‘সংকট উত্তরণের চাবিকাঠি একমাত্র শেখ হাসিনার হাতে’
আগুনে মানুষ পুড়িয়ে মারা ঘৃণ্য কাজ
চলমান রাজনীতি, সরকার ও রাষ্ট্র প্রসঙ্গে সম্প্রতি প্রোবের মুখোমুখী হয়েছিলেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তাঁর সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেন আনোয়ার পারভেজ হালিম।
উন্নয়ন ও গণতন্ত্র: কিউবা, আয়ুব খান ও এরশাদ মডেল
গত বছরজুড়ে দেশে শান্তি বিরাজ করছিল, এতে করে দেশও উন্নতির পথে এগুচ্ছিল। কিন্তু বিএনপির কারণে সব শান্তি বিনষ্ট হচ্ছে, তারা নাশকতা সৃষ্টি করে দেশকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে- সরকারের এই দাবির উত্তর দিতে গিয়ে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী শুরুতেই কিউবার উদাহরণ টেনে বললেন, আমি প্রায়ই এটা বলে থাকি যে, উন্নয়ন যদি কেউ দেখতে চান, তাহলে তাকে কিউবায় যেতে হবে। শিক্ষা স্বাস্থ্যসহ যে কোন সেকটরে তারা অকল্পনীয় উন্নয়ন করেছে। আশির দশকে তারা দেখিয়ে দিয়েছে যে, শত শত পোড়া রোগীর চিকিৎসা কিভাবে করতে হয়। প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সব শিক্ষা ফ্রি। শতকরা ১০০ ভাগ লোকের জন্য চাকরি নিশ্চিত করা হয়েছে। ওভার স্টাফ হলে বসিয়ে বসিয়ে বেতন দেওয়া হয়। সবার জন্য ট্রান্সপোর্ট ফ্রি। এসব আমার দেখার সৌভাগ্য হয়েছে। কিন্তু তারপরও কিউবা থেকে মানুষ পালিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যায়। কেন যায়? কারণ, সেখানে একদলীয় শাসনব্যবস্থা। একদলকেই ভোট দিতে হচ্ছে- যেটা মানুষের পছন্দ নয়। মোদ্দা কথা কিউবায় গণতন্ত্র নেই। সুতরাং আমি বলতে চাচ্ছি, উন্নয়ন হলেই যে মানুষ সুখে-শান্তিতে থাকবে একথা ঠিক নয়।
গত বছরজুড়ে দেশে শান্তি বিরাজ করছিল, এতে করে দেশও উন্নতির পথে এগুচ্ছিল। কিন্তু বিএনপির কারণে সব শান্তি বিনষ্ট হচ্ছে, তারা নাশকতা সৃষ্টি করে দেশকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে- সরকারের এই দাবির উত্তর দিতে গিয়ে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী শুরুতেই কিউবার উদাহরণ টেনে বললেন, আমি প্রায়ই এটা বলে থাকি যে, উন্নয়ন যদি কেউ দেখতে চান, তাহলে তাকে কিউবায় যেতে হবে। শিক্ষা স্বাস্থ্যসহ যে কোন সেকটরে তারা অকল্পনীয় উন্নয়ন করেছে। আশির দশকে তারা দেখিয়ে দিয়েছে যে, শত শত পোড়া রোগীর চিকিৎসা কিভাবে করতে হয়। প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সব শিক্ষা ফ্রি। শতকরা ১০০ ভাগ লোকের জন্য চাকরি নিশ্চিত করা হয়েছে। ওভার স্টাফ হলে বসিয়ে বসিয়ে বেতন দেওয়া হয়। সবার জন্য ট্রান্সপোর্ট ফ্রি। এসব আমার দেখার সৌভাগ্য হয়েছে। কিন্তু তারপরও কিউবা থেকে মানুষ পালিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যায়। কেন যায়? কারণ, সেখানে একদলীয় শাসনব্যবস্থা। একদলকেই ভোট দিতে হচ্ছে- যেটা মানুষের পছন্দ নয়। মোদ্দা কথা কিউবায় গণতন্ত্র নেই। সুতরাং আমি বলতে চাচ্ছি, উন্নয়ন হলেই যে মানুষ সুখে-শান্তিতে থাকবে একথা ঠিক নয়।
তিনি বলেন, উন্নয়ন তো আইয়ুব খানও করেছিলেন। এরশাদ সাহেবও উন্নয়ন করেছিলেন। তাকে কেন খেদিয়েছিলাম আমরা। তিনি উপজেলা করেছিলেন। ওষুদনীতি করেছিলেন, রাস্তাঘাটের ব্যাপক উন্নয়ন করেছিলেন, এসব তো কোনটাই খারাপ ছিল না। বর্তমান সময়ের তুলনায় বরং এরশাদ বিচার ব্যবস্থার উপর কম হস্তক্ষেপ করতেন। প্রাথমিক শিক্ষা ফ্রি করে দিয়েছিলেন। এতো উন্নয়নমূলক কাজ করার পরও মানুষ ব্যক্তি এরশাদকে পছন্দ করেনি বলে তাকে উৎখাত করেছে। কারণ, তিনি জনগণের অধিকার হরণ করেছিলেন। জোর জবরদস্তি করে ক্ষমতা আঁকড়ে ছিলেন।
সবাই বোকা, একমাত্র চালাক হাসিনা এবং তার অনুগতরা!
