্তে টুকরোটুকরো হয়ে ভেঙে গেল। দ্বিতীয় এমই১০৯টি একেবারে শেষ মুহূর্তে অসাধারণ ক্ষিপ্রতায় পাশ কাটিয়ে চলে গেল নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে। আর এই সময়েই কপালগুণে আমার চোখ পড়ল আমার বিমানের রিয়ারভিউ মিররের উপর। দেখি একটা ঘাতক জার্মান ফাইটার একেবারে আমার ঘাড়ের উপর এসে পৌঁছেছে । একনিমেষেই আমি যথাসম্ভব দ্রুততায় বিমানকে উপরে তুলে আনলাম আর দেখলাম শেষ মুহূর্তে সেই জার্মান ফাইটারের বুলেটের ঝাঁক এক চুলের জন্য আমার বিমানকে স্পর্শ না করেই চলে গেলো। '
আকাশে প্রায় হাজার খানেক বিমানের দাপাদাপি। মুহূর্তের মধ্যেই শিকার হয়ে যায় শিকারী।
স্ট্র্যাটেজিক বম্বিংয়ের এটাই শুরু। তখনো পর্যন্ত রণপন্ডিতেরা বিশ্বাস করতেন যে বোমারুদের বিরুদ্ধে কোনোভাবেই ১০০% প্রতিরোধ গড়া সম্ভব নয়। "the bomber will always get through" । ব্রিটীশ বিমানগুলি জার্মানীর ভূখন্ডে রাত্রিবেলা যে বোমা ফেলে আসতো, বৈমানিকেদের বিশ্বাস ছিল সেগুলো লক্ষ্যের তিনশো গজের মধ্যেই পড়ত। পরে ছবি তুলে বিশ্লেষণ করে দেখা গেল যে, মাত্র এক-তৃতীয়াংশ বোমা টার্গেটের পাঁচ মাইলের মধ্যে পড়েছে, কোন কোন অঞ্চলে মাত্র এক-দশমাংশ পড়েছে মাইলে পাঁচেকের মধ্যে। অর্থাত্ ছোটোখাটো-শহরের-থেকে-আয়তনে-কম টার্গেটের উপর বোমাবর্ষণ বেশীর ভাগ সময়েই নিষ্ফল। সমস্যাটা বম্বসাইটের নয়, বৈমানিকদেরও নয়, সমস্যাটা নেভিগেশনের। শুরু হলো রেডিওবীমের সাহায্যে গন্তব্য নির্ণয়। একের পর এক নতুন ও উন্নততর প্রযুক্তি এসেছে। এবং নতুন পদ্ধতি কখনৈ বন্ধ হয় নি।
এই যুদ্ধের হীরো ছিলো ব্রিটীশ ফাইটার স্পিটফায়ার। এর প্রোটোটাইপটি তৈরী হয়েছিল ১৯৩৬ সালে। এর ককপিট ছিল সে সময়ের সেরা। খুব দ্রুত উঠতে পারতো এবং এর ঘন্টায় ৩৬০ মাইল গতিও সে সময়ের রেকর্ড। দোষের মধ্যে একটি ছিল যে ফ্যুয়েল ইনজেকশনের বদলে কার্বুরেটর ব্যবহার করার ফলে মাঝ আকাশে রোল করতে গেলে প্লেনের ইঞ্জিন থেমে যেত, কিন্তু জার্মান ১০৯ বিমানে সেই সমস্যা ছিল না।
জার্মান এমই১০৯ হয়তো সমান সমানই ছিল, কিন্তু তারা যখন ইংলন্ডের আকাশে, তখন তাদের ফিরে যাবার তাড়া থাকত। অপেক্ষাকৃত দূরপাল্লার ফাইটার এমই১১০ খুব দ্রুতগতির ছিল না।
১৯৪১ :
Offense is the essence of air power.
— General H. H. 'Hap' Arnold, USAAF
— Winston Churchill, House of Commons, 14 March 1933
রাশিয়া ,আমেরিকা আর জাপান - এই তিন দেশ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মূল রণাঙ্গনে যোগ দিলো এই বছর। রাশিয়ার বিমানচিন্তাও ছিল জার্মানীরই মত। তাঁরা বিমানকে দেখতেন পদাতিক ও সাঁজোয়াবাহিনীর প্রতিরক্ষী হিসাবে। যুদ্ধের শুরুতে তাই রাশিয়ার হাতে যাও বা কিছু ডাইভবম্বার ও ফাইটার বিমান ছিল, বোমারু বলতে প্রায় কিছুই ছিল না। পুরো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধই রাশিয়া কাটাবে কোনো রকমের উন্নতমানের দূরপাল্লার বোমারু ছাড়াই।
১৯৪১ সালের জেনের সামরিক বিমানের ইয়ারবুকে কোনো জাপানী বিমানের কথা ছিল না। কিন্তু জাপান সেইসময়েই অনেকের মতে সেই সময়ের সেরা ফাইটার জিরো বানিয়ে ফেলেছে। সব ফাইটার বিমানের পরিকল্পনায় কতকগুলি পরষ্পরবিরোধী গুণাবলীকে ব্যালেন্স করতে হয়। যদি বর্ম ভারী হয়, তবে গতি কমবে। যদি ডানায় কামান লাগানো থাকে, তবে আক্রমণের সুবিধে, কিন্তু মধ্য আকাশে রোল করতে অসুবিধে। যদি দূরপাল্লার করতে হয়, তাহলে বিমানে বেশী কামান নেওয়া যাবে না। গতি বেশী বাড়ালে ম্যানুভেরাবিলিটি কমবে, দূরগামী করতে গেলে বড় তেলের ট্যাঙ্ক চাই অর্থাত্ আয়তন বাড়বে। জিরোর এই ব্যালানসিং ছিল দারুণ। ম্যানুভেরাবিলিটিতে সে যুগের সর্বোত্তম, দুটি মেশিনগান আর দুটি কুড়ি মিমির কামানে সজ্জিত, গতিও ভালো। ফিলিপাইনসের যুদ্ধে আকাশে জিরো ফাইটার দেখে তাজ্জব বনেছিলেন আমেরিকানরা। এত দূর আসতে পারে ঐ ছোট্টো বিমান? জাপানী বিমানকে সব সময়েই দূরপাল্লার হতে হয়েছে, আর জার্মান আর রাশিয়ান বিমান মোটামুটিভাবে ব্যবহার হত স্থলযুদ্ধের সহায়কের ভুমিকায়। আমেরিকানদের আক্রমণের মুখ্যস্তম্ভ ছিল দূরপাল্লার, অনেক-উঁচুতে-উড়তে-সক্ষম ভারী বম্বার। এছাড়া আমেরিকানরা বৈমানিকদের নিরাপত্তা নিয়ে অন্য দেশের তুলনায় বেশী চিন্তিত থাকত, তাই তাদের ফাইটার প্লেনের আদর্শ ছিলো "বুম অ্যান্ড জুম' অর্থাত্ গোলা দেগেই পালিয়ে যাও। মুখোমুখি দ্বন্দ্বযুদ্ধে এরা খুব পারদর্শী ছিল না।
অস্ত্রেও একটা তফাত্ ছিল। রাশিয়ান ফাইটার বিমানরা রকেট মেরে ট্যাঙ্ক ধ্বংস করতে পারদর্শী ছিল। আমেরিকান বিমান এয়ারাকোবরা - যেটি ল্যান্ডলীজে সোভিয়েত রাশিয়াকে দেওয়া হয়েছিল, সেটি ঐ রকেটের গুণে রাশিয়ান বৈমানিকদের হাতে একটি মোক্ষম অস্ত্র হয়েছিল। এয়ারাকোবরা কিন্তু নিজের দেশে, মানে আমেরিকায়, কল্কে পায় নি। আমেরিকান ফাইটার বিমানে সব সময়েই ভারী মেশিনগান থাকত এবং কামান প্রায় থাকতই না। জার্মান বিমানে ছিলো কামানের ছড়াছড়ি। জার্মান ফক উল্ফে ছিলো দুটো ভারী মেশিনগান, দুটি হাল্কা কামান আর দুটি ভারী কামান - যেগুলি থেকে মিনিটে সাতশো রাউন্ড গোলা ছোঁড়া যেত। তুলনায় স্পিটফায়ারের ছিল আটটি মেশিনগান। দুসেকেন্ডের বার্স্টেই যে কোনো বোমারু বিমান ধ্বংস হত।
এই বছরে নতুন বিমান এল জার্মান ফাইটার ফক উল্ফ১৯০। এমই১০৯য়ের থেকে দ্রুতগতি, উড়তেও পারে আরো বেশী দূরত্ব। ব্যস! ১৯৪৫ পর্যন্ত জার্মানী আর নতুন বিমান কিছু বানাবে না। একেবারে যুদ্ধের শেষ সময়ে নামাবে জেট ফাইটার ও বম্বার। আর অন্য মেরুতে জাপান বিশ্বযুদ্ধের পাঁচ বছরে প্রায় একশোটি নতুন মডেল এনেছিল। তবে একটা কথা - সব দেশই তাদের কয়েকটা বেসিক মডেল খাড়া করে ক্রমাগতই নানা উন্নতি করে যেত। জার্মানীও কারিগরী ও বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবন বন্ধ রাখে নি।
আর নতুন "আবিষ্কার' জাপানী জিরো ফাইটার। ডিসেম্বর মাসে পার্লহার্বারে জাপানী বিমান হানার পর পশ্চিমী দুনিয়ার চোখ খুলল জাপানী বিমানশক্তিকে বুঝতে পেরে। মাত্র নব্বই মিনিটের মধ্যে দুই ঝাঁকে উড়ে আসা জাপানী বিমান ডুবিয়ে দিল আঠারোটি জাহাজ যার মধ্যে পাঁচটি ব্যাট্্লশিপ। প্রায় আড়াই হাজার আমেরিকান নিহত হলেন,বারোশোর মতন জখম। বিমানের কার্যকারিতা নিয়ে আর কোন সন্দেহের অবকাশ থাকল না।
১৯৪২ - ৪৩:
Hitler built a fortress around Europe, but he forgot to put a roof on it.
— Franklin D. Roosevelt
বলা যায় বিমানের স্বর্ণযুগের শুরু, কেননা আমেরিকা এসে পড়েছে রণাঙ্গনে । তার পুরনো জমানার বিমানের বদলে নতুন প্রযুক্তির নতুন বিমান এসে পড়ল। এই দুই বছরে বহু নতুন বিমান আসবে। আর পুরনো বিমানগুলির যেগুলির সম্ভব, অনেক উন্নত সংস্করণ বার হবে। ৪২য়ের শুরুতেই আমেরিকার হাতে ফাইটার প্লেন তেমন ভালো না থাকলেও দূরপাল্লার বোমারু বিমান ছিল তুরুপের তাস। বি২৪ লিবারেটর যেতে পারত বহু দূর আর প্রায় সাত-আট টনের বোমা বহন করতে পারত। প্রয়োজনে দশ টনও। অ্যাটলান্টিকের সাগর যুদ্ধে কনভয় প্রহরায় এই লিবারেটরের ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য।
সেই তুলনায় বলা যায় মাঝারী বম্বার ছিল বি২৫ মিচেল। বোমারু হিসাবে ১।৮ টন পর্যন্ত বোমা বইতে পারত। এই বিমানের একটা সম্পূর্ণ আক্রমণাত্মক সংস্করণও ছিল। তাতে থাকত একটা ৭৫ মিমি কামান যা তখনকার দিনের ভারী ট্যাঙ্কে থাকত, এ ছাড়া ছিল আটটা ভারী মেশিনগান। ভিয়েতনাম থেকে শুরু করে আফঘানিস্তানের যুদ্ধে ব্যবহতৃ গানশিপের জনক বলা যায় এই ভার্শনটিকে।।
৪২-এর জুন মাসে ষোলটি মিচেল বোমারু বিমান উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরের বিমানবাহী জাহাজ থেকে উড়ে গিয়ে টোকিয়োতে বোমা ফেলে চীনে অবতরণ করে। এর আগে মনে করা হত টোকিয়ো সম্পূর্ণভাবে আমেরিকার বোমারুদের আওতার বাইরে। জাপানের আত্মবিশ্বাস টলিয়ে দিয়ে এই হানাদারি ছিল জেমস বন্ডের অ্যাডভেঞ্চারের মতই চমকপ্রদ।
কিন্তু এই দূরপাল্লার বিমানের সাথে উড়ে যাবার মত প্রহরী ফাইটার কই? এই সময়েই চিন্তা শুরু হল স্বয়ংসম্পূর্ণ বোমারু বিমানের। "নিজের প্রতিরক্ষা নিজেই করুন' এই থিওরী মত ১৯৪৪ সালে আসবে সুপারফর্টেস্র বি২৯ বোমারু বিমান। আমেরিকা মন দিল ভালো ফাইটারের উপর। যেহেতু আমেরিকার লড়াই ছিল জাপানের সাথে সাগরযুদ্ধে এবং জার্মানীর সাথে ভূখন্ডের উপর, তাই আমেরিকার জাহাজ থেকে উড়ানে সক্ষম ফাইটার প্রয়োজন ছিল, প্রয়োজন ছিল ল্যান্ডবেসড ফাইটারও। যুদ্ধের শুরুতে আমেরিকান নৌবহরের ছিল ওয়াইল্ডক্যাট ফাইটার যা জাপানী জিরোর ধারে কাছে যেতে পারত না। ৪২'এ তাই এসে গেল হেলক্যাট। ৪৩ সাল থেকে নেভীতে এব ংযুদ্ধ শেষ না হওয়া পর্যন্ত এটাই ছিল আমেরিকান নৌজঙ্গী বিমানের মূল স্তম্ভ। আমেরিকানদের হাতে শেষ তিন বছরে ভূপাতিত প্রায় সাড়ে ছয় হাজার জাপানী বিমানের মধ্যে প্রায় পাঁচ হাজার বিমানের মৃত্যু হয়েছিল এই হেলক্যাটের "হাতেই'।
এর সাথে সাথে তৈরী হচ্ছিল করসেয়ার জঙ্গী বিমান। জাপানীরা বলত "মৃত্যুর শিস'। এর ডানাগুলি ছিল অদ্ভুত। অনেকটা সীগাল পাখীদের ডানার ঠিক উল্টোটা অর্থাত্ প্রথমে নীচু হয়ে আবার উঁচু হয়েছে। করসেয়ার ছিল সেই সময়ের দ্রুততম বিমান যেটি প্রথম ঘন্টায় ৪০০ মাইলের বেশী গতি অর্জন করে। তবে এর দুর্বলতা ছিল যে খুব বেশী উচ্চতায় এটি তেমন লড়তে পারত না। আর অদ্ভুত ডিজাইনের জন্য এর "নাক' সব সময়েই উঁচু হয়ে থাকত যার ফলে টেকাফ ও ল্যান্ডি-ংএর সময় বৈমানিকের দৃষ্টি অনেকটা ব্যাহত হত। তাই বিমানবাহী জাহাজের পক্ষে এটি অনুপযুক্ত ছিল। কিন্তু এই বিমানটির নাকউঁচু হবার যথেষ্ট কারণ ছিল। মাত্র ১৮৯টি করসেয়ার বিমান ধ্বংস হয়, বিনিময়ে এই বিমানের বৈমানিকরা ২১৪০টি শত্রু বিমান ধ্বংস করেন। এইরকম "কিল রেশিও' আর কোন বিমান অর্জন করতে পারে নি।
পি৩৯ এয়ারাকোবরার ইতিহাসও খুব চিত্তাকর্ষক। এটি বেশ ওজনে ভারী এক জঙ্গী বিমান। না পারত দূরে যেতে, উপরে উঠবার (ক্লাইম্বিং রেট) ক্ষমতাও ছিল খুব কম এবং খুব উঁচুতে উড়তেই পারত না। আমেরিকা এই বিমান প্রায় হাজার পাঁচেক ধরিয়ে দিল রাশিয়াকে। ল্যান্ডলীজ প্রোগ্রাম। আর পূর্ব ফ্রন্টের লড়াইতে দারুণ কেরামতি দেখাল এই বিমান। রাশিয়ানরা বরাবরই লড়াই করেছেন ইনফ্যান্টী ও সাঁজোয়া বাহিনীর সাথে গ্রাউন্ড-সাপোর্ট বিমান নিয়ে। সেই মত তাঁরা এয়ারাকোবরায় লাগালেন ৩৭ মিমির এক কামান - সেই সময়ে অত বড় কামান আর কোনো ফাইটার বিমানে ছিল না। তাছাড়াও দুটি হাল্কা আর দুটি ভারী মেশিনগানও মজুত থাকত। ফ্লাইং আর্টিলারীর একেবারে হদ্দমুদ্দ।
এ ছাড়াও রাশিয়ার হাতে ছিল কিংবদন্তীর ইলিউশিন দুই। যার পোষাকী নাম ছিল প্রচুর। রাশিয়ানরা বলত "উড়ন্ত ট্যাঙ্ক'। আরো বলা হত "কংক্রীট বম্বার', "লৌহ গুস্তাভ', "কালো মৃত্য'উ বা স্রেফ "কসাই'। প্রায় আধইঞ্চি পর্যন্ত পুরু লৌহবর্মাবৃত এই বিমানের মুখ্য অস্ত্র ছিল তার ভারী কামান। রকেটও থাকত কিন্তু রাশিয়ান রকেট তখনও খুব নির্ভরযোগ্য হয়ে ওঠে নি। মাটির থেকে মাত্র শ দেড়েক ফীট উঁচুতে উড়ে যেত এই বিমান। শ্লথগতির জন্য জার্মান ফাইটারের ছিল সহজ শিকার - ক্বচিত্ কখনো ডগ ফাইটে জিতেছে শত্রু ফাইটারের সাথে। কিন্তু ট্যাঙ্ক শিকারে ছিল অনন্য। এক ঝাঁক ইলিউশিন টু কার্স্কের লড়াইতে ৭০টি জার্মান ট্যাঙ্ক ধ্বংস করেছিল মাত্র কুড়ি মিনিটে। কুড়ি থেকে তিরিশটি ইলিউশিনটু বিমান একসাথে ঝাঁক বেঁধে টহল দিত - শত্রু ট্যাঙ্ক সামনে পড়লে রেহাই দিত না।
এই বিশ্বযুদ্ধের সেরা ফাইটারের স্বর্ণপদক? বিতর্ক চলতেই থাকবে, কিন্তু সব থেকে বড় দাবীদার বোধহয় পি৫১ মুস্টাং। ১৯৪০ এপ্রিল মাসে বৃটীশ পার্চেজ কমিশন আমেরিকার নর্থ আমেরিকান কম্পানীতে হাজির হলেন। উদ্দেশ্য ব্রিটেনের জন্য সেসময়ের আমেরিকান ফাইটার পি৪০ কার্টিস ফাইটার বিমান তৈরী করে দিতে হবে। এমন আউটসোর্সিং সেকালে খুবই চলত! নর্থ আমেরিকান কম্পানীর প্রধান জে এইচ কিন্ডেলবার্গার জানালেন কার্টিস কেন? তার থেকেও অনেক ভালো বিমান তাঁরা গড়ে দেবেন। ব্রিটীশরা তাতে রাজী, কিন্তু তাঁদের আব্দার মাত্র তিন মাসেই প্রোটোটাইপ করে দিতে হবে। এবং সেই আমেরিকান কোম্পানী অসম্ভবকে সম্ভব করলেন ১১৭ দিনে মডেল তৈরী করে। বেশ কয়েকটি টেস্ট ফ্লাইটে তেমন আশানুরূপ ফল পাওয়া গেল না। চাই শক্তিশালী ইঞ্জিন। ব্রিটীশ জঙ্গী বিমান স্পিটফায়ারে থাকত রোলস রয়েসের মার্লিন ইঞ্জিন, এটি লাগাতেই মুস্টাং হয়ে গেল অপ্রতিরোধ্য। বেশ কয়েকটি মডেলের পর যেটি আকাশ কাঁপাল সেটি ৪২-এর সেপ্টেম্বরের পি৫১বি। সর্বোচ্চ গতি ঘন্টায় ৪৪০ মাইল। ২০০০০ ফীট উচ্চতায় উঠতে সময় নিত ছয় মিনিটেরও কম এব ৩০০০০ং ফীট উচ্চতায়ও স্বচ্ছন্দে উড়তে পারত - সে সময়কার হিসাবে একেবারে অদ্বিতীয়।
আরেকটি আমেরিকান ফাইটার বম্বার খুব নাম করে, সেটি থান্ডারবোল্ট। Size does matter ! বিশ্বযুদ্ধের সব থেকে বড় ও ভারী সিঙ্গল পাইলটের বিমান। এক বৈমানিক বলেছিলেন "মনে হচ্ছে, একটি বাথটাব নিয়ে আকাশে উড়ছি!' কিন্তু বোমা রকেট আর আটটি মেশিনগানে সজ্জিত এই বিমান ইওরোপে অজস্র ট্যাংক,রেলওয়ে ইঞ্জিন,কোচ,সাঁজোয়া গাড়ী ধ্বংস করে ট্যাঙ্কবাস্টার নাম অর্জন করে। মুখোমুখি আকাশ লড়াইতে থান্ডারবোল্ট অবশ্য খুব পটু ছিল না।