এসবের সঙ্গে বর্তমান সরকারের সামঞ্জস্য কোথায়, বর্তমান সরকারের আমলে মানুষের অধিকার হরণের কী কোন উদাহরণ আছে? এমন প্রশ্নের জবাবে জাফরুল্লাহ বলেন, একথা কে না জানে যে, ৫ জানুয়ারি বাংলাদেশে চানক্যপন্ডিতের ফর্মুলায় একটি নির্বাচন হয়েছে, যেখানে ১৫৩টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়, বিনা ভোটে এমপি হয়েছেন। পৃথিবীর কোন দেশের ইতিহাসে কী এমন উদাহরণ দ্বিতীয়টি পাওয়া যাবে! কেউ কেউ অবশ্য বলেন যে, নির্বাচনে অংশ না নিয়ে বিএনপি বোকামি করেছে। তাহলে আমার প্রশ্ন, ড. কামাল হোসেন কী বোকামি করেছেন, কাদের সিদ্দিকী কী বোকামি করেছেন, সিপিবি, বাসদ, মান্না এরাও কী বোকামি করেছে? সবাই বোকা হয়ে গেল, আর একমাত্র চালাক ব্যক্তি হলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার অনুগত ব্যক্তিরা!
জাফরুল্লাহ বলেন, তবে হ্যাঁ, শেখ হাসিনা বলেছিলেন, সংবিধানের ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্যই তাকে এ নির্বাচনটি করতে হয়েছে। সেক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা রক্ষার নির্বাচনের পরপরই তাদের উচিৎ ছিল সব দলের অংশগ্রহণে আরেকটি নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। তারা সেটা করেনি। তাহলে দেখা যায়, দেশের বর্তমান সমস্যা কিন্তু এই সরকারই সৃষ্টি করেছে। এখন প্রতিদিনই ব্যবসায়ীদের কান্নাকাটি করতে দেখছি। অবশ্যই দুঃখজনক- কারণ, ব্যবসা-বাণিজ্যের চরম ক্ষতি হচ্ছে। প্রতিদিন কয়েকশ’ কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে। অথচ, এই সেই ব্যবসায়ী সমাজ, যারা গার্মেন্টস শ্রমিকদের মাত্র ৩০০টাকা বেতন বাড়াতে চায়নি।
ব্যবসায়ীরা রাস্তায় নামছে। শিক্ষক- শিক্ষার্থীরাও রাস্তায় নেমেছে। আবার সরকার বলছে দেশ স্বাভাবিক চলছে। এ প্রসঙ্গে জাফরুল্লাহ বলেন, আয়ুব খান ও ইয়াহিয়া খানওতো একই কথা বলেছিল। সবদেশে শাসকগোষ্ঠি সবসময় বলে থাকে সবকিছু ঠিক চলছে। তারা চশমা পড়ে থাকে। দেখতে পায়না। সবই যদি ঠিক থাকে, তাহলে প্রতিদিন আগুনে মানুষ পুড়ছে কী করে। আগুনে মানুষ পুড়িয়ে মারা ঘৃণ্য কাজ। আমি এই জঘন্য কাজকে ঘৃনা করি। এ কাজকে কনডেম করছি। সাধারণ মানুষ পুড়ে মরছে- অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এ সবই কী বিরোধী দল করছে? সবই কী সরকারি দল করছে? নাকি অন্য কেউ সুযোগ নিচ্ছে? তারপর কথায় কথায় বন্দুক যুদ্ধে নিহতের ঘটনা ঘটছে। এটা কী ধরনের আইনের শাসন? এখন আবার শুরু হয়েছে হার্ট এ্যাটাক। বিডিআর বিদ্রোহের পরও দেখেছি, এ ধরনের হার্ট এ্যাটাকের সংখ্যা বেড়ে গিয়েছিল-এসব ঘটনা প্রশ্নবোধক হয়ে থাকবে।
বিরোধীদলের মূল দাবি একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন- এটি তো একটি রাজনৈতিক দাবি। কিন্তু সরকার এই দাবিকে গুরুত্ব না দিয়ে পরিস্থিতিকে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হিসেবেই চিন্থিত করছে। সরকার সমর্থিত বুদ্ধিজীবীসহ বিভিন্ন পেশাজীবীরাও একই সুরে কথা বলছেন। আপনিও ঠিকই তা-ই মনে করেন কীনা?