এই সময়ে ব্রিটেন দুটি নতুন বোমারু বিমান আনল। আর বাদ দিয়ে দিল পুরনো জমানার স্টার্লিং আর ওয়েলিংটন বিমান।
একটি হল অ্যাভ্রো ল্যানকাস্টার। সব থেকে বেশী বোমা নিয়ে যেতে পারত এই বিমান। সেই সময়ে ব্রিটীশ বম্বার কম্যান্ড মাথা ঘামাচ্ছেন খুব ভারী বোমা নিয়ে। তৈরী হয়েছে সাড়ে পাঁচ টনের টলবয়। সেখানেই থেমে নেই - আরো তৈরী হলো দশ টন ওজনের গ্র্যান্ডস্ল্যাম বা ভূমিকম্প বোমা। তত্তÄ ছিল বড় সেতু বা বাঁধ ভাঙতে হলে হিসাব কষে একটু দূরে এই দশটনী ভূমিকম্প বোমা ফেলতে হবে। মাটির কিছুটা নীচে গিয়ে এই বোমা ফাটলে ফলাফল হবে ঠিক একটা ছোটখাট ভূমিকম্পের। বাস্তবে হয়েও ছিল তাই। ৪৩ সালে রুর উপত্যকায় এই "ড্যামবাস্টার' বোমা অনেকগুলি ড্যামকে ধ্বংস করেছিল। এই সব ভারী বোমার জন্য জরুরী ছিল ল্যান্কাস্টারের। তবে এই অত্যন্ত শ্লথগতির বিমানটির গড়পড়তা আয়ু ছিল বেশ কম। সেই সময়ের সবথেকে সেরা নেভিগেশনাল প্রযুক্তি (এইচ টু এস) এই বিমানে ছিল।
এই ৪২ সালেই একটি নতুন মাঝারী বম্বার - নাম মসকুইটো - এল ব্রিটীশ বম্বার কম্যান্ডে। কোন প্রতিরক্ষী গোলন্দাজ নেই, তাই বেশ হাল্কা। ক্ষিপ্রতা প্রায় ফাইটার বিমানের মত। তবে যেখানে ল্যান্কাস্টার প্রায় দশ টন বোমা বইতে পারত, মসকুইটোর ক্ষমতা ছিল দুই টনেরও কম। রাতের বেলা বম্বিং রেইডে এই বিমান ছিল সব সেরা। কেন না জার্মান নাইটফাইটারদের তুলনায় এর স্পীড বেশী ছিল। তাই পুরো যুদ্ধেই মসকুইটোর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল সব থেকে কম। কিন্তু পাত্তা পায় নি মসকুইটো। আসলে ব্রিটীশ বম্বার কম্যান্ড তখন শুধু কত বেশী বড় বোমা ফেলে আসতে পারবে এই প্রতিযোগিতায় মেতেছে। ব্রিটীশ ভারী বোমারুদের প্রচুর সংখ্যক জার্মান শিকার হলেও তাঁরা সিদ্ধান্ত পালটান নি, মসকুইটো তাই কামান দাগাতে প্রথম সারিতে পাত পায় নি।
প্রশান্ত মহাসাগরের লড়াই শুরু হয়ে গেছে জোর কদমে। প্রথমে কোরাল সীর যুদ্ধ যেখানে জাহাজে জাহাজে যুদ্ধ হবে শুধুই দুই পক্ষের বিমানের। সেই প্রথম। জুন মাস নাগাদ হল মিডওয়ের লড়াই যেখানে দুনিয়া কাঁপানো পাঁচ মিনিটের মধ্যে তিনটি (এবং অবশেষে আরো একটি) জাপানী বিমানবাহী জাহাজের সলিলসমাধি হবে। অতিকায় জার্মান ব্যাট্লশিপ বিসমার্ক সম্মুখ সমরে মাত্র তিন মিনিটে ডুবিয়ে দিল ব্রিটীশ রণতরী হুডকে। নয় মাইল দূর থেকে দাগা কামানের গোলায় টুকরো হয়ে গেল ব্রিটীশের গর্ব। হুডের সঙ্গী রণতরী প্রিন্স ওফ ওয়েল্স সেই যাত্রায় পালালেও অচিরেই সেও জাপানী বোমায় ডুবে যাবে। বাঁচবে না বিসমার্কও। তার মৃত্যুবাণও বিমানের হাতেই। ছোট্টো বিমান সোর্ডফিশ থেকে নিক্ষিপ্ত টর্পেডোয় মারাত্মক জখম হয়ে যাবে বিসমার্ক। এক এক করে আর যতো সাগরদূর্গ ছিলো - মুশাশী, ইয়র্কটাউন, আকাগী, কাগা, টির্পিত্জ - সব কটি, সকলে, সকলেই বিমান থেকে নিক্ষিপ্ত বোমা ও টর্পেডোতে ডুবে যাবে। জাহাজ ও বিমানের লড়াই ছিল নেহাত্ই একপেশে।
১৯৪৪ :
It is not possible . . . to concentrate enough military planes with military loads over a modern city to destroy that city.
— US Colonel John W. Thomason Jr., November 1937.
— Arthur "Bomber" Harris, RAF.
— Marshal of the Royal Air Force Sir Arthur "Bomber" Harris
বিশ্বযুদ্ধের শেষ দুই বছর বোমারুর। আকাশে তাদেরই রাজত্ব। দূরপাল্লার বোমারুর রাজা ছিল আমেরিকা। তাদের বি১৭, বি২৪ সিরিজের চার ইঞ্জিনের বিমানগুলির নাম ছিল ফ্লাইংফর্টেস্র। কিন্তু নিছক নগরবিধ্বংসী বিমানের নামে দূর্গ কেন? কেন না এই বিমানগুলিতে ছিল অনেকগুলি ভারী মেশিনগান। বি১৭তে থাকত তেরোটি। ভাবা হত যে শত্রুপক্ষের ফাইটার বিমানদের এই মেশিনগান দেগে উড়িয়ে দেওয়া যাবে। সেই মত বিমানের "নাকে', মাথার উপরে,বম্ব বে'র পাশে মানে বিমানের তলপেটে, বিমানের একেবারে পিছনে, বিমানের কোমরে, সজারুর কাঁটার মত এই প্রতিরক্ষী গোলন্দাজেরা থাকত। আর বি২৯ সুপারফর্টেস্র? এক ডজন ভারী মেশিনগান ছাড়াও ছিল একটি কুড়ি মিমির কামান। এই বিমান তৈরী হয়েছিল অনেক উঁচু থেকে দিনের বেলার বোমারু হানার জন্য, কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল অত উঁচু থেকে ফেলা বোমা খুবই লক্ষ্যভ্রষ্ট হচ্ছে জোরালো হাওয়ার জন্য। এর জন্য বি২৯ অনেক কম উচ্চতা থেকেই বোমাবর্ষণ করত। নাগাসাকি ও হিরোসিমায় পারমাণবিক বোমা এই সুপারফর্টেস্র থেকেই নিক্ষিপ্ত হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে এগুলি নেহাত্ই সাহস যোগানোর উপাদান ছিল। বিমানের প্রতিরক্ষী সেনারা শত্রু ফাইটারের বিরুদ্ধে একেবারেই অসফল ছিল। বিমানের রূপকারেরা বারবারই বলেছেন এই কামান ও গোলন্দাজ সেনাদের বাদ দিয়ে দিতে। এর ফলে বিমানের গতি বাড়বে, ক্ষিপ্রতাও। কিন্তু কোন পাইলটই এই গোলন্দাজদের বাদ দিতে রাজী হন নি। তাই যুদ্ধের শেষদিন পর্যন্ত এই গোলন্দাজরা বহাল ছিল। আর কেমন ছিল এই বৈমানিকরা? নেহাত্ই বাচ্চাছেলের দল। এই সুবিশাল মারণযন্ত্র চালাতো যারা, তারা বেশীরভাগই পঁচিশের নীচে। আঠারো উনিশ বছরের তরুণও ছিল যথেষ্ট সংখ্যায়।
জার্মানীর নগরে নগরে শুরু হল মিত্রপক্ষের বিমানহানা। একসাথে হাজার বোমারুর হানা। বিমানগুলি উড়ত একঝাঁকে। পাশাপাশি উড়ে যাওয়া দুই বিমানের পাখার প্রান্ত ছুঁয়ে যেত পরষ্পরকে। হ্যা,ঁ মাঝেমাঝেই ঠোকাঠুকি লেগে যেত দুই বিমানে, বিশেষত: মেঘলা দিনে। খুব কড়া ফর্মেশনে উড়ে যেত ঐ ঝাঁক। কেননা তখনকার দিনের রণনীতি অনুযায়ী বোমারু হানার সাফল্য নির্ভর করত ঐ ফর্মেশনে উড়ে চলার উপর। আসলে তখনো প্রিসিশন বম্বিং খুব উন্নত হয় নি, তাই লক্ষ্যভেদের জন্য ঐ রকম ঝাঁকে ঝাঁকে বোমার উপর নির্ভর করতে হত। এর পোষাকী নাম ছিল কার্পেটবম্বিং। লক্ষ্যস্থলের কাছে এলেই শুরু হতো নীচ থেকে বিমানবিধ্বংসী কামানের গোলাবাজি। তখন সব বোমারু বিমানই চাইতো কত তাড়াতাড়ি বোমা ফেলে পালিয়ে আসা যায়। কিন্তু ফর্মেশন ভাঙার উপায় ছিল না। ধীরগতিতে উড়ে যেত বিমানের দল। যেন আকাশে বিমানের প্যারেড চলছে। পাইলট নয়, বোমা চালক ( bombardier ) সেইসময়ে বিমানের অধিনায়ক। বোমা ফেলবার পর পাইলট আবার মুখ্য বৈমানিকের দায়িত্ব পাবেন। এই বিশাল মৃত্যুদূতদের জীবন কিন্তু দীর্ঘ ছিল না। গড়ে পঁয়ত্রিশবার উড়তে পারত। বিমানবিধ্বংসী গোলা বা শত্রু পক্ষের ফাইটার বিমান - কেউ না কেউ ছিনিয়ে নিত বোমারু আর তার বাসিন্দাদের।
বছরের শুরুতে ফেব্রুয়ারী মাসে আমেরিকা তাদের প্রথম একটা বড় রকমের বোমারু হানা দিল খোদ জার্মানীতে। ছয়দিনের এই আক্রমনের নাম ছিল "বিগ উইক'। তো এই বড় সপ্তাহেই প্রথম আমেরিকান বোমারু বিমান জার্মান ফাইটারের মুখোমুখি হল - তাও আবার জার্মানীর বুকের উপরেই। প্রায় আড়াইশো আমেরিকান বোমারু বিমান ধ্বংস হল প্রায় পাঁচশো জার্মান ফাইটারের বিনিময়ে। জার্মানীর উত্পাদনক্ষমতা বিপর্যস্ত হল ঠিকই, কিন্তু সেটা নেহাত্ই সাময়িক। আমেরিকান বোমাগুলি খুব ভারী ছিল না। তাই নতুন করে উত্পাদন শুরু করতে দেরী হয় নি। কিন্তু জার্মানীর পক্ষে সবথেকে বড় লোকসান হল তার পাইলটদের মৃত্যু। এই অভিজ্ঞ পাইলটদের বদলে নতুন প্রশিক্ষিত বৈমানিকদের দ্রুত রণাঙ্গনে নিয়ে আসবার ব্যবস্থা তখন জার্মানীর আর ছিল না।
পূর্ব ফ্রন্টে রাশিয়া আর জার্মানীর লড়াই কিন্তু মূলত: ছিল ট্যাঙ্কের লড়াই। বিমানের ভূমিকাও ছিল ট্যাঙ্ক বিধ্বংসীর। ইওরোপে বিমানের এই "ট্যাঙ্কবাস্টার' হিসাবে আত্মপ্রকাশ হবে '৪৪ সালে নরম্যান্ডি ল্যাণ্ডিংয়ের পর। দক্ষিণ ফ্রান্সে ঘন ঝোপ ও উঁচুনীচু জমি ট্যাঙ্ক লড়াইয়ের পক্ষে আদর্শ ছিল না, যেমন ছিল রাশিয়ার বিস্তীর্ণ তৃণভূমি। যুদ্ধ শেষে দেখা যাবে বেশীরভাগ জার্মান ট্যাঙ্কই ধ্বস্ত হয়েছে ব্রিটীশ আর আমেরিকান বিমানের হাতে। প্রায় জার্মান ১৫০০ ট্যাঙ্কের মধ্যে লড়াই শেষে বেঁচে ছিল মাত্র শ'খানেক ট্যাংক।
এই বছরে বিমানযুদ্ধে নতুন অবদান অবশ্য বিমানের নয়, বোমার। ব্রিটেন খুব ভারী বোমা, যেমন সাড়ে পাঁচ টনের টলবয় বা ভূকম্পনবোমার সাহায্যে বিভিন্ন জায়গায় বোমা ফেলে দারুণ সাফল্য অর্জন করে। নরম্যান্ডী ল্যান্ডিংয়ের পর যখন জার্মান সেনারা দ্রুত ছুটে আসছে প্রতি আক্রমণের জন্য, তখন তাঁদের লয়েরে অঞ্চলে একটি সুড়ঙ্গ পার হয়ে আসতে হত। এই সউমুর ( Saumur ) টানেল ছিল যোগাযোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ল্যানকাস্টার বিমান থেকে ফেলা টলবয় বোমার আঘাতে সম্পূর্ণ ভাবে চূর্ণ হয়ে যায় এই টানেল। প্যানজার বাহিনী আর রণাঙ্গনে পৌঁছতেই পারে নি। অনেক উপর থেকে - প্রায় আঠারো হাজার ফীট উচ্চতা থেকে - এই বোমাগুলি ফেলা হত। যাতে লক্ষ্যভ্রষ্ট না হয়, সেই জন্য এদের আগে থাকত পথপ্রদর্শক বিমান (প্রথমে মসকুইটো এবং পরে কখনো কখনো মুস্টাং বিমান)। এই দ্রুতগামী বিমানগুলি খুব নীচু থেকে লক্ষ্যবস্তুর চারিদিকে হয় ধোঁয়াবোমা (দিনের বেলা) বা ইন্ডিকেটর (রাতের বেলা) ফেলে আসত । অনেক উপর থেকে ভারী ল্যানকাস্টার বিমান এই নির্দেশ দেখে তাদের বোমানিক্ষেপ করত। ফল হত আশাতীত। বোমাগুলিতে পনেরো মিনিট থেকে আধ ঘন্টা পর্যন্ত ফিউস লাগানো হত। অত উপর থেকে অত ভারী বোমা পড়ে মাটির ভিতর ঢুকে যেত। তারপর বিস্ফোরণে ফল হত ছোটখাট ভূমিকম্পের। তাই এর নাম ছিল ভূমিকম্পবোমা। এই টলবয়ের আঘাতে ডুবে যাবে টির্পিত্জ - জার্মানীর অতিকায় ব্যাট্লশিপ। বম্বার কম্যান্ড আরো চূর্ণ করে দেবে রুর উপত্যকার Mohene dam । এই থেকেই ৬১৭ স্কোয়াড্রনের আদুরে নাম হয় "ড্যামবাস্টার'। ৪৪ সাল থেকে শুরু করে যুদ্ধ শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই টলবয় ও সবথেকে ভারী দশটনী ওজনের গ্র্যান্ডস্ল্যাম বোমা ফেলে জার্মানীর বিশাল বিশাল কংক্রীটের (কখনো প্রায় তেইশ ফীট পুরু) ঢাকনা দেওয়া ঘাঁটিগুলো ধ্বংস করা হয়েছিল। জার্মানরা ভেবেছিল সে সময়ের কোন প্রযুক্তিতেই অত পুরু ফেরোকংক্রীটের সুরক্ষা বিনষ্ট হবে না। সেই মতন ভিটু রকেট ঐ বোটের ঘাঁটি করে রেখেছিল এই ছাতার নীচে। কিন্তু টলবয়ের আঘাতে ঐ বিশাল ফেরোকংক্রীটের স্ট্রাকচারগুলি ভেঙে চুরমার হয়ে যায়, একটিও রক্ষা পায়নি। প্রথম দশটনী বোমা ফেলা হয় আর্নসবের্গের ভায়াডাক্টের রেলওয়ে সেতুর উপর। জলাভূমির উপর তৈরী করা ঐ কংক্রীটের সেতুটি ছিল বিশাল অনেকগুলি খিলানের উপর। বার বার টলবয় ফেলেও কিছু ক্ষতি করা যায় নি। অবশেষে একটি গ্র্যান্ডস্ল্যাম বোমা ফেলা হল। মাটির প্রায় একশো ফীট নীচে ঢুকে সেটি বিস্ফোরিত হলে অনেকগুলি খিলানের ভিত মাটিতে ঢুকে যায় - সেতুটি ধ্বংস হয়।
এই বছরের জুনমাসে এই বিশ্বযুদ্ধের শেষ ফাইটারের লড়াই হল। প্রশান্ত মহাসাগরের সাইপান দ্বীপ দখল করে নিল আমেরিকান নৌবহর। তাদের হাতে, ছোটো বড় মিলিয়ে পাঁচশো জাহাজ আর প্রায় হাজার খানেক যুদ্ধ বিমান। জাপানের ভাঁড়ার তখন প্রায় শূন্য হয়ে এসেছে। অ্যাডমিরাল ওজোয়া দেখলেন আমেরিকান ফাইটারের তুলনায় তাঁর একটিই অ্যাডভান্টেজ - আমেরিকান বিমানেরা বর্মাবৃত বলে তাদের যুদ্ধের দৌড় ২০০ মাইল পর্যন্ত ,তুলনায় জাপানী বিমানেরা আদৌ বর্মে সুরক্ষিত ছিল না, হাল্কা এই বিমানেরা ৩৫০ মাইল পর্যন্ত উড়তে পারত। ওজোয়া, তাই তাঁর সবেধন শপাঁচেক বিমানকে রাখলেন তিনশো মাইল দূরে। আমেরিকান বিমানের হাতের বাইরে। প্ল্যান ছিল জাপানী বিমানেরা আমেরিকান ফ্লীট আক্রমণ করে ফিরতি পথে গুয়াম দ্বীপে নেমে আবার তেল ভরে ফিরে আসবে। পরিকল্পনা তো ভালৈ ছিল। কিন্তু শেষরক্ষা হল কই? রেডারের মারফত্ এবং জাপানী কোড পড়ে ফেলবার দরুণ জাপানীদের আক্রমণের জন্য প্রস্তুতই ছিল আমেরিকানরা। তাদের নতুন ফাইটার হেলক্যাট এবং তার বৈমানিকেরা ছিল সুশিক্ষিত। তুলনায় জাপানী বৈমানিকদের না ছিল অভিজ্ঞতা না ছিল ভালো প্রশিক্ষণ। আমেরিকানদের হাতে ছিল আরেকটি নতুন অস্ত্র। সেটি বিমান বিধ্বংসী কামানের প্রক্সিমিটি ফিউজ। গায়ে লাগানোর দরকার নেই - শত্রু বিমানের কাছে এলে আপনা থেকেই বিস্ফোরিত হবে এমন গোলা। এই দুই কারণে জাপানী আক্রমণ বৃথা গেল। এত সহজে জাপানী বিমানগুলো ভূপাতিত করা হল যে এই লড়াইয়ের নাম হয়ে গেল "দ্য গ্রেট মারিয়ানা টার্কী শুট'। ঘায়েল হওয়া আমেরিকান বিমানের তুলনায় বারো গুণ জাপানী বিমান ধ্বংস হল। ৪৭৩টি নৌ বিমানের মধ্যে মাত্র ৩৫টি বিমান অক্ষত ছিল। এর কিছুদিন পরে জাপান ও আমেরিকার শেষ নৌসংঘাতে জাপান তার কিছু বিমানবাহী জাহাজ নিয়ে হাজির ছিল বটে, কিন্তু সেটা নেহাত্ই লোক দেখানো। কেননা ঐ জাহাজগুলি থেকে উড়বার মত বিমান আর জাপানের ছিল না।
আর এই বছরের অনারেব্ল মেনশন? সেটি ব্রিটীশ ট্যাঙ্কবাস্টার হকার টাইফুনেরই পাওনা। প্রথম থেকেই নানান টেকনিক্যাল সমস্যা ছিল এই দ্রুতগামী বিমানটির। শেষ পর্যন্ত টিঁকল ফাইটার বম্বারের ডিজাইনটিই। দুটো পাঁচশো পাউন্ডের বোমা, আটটা রকেট আর দুটো কামান নিয়ে এই বিমানটি জার্মান সাঁজোয়াগাড়ী শিকারে পটু ছিল। তবে ঐ আরপিথী রকেটের বিস্ফোরণ ক্ষমতা দারুণ হলেও লক্ষ্যভেদে সাফল্য ছিল বেশ কম। যুদ্ধের শেষে,হিসেব কষে দেখা গেছিল যে বিমানবিধ্বংসী জার্মান ট্যাঙ্কের মাত্র চার শতাংশ রকেটে ঘায়েল হয়েছে। এই টাইফুন বিমানগুলি নরম্যান্ডীর রণক্ষেত্রে সামান্য দূরে অপেক্ষমান ট্যাক্সির মত দাঁড়িয়ে থাকত। ইনফ্যান্টীর তলব হলেই ছুটে গিয়ে আক্রমণ করত।
১৯৪৫ :
I am purely evil;
Hear the thrum
of my evil engine;
Evilly I come.
The stars are thick as flowers
In the meadows of July;
A fine night for murder
Winging through the sky.