জাফরুল্লাহ চৌধুরীর জবাব- এটা হচ্ছে মূল ইস্যুকে পাশ কাটানোর অপকৌশল। মূল ইস্যুটা কিন্তু রাজনৈতিক। মূল ইস্যু হচ্ছে মানবিক এবং অধিকারের।
জাফরুল্লাহ চৌধুরীর জবাব- এটা হচ্ছে মূল ইস্যুকে পাশ কাটানোর অপকৌশল। মূল ইস্যুটা কিন্তু রাজনৈতিক। মূল ইস্যু হচ্ছে মানবিক এবং অধিকারের।
সংবিধানের দোহাই দেয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে যদি বলতে যাই তবে একটার পর একটা মামলা দেবে। কিন্তু সংবিধান এক ব্যক্তিকেই সব দায়িত্ব দেবে- এটা কী কোন কথা হতে পারে?
মুক্তিযুদ্ধ, সংবিধান এবং একজন বিচারকের রায়
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ কী কখনো একব্যক্তিকে দিয়ে হয়! সেখানে লক্ষ লক্ষ ব্যক্তির আত্মদান রয়েছে। সরাসরি যুদ্ধে হয়তো এক/দেড়লাখ লোক অংশগ্রহণ করেছে। কিন্তু এর বাইরে তো কোটি কোটি লোকের সাহায্য সহযোগিতা রয়েছে। অথচ দেখুন, সংবিধানে তাজউদ্দীন আহমেদের নাম নেই। ওসমানীর নাম নেই। জিয়াউর রহমানের নাম নেই। জিয়া ছাড়াও আরো কয়েকজন সেক্টর কমান্ডার ছিলেন। খালেদ মোশাররফ, এটিএম হায়দারসহ কারোরই নাম নেই। সংবিধানে যদি নাম দিতেই হয়- তবে যারা আত্মদান করেছে, প্রত্যেকের নাম পরিশিষ্ট হিসেবে যাওয়া উচিৎ। প্রত্যেক পাড়া মহল্লায় শহীদদের নাম ফলক থাকা উচিৎ- যাতে করে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তাদের স্মরণ করতে পারে। আমি দুঃখিত বলতে বাধ্য হচ্ছি, আমাদের জজ সাহেবরা সংবিধানকে কোরআন শরীফ বানিয়ে ফেলেছেন। আমি বলতে চাচ্ছি যে, রাজনীতির ইস্যুকে রাজনীতি দিয়েই আমাদের মোকাবেলা করা উচিৎ। সব কিছুতে আদালতকে টেনে আনা ঠিক নয়। কোন দেশের জন্যই একটা মিডটার্ম ইলেকশন করা অন্যায় কিছু নয়।
জাফরুল্লাহ চৌধুরী আরো বলেন, তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা তুলে দিলো। আমরা জানি যে, তৎকালীন সরকারী দল আওয়ামী লীগের সংখ্যাগরিষ্ঠ ব্যক্তিরাও তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার পক্ষে ছিলেন। অথচ জজ সাহেব একটা রায় দিয়ে দিলেন, সেই রায় লিখতে নাকি তার ১৬ মাস লেগেছে, বিচার তো তার হওয়া উচিৎ। বিচার বিভাগ জুড়েও নৈরাজ্য চলছে।
এতোদিন শুধু জামায়াতকেই জঙ্গী ও সন্ত্রাসী দল বলা হতো, এখন বিএনপিকেও একই কাতারে ফেলার চেষ্টা হচ্ছে। এর নেপথ্যে বিশেষ কোন উদ্দেশ্য রয়েছে বলে মনে করেন কীনা? এ প্রশ্নের উত্তরে ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, আমি ষড়যন্ত্র থিওরিতে কম বিশ্বাস করি। তবে বিদেশীদের একটা জঙ্গী ভীতি রয়েছে। কারণ, বিদেশীরাই জঙ্গী তৈরি করেছে। তালেবান থেকে শুরু করে সব জঙ্গীই আমেরিকানদের সৃষ্টি।