— Ethel Mannin, 'Song of the Bomber'
সেই গত বছর থেকেই সারা জার্মানী জুড়েই একটানা টেরর বম্বিং চলছে। শুধু আতঙ্ক,ধ্বংস আর মৃত্যু। শহরের পর শহরে - একটানা আকাশ থেকে আগুন ঝরে পড়া। চার্চিল বললেন "আমাদের সাগরপারের অভিযানের ভিত্তিই এই বিমান হানা। দুই যুযুধান দেশই এই বিমানশক্তিকেই তাদের বিজয়ের সবথেকে ভারী অস্ত্র হিসাবে গণ্য করেছে। এই পথেই তারা শত্রুদেশকে পদানত করতে চেয়েছিলো। আমি এই হানাদারীকে কোনভাবে যুক্তিগ্রাহ্য করবার চেষ্টা করব না, শুধু বলব এ নেহাত্ই কাব্যিক প্রতিশোধ।' সেটাই শেষ কথা। জার্মানীর শহরগুলিতে যুদ্ধের শেষ তিনমাস যে তান্ডব চলেছিল প্রধানত: অসামরিক লক্ষ্যবস্তুর উপর সেটি নিছকই প্রতিহিংসা,প্রতিশোধ। যুদ্ধ জেতার জন্য কোন সামরিক কর্ম নয়। এই একটানা নগরধ্বংসী বোমারু হানা, এই নিয়ে লেখালেখি কম হয় নি। বস্তুত: বম্বার কম্যান্ডের প্রধান আর্থার হ্যারিস, যাকে বলা হত "বম্বার হ্যারিস' এবং অবশেষে "কসাই হ্যারিস', যুদ্ধ চলাকালীনই যথেষ্ট সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছেন। শুধু মানবিক কারণেই নয়, নৌ এবং ভূমিসেনারাও আপত্তি জানিয়েছেন এই অসামরিক লক্ষ্যের উপর বোমা ফেলায়। কেননা তাঁরা রণাঙ্গনে যথেষ্ট বিমান পাচ্ছিলেন না। প্রায় ছাপ্পান্ন হাজার ব্রিটীশ বৈমানিক মারা যান এই হানাদারীতে। বার্লিনের উপর প্রতিটি রেইডে ব্রিটীশ বিমানবাহিনী গড়ে শতকরা ৫ ভাগ বিমান হারাত, আমেরিকানরা সাড়ে ছয় ভাগ। ব্রিটীশ বৈমানিকদের প্রতিজনের ৩৫ বার হানা দেওয়ার দায় ছিল,আমেরিকানদের ছিল মাথাপিছু পঁচিশ বার। খুব একটা বড় গণিতজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন নেই। বোঝাই যায় যে গড়ের হিসাবে বার্লিন হানাদারী বিমান ও বৈমানিকের মৃত্যু অবধারিত ছিলো। ফাঁকা মাঠে গোল কখনই দেয়নি মিত্রপক্ষের বৈমানিকরা। একটি রক্ত হিম করা পরিসংখ্যান: প্রতি একশো জন ব্রিটীশ বৈমানিকের (তাদের রেগুলেশন পঁয়ত্রিশটি উড়ানের পর) ৫১ জন নিহত হতেন, আরো নয় জন প্রাণ হারাতেন তাদের দেশের মাটিতেই, তিন জন মারাত্মক জখম হতেন,বারোজন বন্দী হতেন, একজন শত্রুদেশে ক্র্যাশল্যান্ড করেও পালিয়ে আসতে পারতেন আর মাত্র চব্বিশ জন কোনমতে তাদের পুরো অপারেশন সমাপ্ত করতেন হতাহত না হয়ে। যুদ্ধ শেষের তিন মাস আগে সম্পূর্ণ অরক্ষিত ড্রেসডেন নগরী পুড়িয়ে দেওয়ার জন্য নিউরেমবার্গে অন্যান্য যুদ্ধাপরাধীদের সাথে হ্যারিসের বিচারও দাবী করেছিলেন অনেকে।
এই সব হানা সত্তেÄও জার্মানীর উত্পাদন বিশেষ কমে নি। সত্যি সেটি হোঁচট খেল যখন শেষ তিনমাসে মিত্রপক্ষের বিমান জার্মানীর তৈল শোধনাগারগুলিকে টার্গেট করেছিল। এর সাথে ছিল পূর্ব ফ্রন্টে রাশিয়ার একটানা অগ্রগতি, যার ফলে অনেক কাঁচামাল যোগান বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল।
ইওরোপে যুদ্ধের শেষ দু'তিনমাস আবার সেই ইনফ্যান্টীর। কি ইওরোপ কি জাপান - আকাশ তখন পুরোপুরি মিত্রপক্ষের হাতে। প্রায় বিনা বাধায় যথেচ্ছ বোমা ফেলে আসছে বোমারু বিমানেরা। জার্মানীর একের পর এক শহর জ্বালিয়ে, গুঁড়িয়ে দিচ্ছে দৈত্যাকার বিমানেরা। জ্বলছে জাপান। কোলন গুঁড়িয়ে গেল। জ্বলে খাক হয়ে গেল ড্রেসডেন আর টোকিয়ো। জাপান তার শেষ বিমানগুলি নিয়ে কামিকাজে বাহিনী গড়ে তুলেছে। আকাশের রাজপুত্র ছিল সেই সব বিমানগুলি, এখন শুধু একেকটি আগুনে বোমা, লক্ষ্যবস্তুর উপর আছড়ে পড়া ছাড়া আর কোনো কাজ নেই।
আটই মে জার্মানী আর তার চার মাস পরে জাপান আত্মসমর্পণ করলে আনুষ্ঠানিকভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হল। তবে এই খন্ড বছরেও বিমানযুদ্ধে কিছু যুগান্তকারী উদ্ভাবন ঘটে গেল। জেট বিমান। সব দেশই চেষ্টা করছিল, কিন্তু দৌড়ে প্রথম হল জার্মানী। জেট ফাইটার আর বম্বার নিয়ে যখন তারা মাঠে নামল তখন যুদ্ধ প্রায় শেষ।
ঐ সময়েই জার্মানী আরো নিয়ে এল বিশ্বের প্রথম (এবং সফল) এয়ার-টু-এয়ার রকেট। এর পটভূমিটা বলি - বোমারু বিমানের গতি বাড়ছিল ও তাদের গায়ের বর্মও আরো সহনশীল হচ্ছিল। কিন্তু বিমানের কামান বা মেশিনগানের ক্ষমতা সেই তুলনায় পিছিয়ে ছিল। আমেরিকান "উড়ন্ত দুর্গ' বি১৭ বোমারু বিমানকে আকাশ থেকে মাটিতে ফেলতে জার্মান ২০মিমির কামানের অন্তত ২৩টা গোলা লাগত। সেটা সম্ভবও ছিল না। ২৩টি গোলা দাগার সময় পাওয়া যেত না, তাছাড়া আমেরিকান বোমারু বিমানের গোলন্দাজরা তাদের আওতায় পেয়ে যেত জার্মান ফাইটারদের। তো সমাধান কি? আরেকটু ভারী কামান, ৩০ মিমির কামান কাজে দিল না। কারণ এই কামান ছিল অত্যধিক ভারী আর এর পাল্লাও ছিল স্বল্পদূরত্বের। মোক্ষম জায়গায় লাগলে একটি গোলাই যথেষ্ট, কিন্তু তার সম্ভাবনা বিরল। না:, আরো ভারী কামান লাগিয়ে এই সমস্যার সমাধান হয় না।
উত্তরটা হল আর৪এম রকেট। জার্মানী চিরকালই রকেট বিজ্ঞানে অন্য সব দেশের তুলনায় এগিয়ে ছিল। এ ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম হল না। এই রকেটের ওজন বেশী (প্রায় সোয়া তিন কেজি) হলে কি হবে,কামান তো আর লাগছে না। কিন্তু এই ম্যাজিক অস্ত্র এল বড্ড দেরী করে। যুদ্ধের ফলাফল তখন লেখাই হয়ে গেছে, না হলে জেট বিমান আর এই রকেট নিয়ে জার্মানী অনেকটাই এগিয়ে যেতে পারত। আর বিমানবিধ্বংসী কামান? প্রযুক্তিগত উন্নতি সেখানেও হয়েছে। যুদ্ধের প্রথম থেকেই একটি প্রতিযোগিতা চলছিল বিমান ও কামানের। বোমারু বিমান ক্রমশ: আরো উপরে ওড়ার প্রযুক্তি খুঁজছিল প্রধানত: কামানের আওতার থেকে দুরে থাকার জন্যই। আর বিমানবিধ্বংসীকামানও তার রেঞ্জ বাড়িয়ে যাচ্ছিল। জার্মানদের হাতে ছিল তাদের বিখ্যাত ৮৮মিমি কামান যেটিকে রোমেল ট্যাঙ্কবিধ্বংসীকামান হিসাবে ব্যবহার করে দুর্দান্ত ফল পেয়েছিলেন। এই কামানের প্রক্ষিপ্ত গোলার গতিবেগ দারুণ হলেও ফায়ারিঙ রেট খুব ভালো ছিল না। যুদ্ধের শেষদিকে ব্রিটেন তাদের ৩।৭ ইঞ্চির কামানের নলের সাথে তাদের ৪।৫ ইঞ্চির কামানের দেহ জুড়ে যে হাঁসজারু কামান তৈরী করেছিল তার গোলা তখনকার দিনে সব থেকে বেশী উচ্চতায় যেতে পারত। দু:খের বিষয়,ততদিনে জার্মানীর বোমারু বিমানবহর প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। তাই এই কামানটি খুব একটা কেরদানী দেখানোর সুযোগই পায় নি। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ যেমন ট্রেঞ্চ লড়াইয়ের যুগ শেষ করল, দ্বিতীয় যুদ্ধ তেমনই শুরু করল বিমানের যুগ, যার একটি সম্ভাবনার দিক ছিল হেলিকপ্টার। এই সময়েই এয়ারমোবিলিটি তত্তেÄর শুরু হয় যেখানে বিমাননির্ভর সেনারা কোনো ঘাঁটি ছাড়াই যত্রতত্র লড়াইকে নিয়ে যেতে পারবেন। সেটা অবশ্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে প্রয়োগ করার সুযোগ মেলেনি। কারণ বিশ্বযুদ্ধ তখন শেষ।
তবে বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলেও যুদ্ধের তো শেষ নেই। অনেকদিন অপেক্ষার পর ভিয়েতনামের যুদ্ধে ১৯৬৫ সালে প্রথম এই তত্তেÄর প্রয়োগ হবে। সেখানেও শেষ নয়। তারপরেও আসবে আরও নতুন নতুন বিমান। নতুন তত্তÄ। মানুষের বিহঙ্গবাসনার অদম্য সৃষ্টিশীল তাড়নায় বিমান নামক যে উড়ানযন্ত্রটির আবিষ্কার হয়েছিল, সে, ধ্বংসের কাজে ব্যবহতৃ হয়ে চলেছে, এব ংচলবে। যে ধ্বংসের কোনো শেষ আছে কিনা আমাদের জানা নেই।
http://www.guruchandali.com/guruchandali.Controller?portletId=1&pid=jcr://content/guruchandali/guruchandali13/1240185342113
সিনেমা সিনেমা | এই বিভাগের সমস্ত লেখা |
মধুজা মুখার্জী
Read more...
খাননামা | এই বিভাগের সমস্ত লেখা |
অর্ণব রায়
Read more...
নামচরিত | এই বিভাগের সমস্ত লেখা |
অধীশা সরকার
Read more...
জেমস ক্যামেরুনের অবতার : শুধুই কল্পবিজ্ঞান? | এই বিভাগের সমস্ত লেখা |
বিপ্লব পাল
Read more...
একাদশী অবতার | এই বিভাগের সমস্ত লেখা |
কৃষ্ঞকলি রায়
Read more...
অবতার : একটি ব্যক্তিগত নোট | এই বিভাগের সমস্ত লেখা |
সোমনাথ রায়
Read more...
থি ইডিয়টস - একটি সমালোচনা | এই বিভাগের সমস্ত লেখা |
কণিষ্ক লাহিড়ি
Read more...
৩-ইডিয়টস - একটি আলোচনা | এই বিভাগের সমস্ত লেখা |
অর্ণব রায়
Read more...
নস্টালজিয়া শব্দে বড় কাঁকর৷ সফটওয়ারের কিচাইনে অবিরত বদলে চলেছে আমাদের ইউ আর এল আর নতুন বাসার ঠিকানা৷ বদলে যাচ্ছে আমাদের হ্যালাফেলার আবহাওয়াবিদের আট পকেটের প্যান্টের র ংও আবহাওয়ার সরভাজা৷ যদিও কোথাও কোথাও ঘিয়ে ভাজা কুত্তার ন্যাজের মত কাশফুল দুলছে,পাঁচতারার কেতাবি পন্ডে পদ্ম ফুটছে, পুজো আসছে৷ আমরা এখন আর দুকুর রোদে নতুন ডিয়ার ক্লাব-ডেনিমে ক্যাপ পিস্তল হাতে দৌড়া-দৌড়ি করি না বর ংকেউ কেউ ইরাক বোম্বে ইজরাইলে বরাত মাফিক গাড়ি বাড়ি মানুষ উড়িয়ে গুঁড়িয়ে দিয়ে থাকি, বাকিরা শশীকান্ত হয়ে রাজা উজির বস ল ও উকুন মারি৷ এখন আর দুকুর বেলা চিত্- উবুড় হয়ে শুয়ে শারদ সাহিত্য সম্ভার পড়ি না, বরাত পেলে আখাম্বা উপন্যাস বা টাইট গল্প ছাড়ি আর না পেলে চুয়া ঢেঁকুর তুলি৷ সন্ত্রাস ঘনাইছে দিকে দিকে/ আমাদের কবি প্রতিভা ঢাকিছে বল্মিকে৷ তবু এর মধ্যেই আমরা বিন্দাস আছি৷ ফুকোয়, ফোকে,ফুঁকে এব ংফাঁকে কেটে যাচ্ছে আমাদের সময়৷ এখন আর আমাদের আধুনিকতার তকমায় বেঁচে থাকতে ভালো লাগে না৷ সভ্যতার ভাঙা চিরুনী আর দুর্গতিনাশিনীর পমেটম মাঝে সাঁঝে খুলে বসি৷ পুজোর সময় নানাবিধ চব্ব পড়ে কারুর মন ভার হয়, কান্না-টান্নাও পায় শুনেছি৷ আমাদের ওসবের বালাই নেই৷ এবার পুজোয় আমরা দিলাম হাতের তালু, দেখুন চিনতে পারেন কি ন!
এবার তাঁর এপিটাফ লেখা হবে। এবার তিনিও আইকন হবেন।
জীবদ্দশায় তাঁকে প্রায়ই সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলা হত। বিদগ্ধ ভদ্রোমহোদয় ও লেডিসগণ তাঁর নামোচ্চারণেই উঠতি লেখকদের পাকামো করতে নিষেধ করতেন। বাঁধা ছকের বাইরে পা দিলেই চোখ পাকিয়ে বলা হত , সন্দীপনী কোরোনা, সন্দীপনী কোরোনা। কতো, কতো বড়ো লেখক এই সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়, যাঁর নামে সন্দীপনী বলে আস্ত একটা কথাই চালু হয়ে গেল? অজিত চৌধুরী লিখেছিলেন। সে যুগ শেষ। তাঁর নামে এবার অর্ডার দিয়ে স্মৃতিস্তম্ভ বানানো হবে। হইহই করে বিক্রি হবে উপন্যাস সমগ্র। সভাসমিতিতে বিস্তর অশ্রুবিসর্জন হবে। ফটোয় মালা দিয়ে সভাপতি অধোবদন হবেন। ধরা গলায় বলবেন, আহা কি লিখতেন। মানুষটা প্রাপ্য সম্মান পেলেন না গো। প্রেমাশ্রুবন্যায় ডুবে যাবে ডিহি কলকাতা। সেই জোয়ারে সন্দীপনের লেখালিখি ভেসে যাবে। শুধু জেগে থাকবে ফটো। চৌকো মুখ আর দড়িবাঁধা চশমা। ভদ্দরলোকের মুখ যেমন হয়। অবিকল।
এই পাতায় কিছু বইপত্রের ই-সংস্করণ রাখা হয়েছে৷ বই পত্রের সংখ্যা ক্রমশ বেড়ে চলবে এরকমটাই আশা৷ ইতিমধ্যেই সংখ্যাটা আরও বেশি হতে পারত, কিন্তু কিছুটা কুঁড়েমি আর কিছুটা যোগাযোগের অভাবের জন্য করা হয়ে ওঠেনি৷ এ ব্যাপারে বেড়ে কাজ করছেন বইপাড়া ডট কম তাঁদের জানাই লালে লাল লাল সেলাম!!!
বাংলা লেখার জন্য স্ট্যান্ডার্ড কোনো ফন্ট আমাদের নেই৷ ফলে এই পাতায় যে ফন্টটা দেওয়া হচ্ছে, সেটিও কোনো স্ট্যান্ডার্ড ফন্ট নয়, যদিও এর কি-ম্যাপ কয়েকটি পপুলার বাংলা ফন্টের সঙ্গে মেলে৷ সঙ্গের বাংলা এডিটর টা আপনাকে ম্যানুয়ালি ইন্সটল করতে হবে, তার ইন্সট্রাকশনও নিচে দেওয়া আছে৷ উইন্ডোজের জন্য একটি অতি উত্তম স্ট্যান্ডার্ড অটোমেটেড ইন্সটলার লেখা হয়েছিল, সেটা এখানে এই মূহুর্তে দেওয়া যাচ্ছেনা
শুনে ঘাবড়ে যাবেন না, শুধু এই সাইটেই রক্ষে নেই, আমাদের একটি ছাপা পত্রিকাও আছে। তারও পোশাকি নাম গুরুচন্ডালি। আদর করে কাগুজে গুরু বলে ডাকা হয়। মাসে একবার প্রকাশিত হয়। কোথায় পাবেন, কি বৃত্তান্ত বিশদে জানার জন্য এই বিভাগটি মন দিয়ে পড়ুন। পাইলেও পাইতে পারেন অমূল্য রতন।
হ্যা,ঁ একবার স্টল থেকে খুঁজে একবার কিনে নিতেও ভুলবেন না। স্টলওয়ালারা দুচ্ছাই করতে পারে, কিন্তু তাতে কি? না পড়লে আমাদের ঘন্টা, কিছু যাবে আসবেনা, সমস্যা আপনারই। কি হারালেন, সে আর সারা জানা হবেনা। এ আফশোষ সারা জীবনেও যাবেনা।
উলোটপুরাণ থাকলে উলোটপুজো থাকতে বাধ্য, রোনাল্ড উইস্লির ধারণা, পুজো-ফুজো হরির আমলেই শুরু হয়ে ছিল, হ্যারির কালে নয়। চাল পুরানো হলে ভাতে বাড়ে, বোলচালও। আমাদের পুজো আছে কি নেই তা ব্রহ্মা জানতে পারেন,কিন্তু কিবোর্ড জানে হাত আছে, অজুহাতও। বিকাশ ভসচাজ্জি বিধুর, জলের পরে দুগ্গোর মুখখনি ফেডাউট হচ্ছে নিজস্ব ভঙ্গিতে, জলবত্ তরলং হয়ে যাওয়া জীবনে কারুর সম্বল পনিপথের ইতিহাস কারুর বা ভরসা বাংলা গ্রিটিংস কার্ডে, আমরা নাম রেখেছি উল্টোডাঙ্গা, মানে ঐ ইংলিশ চ্যানেল পার হয়ে দেবী যেখানে গিয়ে উঠিয়াছেন।
আমরা কেবল উল্টোচ্ছি, ভোটে জোটে ও হাইওয়েতে। এপিঠ থেকে ওপিঠ, বক্রেশ্বর থেকে তারাপীঠ । বক্রেশ্বরে এখন আপত্তি নেই কিন্তু পীঠের ভেতর যেহেতু আছে রিলিজিয়াস সুড়সুড়ি , রামদেব বাবা পিঠ টানটান রাখতে বলেছেন । আর এটা তো ঠিকই এফিশিয়েন্টদের যজ্ঞে সতীর বডি পার্টস কিছু কম পড়িয়াছিল, যাই হোক বাঙালি থেমে থাকেনি, ঘুরে ও দিস্তেলিখে বহুত নাম কিনেছে , দাদাগিরি আনলিমিটেড। নাক কুচকানো আর সবকিছু উল্টো দেখা যাদের স্বভাব তাদের জন্যে রইল উল্টোপীঠ।
বেচাবেচির সিন যখন নেই মনরথ মানে স্কাইরেল, স্লো কলার অয়োজন। ভীড় এড়িয়ে, মন খারাপ করে, সিদ্ধির ঝিমে বা ফুল্টুস মস্তিতে কি করছেন, কি দেখছেন, কি পড়ছেন জনি না। আমাদের সাইবারমন্থনে জমা থাক আরেক প্রকার উল্টোরথ। আর মনে রাখুন উল্টোরথ কিন্তু মামা বাড়ির আব্দার শেষে ঘরে ফেরার দিন।
রাজার পরে রাজা আসে, বসন্তের পর ভোট। গরম পড়েছে বলে বৃষ্টি নামে কোন কোন দিন। আমাদের ছোট নদী চলে আঁকেবাঁকে। হাঁটুজলে এক্কাদোক্কা খেলে ট্রাম-বাস টেম্পো। দোকানে ঝুলে থাকে রঙচঙে ক্যালেন্ডার আর রোব্বারের পাঁঠা। আয়নার কাঁচে জমে টিপ, হুহু ঝড়ে উড়ে যায় উইন্ডস্ক্রিনের ধুলো আর কে জানে কার আঁচলখানি। পরের সংখ্যা কবে হবে বলে লোকে তাড়া দেয়, আর স্বভাবসুলভ ঢিমে তেতালায় বচ্ছরখানেক পরে অনবধানে আমাদের প্যাকিং বাক্স খুলে দেখি, সারি সারি পান্ডুলিপি চুপচাপ জমে আছে।
বারোর পর তেরো আসে, বিলম্বিত একতালে। হাতে-হাতে কাজ ভাগ করে নিতে জড়ো হয় নতুন-নতুন ছেলেমেয়েরা। এই ভাবে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে আর চলছে না, বলে হাঁক পাড়ে তারা। নতুন নতুন মাথাগুলি ঝুঁকে পড়ে মনিটরে। মেল চালাচালি, হই হট্টগোল, ছ্যাবলামি আর গম্ভীর আলোচনায় আবারও সরগরম হয়ে ওঠে আমাদের পুঁচকে খেলাঘর। নতুন নতুন প্ল্যান হয় চড়ুইভাতি আর নতুন সংখ্যার। বারোর পর তেরো আসে। আনলাকি হোক আর ছাতার মাথা, কেউ পাত্তা দিক চাই না দিক, গুরুচন্ডা৯ চলছে চলবে।
এপ্রিল ২০, ২০০৯