সুতরাং তাদের জঙ্গী ভীতি আছে। আর বাংলাদেশ সরকারের ব্যাপারটা ভিন্ন। তারা অনৈতিকভাবে ক্ষমতায় থাকার জন্য যুক্তি দাঁড় করিয়েছে যে, এখানে জঙ্গী সংগঠনের উত্থান হয়েছে। একারনেই এতোদিন জামায়াতকে জঙ্গী বলা হলেও এখন বিএনপিকেও তারা জঙ্গী বলছে। সরকার এ ব্যাপারে মোটেও বুদ্ধির পরিচয় দিচ্ছে না। সরকারের বোঝা উচিৎ, কিছু লোককে কিছুদিনের জন্য বোকা বানানো যাবে, কিন্তু সব মানুষকে তো সর্বকালের জন্য বোকা বানানো যাবে না।
বাকশাল গঠন করে মুজিব ভুল করেছিলেন
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মতে, পচাঁত্তরে শেখ মুজিব বাকশাল গঠন করে ভুল করেছিলেন। অনেকেই বলে থাকেন যে, তখন সিবিপির মনি সিং-রা শেখ মুজিবকে পরামর্শ দিয়ে বাকশালের দিকে ধাবিত করেছিলেন। তিনিও আজীবন রাষ্ট্রপতি থাকার জন্য কয়েক মিনিটের মধ্যে সংবিধান পাল্টে বাকশাল কায়েম করেছিলেন। অথচ তিনি ছিলেন আমাদের সবচেয়ে প্রিয় একজন নেতা। তাঁর অবিস্মরণীয় অবদান আছে। তিনি যখন ভুল কাজটি করলেন, হাততালি দিয়ে মাথা নীচু করে সবাই মেনে নিলো। হাতে গোনা কয়েকজন বাকশালে যোগদান করে নি, আমিও ছিলাম তাদেরই একজন। মুজিব মারা যাওয়ার আগের দিন আমাকে ডেকে নিয়ে বাকশালে জয়েন করানোর চেষ্টা করেছিলেন। আমি জয়েন করিনি।
ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, আজকেও সরকার উন্নয়নের কথা বলে সবাইকে একদলের দিকে নিতে চাচ্ছেন। বিরোধিতা করার তো লোক নেই। বাজিকরের মতো এরশাদ সাহেব কি করছেন- তা উনিই জানেন। ওনাকে যেভাবে দাঁড় করিয়ে দেয়া হয়েছে, উনি সেভাবেই চলছেন।
রাজনীতিতে শালীনতা- অশালীনতা প্রসঙ্গে এই প্রবীণ ও সিনিয়র নাগরিক বলেন, আমাদের জন্য অত্যন্ত দুভার্গ্য যে, আমরা ঐতিহ্য ধরে রাখতে পারছি না। অথচ একটা সময় ছিল যে, আমরা সব সময় মুরব্বীদের দেখলে সালাম দিতাম। বাড়িতে শিশুদের শোখানো হতো বয়জেষ্ঠ্য কাজের লোকদেরকে তুমি নয়, আপনি বলতে হবে। আসলে একটা দেশে যখন জবাবদিহিতা থাকেনা, গণতন্ত্র থাকেনা, তখন আর শালীনতা কি করে আশা করা যাবে। কেবল উন্নয়নের দাবি করলে হবে না। মানুষের অধিকারেরও উন্নয়ন করতে হবে। দেশে সুষ্ঠু ও সব দলের অংশগ্রহণে একটা নির্বাচন দিতে হবে।
বলা হয়ে থাকে যে, দেশের মানুষ এখন দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে, কি কারণে এমন হলো, কখন থেকে বিভক্তির শুরু হলো? এ প্রসঙ্গে জাফরুল্লাহর বক্তব্য হলো- এটার শুরু হয়েছিল মানুষকে কথা বলতে না দেয়ার কারণে। বিষয়টা বুঝতে হলে ইতিহাসের পেছনের দিকে ফিরে যেতে হবে। স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে দেশে প্রথম নির্বাচন হয়েছিল। আজকের বিএনপি নেতা ও সাবেক