দিনকাল পাল্টে গেছে৷ এতদিন আমরা শুধু শিল্প-সমালোচনা পাঠ করেছি৷ সুসংস্কৃত অধ্যাপকেরা আপনাকে-আমাকে জানিয়েছেন ভালো বই কারে কয়, মন্দ সিনেমাই বা কি৷ আমরা পদতলে বসে পাঠ নিয়েছি ভাষার, প্রকরণের৷ সাজিয়ে নিয়েছি নিজেদের বাক্যবিধি৷ জেনেছি সাঁঝের ঝোঁকে অলাবু ভক্ষণ ও না জানিয়া ফর্ম ভাঙা নিষিদ্ধ
দিনকাল পাল্টে গেছে৷ এতদিন আমরা শুধু শিল্প-সমালোচনা পাঠ করেছি৷ সুসংস্কৃত অধ্যাপকেরা আপনাকে-আমাকে জানিয়েছেন ভালো বই কারে কয়, মন্দ সিনেমাই বা কি৷ আমরা পদতলে বসে পাঠ নিয়েছি ভাষার, প্রকরণের৷ সাজিয়ে নিয়েছি নিজেদের বাক্যবিধি৷ জেনেছি সাঁঝের ঝোঁকে অলাবু ভক্ষণ ও না জানিয়া ফর্ম ভাঙা নিষিদ্ধ
দিনকাল পাল্টে গেছে৷ এতদিন আমরা শুধু শিল্প-সমালোচনা পাঠ করেছি৷ সুসংস্কৃত অধ্যাপকেরা আপনাকে-আমাকে জানিয়েছেন ভালো বই কারে কয়, মন্দ সিনেমাই বা কি৷ আমরা পদতলে বসে পাঠ নিয়েছি ভাষার, প্রকরণের৷ সাজিয়ে নিয়েছি নিজেদের বাক্যবিধি৷ জেনেছি সাঁঝের ঝোঁকে অলাবু ভক্ষণ ও না জানিয়া ফর্ম ভাঙা নিষিদ্ধ
এই সাইট বানানোর সময়, আমাদের ইচ্ছা ছিল যে যা লেখা দেবেন, সবই তুলে দেওয়া হবে৷ ভালো লেখা বা মন্দ লেখার সকল পূর্বনির্ধারিত ধারণাকে বঙ্গোপসাগরে ভাসিয়ে দিয়ে ন্যালাক্ষ্যাপার মতো শুরু হবে আমাদের জার্নি, এই ছিল ভাবনা৷ কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল, তা হয়না৷ প্রথমত: লেখালিখিকে এডিট করে এইচ টি এম এল বানাতে হয়, তারপর একটা নির্দিষ্ট খোপে ভরে ফেলতে হয়, সে অনেক ঝামেলা, এব ংতাতে সমস্ত লেখাকে স্থান দেওয়া অসম্ভব৷ ফলত: এই বিভাগটা খুলতেই হল৷
এখানে যে যা খুশি লিখবেন৷লিখবেন এব ংপোস্ট করবেন৷ তত্ক্ষণাত্ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ যে কেউ যেকোনো বিষয়ে লিখতে পারেন, মতামত দিতে পারেন৷ এখানে এডিটি ংএর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি,এখানে৷
যোগাযোগ করুন, মেল লিখুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায়:
guruchandali@gmail.com
http://www.guruchandali.com/
গাজা সফরে ইইউ-এর পররাষ্ট্রবিষয়ক প্রধান
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রধান ক্যাথরিন অ্যাশটন গাজাতে সফরে গেছেন৻ ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাস এই ভূখন্ডের নিয়ন্ত্রণ হাতে নেওয়ার পর তিনিই পশ্চিমী বিশ্বের শীর্ষতম রাজনীতিক, যিনি ওই এলাকায় গেলেন৻
ক্যাথরিন অ্যাশটন ইসরায়েল থেকে গাজায় আসেন অস্ত্রে সুসজ্জিত এক গাড়িবহরে চেপে৻ সেখানে তাঁর গন্তব্য ছিল গাজা সিটির কাছে জাতিসংঘের পরিচালিত একটি খাদ্য বিতরণ কেন্দ্র৻ মাঝখানে অল্প সময়ের জন্য গাড়ি থেকে নেমে তিনি স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে করমর্দনও করেন৻
গাজায় তিনি থাকছেন মাত্রই কয়েক ঘন্টা, তবে জাতিসংঘ মনে করছে গাজার ওপর ইসরায়েলের আরোপ করা আর্থিক অবরোধ তুলে নেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর এই সংক্ষিপ্ত সফরই কার্যকরী হতে পারে৻ গাজায় আসার আগে লেডি অ্যাশটন জেরুসালেমে ইসরায়েলী প্রেসিডেন্ট শিমন পেরেজের সঙ্গেও বৈঠক করেন এবং বলেন মধ্যপ্রাচ্যের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়াটা জরুরি৻
মধ্যপ্রাচ্য শান্তি-প্রক্রিয়ায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন যাতে তাদের ভূমিকা পালন করতে পারে, তা নিশ্চিত করাই আমার প্রথম উদ্দেশ্য
ক্যাথরিন অ্যাশটন, পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রধান, ইইউ
লেডি অ্যাশটন জানান, তাঁর সফরের প্রথম উদ্দেশ্য হল শান্তি-প্রক্রিয়াকে সমর্থন জানানো এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন যাতে সেই প্রক্রিয়ায় তাদের ভূমিকা পালন করতে পারে সেটা নিশ্চিত করা৻ আর দ্বিতীয় উদ্দেশ্য হল, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে – বিশেষ করে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে – স্বীকৃতি দেওয়া৻
তিন বছর আগে ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাস গাজার নিয়ন্ত্রণ হাতে নেওয়ার পর থেকেই ইসরায়েল ওই অঞ্চলে অর্থনৈতিক অবরোধ জারি রেখেছে৻ জাতিসংঘ বলছে, এই অবরোধ গাজাতে গাজাতে হাজার হাজার মানুষকে চরম দারিদ্রের মুখে ঠেলে দিয়েছে৻
গাজা সফরে গিয়ে লেডি অ্যাশটন যদিও হামাসের কোনও নেতার সঙ্গে দেখা করছেন না, তার পরেও জাতিসংঘ এই সফরকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে - কারণ তাঁদের মতে গাজাতে দুর্দশার মাত্রাটা কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে, সেটা পশ্চিমী দুনিয়ার শীর্ষ কর্তাব্যাক্তিদের নিজের চোখে দেখে যাওয়াটা প্রয়োজন৻
গাজাতে ফিলিস্তিনিদের জন্য জাতিসংঘের যে শরণার্থী সংস্থা বা ইউএনআরডব্লিইএ আছে, তার প্রধান জন গিং মনে করেন এই সফর খুবই গুরুত্বপূর্ণ; কারণ নীতি-নির্ধারণী স্তরে যাঁরা আছেন তাঁদের গাজার জটিল বাস্তবতা নিয়ে একটা প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা হওয়া দরকার৻
গাজাতে যে মধ্যযুগীয় অবরোধ চলছে, পশ্চিমী দুনিয়ার নীতি নির্ধারকদের তা নিজের চোখে দেখে যাওয়া দরকার
জন গিং, গাজাতে জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার প্রধান
তিনি আরও বলেন, তা ছাড়া স্থানীয় মানুষের দুর্দশাটা কীরকম ও তার প্রতিকারে যে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন, এই সরল ছবিটাও বোঝা দরকার৻ এই কারণেই তাঁরা এখানে আসবেন, নিজের চোখে দেখে যাবেন, সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন৻ মি. গিংয়ের মতে, হাজার দিন হাজার রাত ধরে এই মধ্যযুগীয় অবরোধ ভীষণই বাড়াবাড়ি – একটা চরম কলঙ্ক, একটা চরম লজ্জা৻
ফিলিস্তিনিদের ত্রাণ-সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে বৃহত্তম দাতাগোষ্ঠী হল ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আর তাই লেডি অ্যাশটনের কাছ থেকে গাজার প্রত্যাশাও অনেক৻ তবে তাঁর এই সফর চলাকালীনই মাত্র চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে গাজা থেকে নিক্ষিপ্ত তিনটি রকেট-হামলার ঘটনা পরিস্থিতিকে আবার জটিল করে তুলতে পারে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে৻
এর মধ্যে একটি হামলায় ইসরায়েলের একটি খামারে কর্মরত একজন থাই কৃষি-শ্রমিকও নিহত হয়েছেন৻
গত বছর গাজাতে ইসরায়েলের বিরাট সামরিক অভিযানের পর গাজা থেকে রকেট-হামলা একেবারেই কমে গিয়েছিল, কিন্তু নতুন করে এই হামলা শুরু হওয়ার পর ইসরায়েলও খুব দ্রুতই সামরিকভাবে তাঁর জবাব দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে৻ তবে সেটা হবে লেডি অ্যাশটন গাজা ছেড়ে চলে আসার পরেই, তার আগে নয়৻
সরকার নাহার এল বারেদ ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তু শিবির পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত বাতিল কবেছে। লেবানন সরকারের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ক্ষোভ এবং প্রতিবাদের ঢেউ আঁছড়ে পড়ছে।
গত সপ্তাহে লেবাননের উত্তরের শহর ত্রিপোলীতে শত শত প্রতিবাদকারী এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করেছে, কিন্তু যেমনটা লেবানন ভিত্তিক ফটোসাংবাদিক ও ব্লগার, ম্যাথু ক্যাসেল, ব্যাখ্যা করছেন তার ব্লগ জাস্ট ইমেজে, এটি তারপরেও এক কঠিন প্রক্রিয়া:
উদ্বাস্তু শিবির থেকে শত শত উদ্বাস্তু ও তাদের সমর্থক এসে ত্রিপোলীতে জড়ো হয়। নাহার আল বারেদ উদ্বাস্তু শিবিরের সবচেয়ে কাছের প্রধান শহর ত্রিপোলী। শহরের কেন্দ্রস্থলের এক পুলিশ স্টেশনের কাছে প্রতিবাদ করার অনুমতি না পেয়ে এর সংগঠকরা প্রতিবাদ করার স্থান পাল্টে ফেলে, এমন এক স্থানে নিয়ে আসে, যা সরকারের কোন ভবন বা জনতা কাছ থেকে অনেক দুরে।
এই উদ্বাস্তু শিবিরের কিছু রক্তাক্ত বিদ্রোহের ইতিহাস রয়েছে, যখন ২০০৭ সালে ইসলামী জঙ্গী দল ফাতাহ আল ইসলাম-এর সাথে লেবাননের সেনাবাহিনীর সংঘর্ষ ঘটে। এই ঘটনায় ডজন খানেক লোক মারা যায়।
এই লড়াইয়ের সময় উদ্বাস্তু শিবিরের বেশ ক্ষতি হয়, এই সময় শত শত প্যালেস্টাইনী উদ্বাস্তুকে আশেপাশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হতে হয়, যার ফলে পাশের উদ্বাস্তু শিবির ও গ্রাম গুলো জনসংখ্যার চাপে পিষ্ট হতে থাকে।
ধীর গতিতে চলতে থাকা পুনর্গঠন প্রক্রিয়া আরেক বার ধাক্কা খায়, যখন এ বছরে আগস্টের ১৩ তারিখে লেবাননের সরকার প্রত্নতাত্ত্বিক কারণে এই পুনর্গঠন প্রক্রিয়া স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেয়।
নাহার এল বারেদ এর লড়াই বন্ধ হয়েছে দুই বছর আগে এবং শত শত ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তু এখনো ঘরছাড়া বাস করছে এবং এদের সাথে বেশ কিছু লেবাননী জনতা এই ঘটনায় হতাশ।
ব্লগস্ফেয়ার এই ঘটনার দ্রুত সাড়া দিয়ে প্যালেস্টাইনী উদ্বাস্তু শিবির নাহার এল বারেদর অধিবাসীদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে এক নতুন ব্লগ তৈরি করেছে ।
তথ্যমুলক ম্যাপ এবং উদ্বাস্তু শিবির পুর্নগঠনের জন্য সাথে সাথে পাওয়া তথ্য এই নতুন ব্লগে নাহার আল বারেদ পাওয়া যাবে। এটাই ব্লগার বলতে চেয়েছে এই উদ্বাস্তু শিবিরের পুনর্গঠন কাজ বন্ধ করার ব্যাপারে:
এই ঘটনাটি ঘটল দুই বছর ধরে আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া কারণে ঝুলে থাকার পর, যেখানে প্রত্যেকটি ছিল পুনর্গঠন এর বিষয়ে যার মধ্যে ছিল প্রধান কাজের জন্য পরিকল্পনা ও নকশা নির্ধারণ, যার জন্য সরকারী, মন্ত্রী পর্যায় এবং রাজনৈতিক অনুমোদন প্রয়োজন ছিল। বিশেষত এই প্রথম, কাজ শুরুর সময় একটি কাজকে স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হল, যখন ২০,০০০ প্যালেস্টাইনী উদ্বাস্তু লম্বা সময় ধরে এলাকা ছাড়া।
ব্লগারদের এই বিষয়টি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে, মলোখেইয়া রেজিসট্যান্স:
নাহার এল বারেদ উদ্বাস্তু শিবির ধ্বংস হবার দুই বছর পর তার অধিবাসীরা শুনে আনন্দিত হয়েছিল যে পুনর্গঠন পরিকল্পনা প্রায় বাস্তবে রূপ নিতে যাচ্ছে। যখনই তা শুরু হবার কথা তখনই লেবাননের সরকার নাহার এল বারেদের পুনর্গঠন প্রক্রিয়া আবার স্থগিত ঘোষণা করল!!!
টুইটাররাও এই ঘটনায় সাড়া দিয়েছে, তারা পুনরায় টুইট করেছে এবং নাহার এল বারেদ উদ্বাস্তু শিবিরের দুর্দশার বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করছে।
@লিলডালাল আরটি@মার্সিনিউম্যান নতুন ব্লগ নাহার এল বারেদের পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার সম্বন্ধে জানাবে(অথবা পুনর্গঠনের ঘাটতি সম্বন্ধে)এইচটিটিপি://আলবারেদ.ওয়ার্ডপ্রেস.কম/
@মার্সিনিউম্যান নতুন ব্লগ নাহার এল বারেদের পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার সম্বন্ধে জানাবে(অথবা পুনর্গঠনের ঘাটতি সম্বন্ধে) এইচটিটিপি://অআলবারেদ.ওয়ার্ডপ্রেস.কম/
@এমএক্সএমএল আরটি @এনমোয়াদ আরটি @তামারাকিবালউই, নতুন ব্লগ, তথ্য+ নাহার এল বারেদের পুনর্গঠন দাবী করছে, আলবারেদ.ওয়ার্ডপ্রেস.কম
@এনমোয়াদ আরটি @তামারাকিবালউই, নতুন ব্লগ, তথ্য+ নাহার এল বারেদের পুনর্গঠন দাবী করছে, আলবারেদ.ওয়ার্ডপ্রেস.কম
@নাসাউইয়া আরটি @তামারাকিবালউই, নতুন ব্লগ, তথ্য+ নাহার এল বারেদের পুনর্গঠন দাবী করছে, আলবারেদ.ওয়ার্ডপ্রেস.কম
@তামারাকিবালউই, নতুন ব্লগ, তথ্য+ নাহার এল বারেদের পুনর্গঠন দাবী করছে, আলবারেদ.ওয়ার্ডপ্রেস.কম
Bangladesh Genocide Archive
বাংলায় আগ্রাসন: আমাদের অবশ্যই যা করতে হবে
রেগ প্রেন্টিস
দি সানডে টাইমস, ১১ জুলাই, ১৯৭১
অনুবাদ: ফাহমিদুল হক
[মি. প্রেন্টিস হলেন সংসদীয় একটি দলের সদস্য যারা সম্প্রতি পূর্ব ও পশ্চিম উভয় পাকিস্তান সফর করেছেন।]
রাজনৈতিক সমাধান ছাড়া যে-পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তাতে পরিস্থিতি কেবল খারাপই হতে পারে। এটা পাকিস্তান এবং ভারত উভয়ের জন্যই প্রযোজ্য। পূর্ব পাকিস্তানে অবশ্য চরম নিষ্ঠুরভাবে দমন-পীড়ন চালিয়ে যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই, কারণ [...]
সম্পাদকীয়: হত্যা বন্ধ কর
দি সানডে টাইমস, ১৩ জুন, ১৯৭১
অনুবাদ: ফাহমিদুল হক
পূর্ব-পাকিস্তান সম্পর্কিত একটি আর্টিকেলের জন্য মধ্য-পাতার পুরোটা ব্যয় করে সানডে টাইমস একটি ব্যতিক্রমী ও দায়িত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। আমরাই প্রথম এটি করেছি, কারণ পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার তার প্রদেশ পূর্ব পাকিস্তানে কী করছে, এটি ছিল তার ওপরে পূর্ণমাত্রায় বিশ্বাসযোগ্য, বি¯তৃত এবং প্রত্যক্ষদর্শীর রিপোর্ট। দ্বিতীয়ত, মিলিয়ন মিলিয়ন উদ্বাস্তু কী থেকে পালিয়ে [...]
কীসের জন্য তারা পালিয়ে গেল?
দি ইকোনমিস্ট, ১২ জুন, ১৯৭১
কলকাতা থেকে আমাদের বিশেষ প্রতিনিধির পাঠানো রিপোর্ট
অনুবাদ: ফাহমিদুল হক
'আমাদের জনসংযোগের যন্ত্র প্রস্তুত ছিল না। আমাদের সেনাবাহিনীর জনসংযোগ-কর্মকর্তারা ২৫ ও ২৬ মার্চে ঢাকায় ছিলেন না, এবং আমরা অবশ্যই সেখানে বিদেশী প্রতিনিধিদের সঙ্গে একটা ভুল করেছিলাম।' একজন সিনিয়র পশ্চিম পাকিস্তানি কূটনীতিক এভাবে স্বীকার করলেন যে পূর্ব পাকিস্তানকে তার সরকার যেভাবে মোকাবেলা করেছে তা [...]
বাংলায় মহামারি
দি টাইমস, ৬ জুন, ১৯৭১
অনুবাদ: ফাহমিদুল হক
দিনাজপুর সীমান্তে একটি উদ্বাস্তু-শিশু কলেরায় মারা গেল। সীমান্ত-শিবিরগুলোতে এর সংখ্যা ইতোমধ্যে পাঁচ হাজারে উন্নীত হয়েছে। মানচিত্রে প্রদর্শিত উদ্বাস্তুর সংখ্যা থেকে বোঝা যায় আক্রান্তের সংখ্যা মহামারি আকারে অচিন্তনীয় পর্যায়ে পৌঁছে যাবে। কলকাতার লাখ লাখ উদ্বাস্তুকে আঘাত করার জন্য কলেরা খুব দূরে অবস্থান করছে না। গডফ্রে হসন-এর রিপোর্ট।
এক সপ্তাহ আগে বাংলায় [...]
ইয়াহিয়ার শিকার শেষ কয়েক লক্ষ
দি গার্ডিয়ান, ৫ জুন, ১৯৭১
সম্পাদকীয়
পূর্ব-পাকিস্তানের হতভাগ্য লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রতি আন্তর্জাতিক সমর্থন খুব দেরিতে এসেছে। রাজনীতি, আমলাতন্ত্র ও দমননীতি ভারতের হৃদয়বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি করেছে — যেন ভারতের নিজেরই এধরনের সমস্যা নেই — তাকে একাই ৪০ লক্ষ উদ্বাস্তুর দেখাশোনা করতে হচ্ছে। অনেকের জন্য কলেরা হলো দুর্যোগের চতুর্থ ধাপ –এর আগে তাদের ভাগ্যে ছিল তিন দুর্যোগ: গত [...]
No comments:
Post a Comment