মন্ত্রী মেজর (অব) হাফিজউদ্দীনের বাবা ছিলেন একজন ডাইহার্ট আওয়ামী লীগার। পেশায় চিকিৎসক ছিলেন- আমি তাকে চিনতাম। স্বাধীনতার পর তিনি জাসদের রাজনীতিতে যোগ দিয়েছিলেন। ভোলার একটি আসন থেকে ওই নির্বাচনে তিনি জাসদের প্রার্থী হলেন। ভদ্রলোক অসম্ভব জনপ্রিয় ছিলেন। তাকে হারানো মুশকিল ছিল। তখন তাকে হারানোর জন্য শেখ মুজিব ভোলায় গিয়ে তার বিরুদ্ধে নির্বাচন করলেন। হাফিজের বাবা হেরে গেলেন- মুজিব ভাই জিতলেন। সারা দেশে জাসদ ১০টি আসনও পেল না- কেন? সেই নির্বাচনের ইতিহাস অনেকে জানেন, আর যারা জানেন না, তাদেরকে ইতিহাসের পাতায় চোখ বুলাতে বলবো।
তারপর খোঁজ নিয়ে দেখুন শেখ মুজিব পার্লামেন্টে কয়দিন গিয়েছেন। ৩রা জানুয়ারি ১৯৭৫ সালে সংসদে দাঁড়িয়ে উনি কী বলেছিলেন। উনি বললেন- কোথায় আজ সিরাজ সিকদার। এটা কিন্তু উনার ঐতিহাসিক বক্তৃতা। ৭ মার্চের ভাষণ যেমন ঐতিহাসিক এবং দেশ কাঁপানো বক্তৃতা, তেমনি কোথায় গেল সিরাজ সিকদার- এটাও মুজিবের এতিহাসিক ভাষণ। ২৪ জানুয়ারি, মাত্র কয়েক মিনিটে দেশে বাকশাল প্রবর্তন করা হয়েছিল। জাতির বিভক্তির শুরু তো তখন থেকেই। ৪টি রেখে সব সংবাদপত্র বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। তখনও এসব করা হয়েছিল উন্নয়নের নামে। আমি মনে করি, শুরুটা তখনই হয়েছিল- এখন সেটা ব্যাপক আকারে সরাসরি প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে।
গণতন্ত্রে জবরদস্তির স্থান নেই
আপনি কী দিয়ে ভাত খাবেন, আপনি ডানে যাবেন নাকি বাঁয়ে যাবেন - সেটা তো সরকার ডিক্টেট করতে পারে না। তাহলে তো আর গণতন্ত্র থাকে না। সরকার একদিকে বলছে বিএনপিকে জামায়াত ছাড়তে হবে। অথচ ইচ্ছা করলে সরকার কিন্তু জামায়াতকে ব্যান্ড করতে পারে- কিন্তু তারা সেটা করছে না। কেন করছে না সেটা তারাই ভাল বলতে পারবেন। তবে আমি মনে করি, এক্ষেত্রেও সরকার চালাকির আশ্রয় নিয়েছে। দোষটা কেবল বিএনপির ঘারে চাপাতে চাইছে।
এই অচলাবস্থা চলতে থাকলে দেশের ভবিষ্যৎ কী? এই সংকট থেকে মানুষের মুক্তির উপায় কী? প্রকৃত গণতন্ত্র না আসা পর্যন্ত, সুষ্ঠু নির্বাচন পদ্ধতি না আসা পর্যন্ত, দুর্নীতি না কমা পর্যন্ত, আমাদের শান্তি আসবে না। এর একটা ফয়সালা হওয়া উচিৎ। পৃথিবীর ধর্মই হচ্ছে পরিবর্তনশীল। সুতরাং আমার বিশ্বাস ফয়সালা হবেই। বোমা মারা কিংবা পুড়িয়ে মানুষ মারা যেমন বন্ধ করতে হবে। তেমনি পুলিশ- বিজিবি যে রাজনৈতিক কর্মীর মত ব্যবহার করছে- সেটাও বন্ধ করতে হবে।
হোয়াট এ শেম!
শিক্ষা ব্যবস্থার দুঃখজনক পরিণতির কথা উল্লেখ করে ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, ১৫ লাখ শিক্ষার্থী সঠিক সময়ে পরীক্ষা দিতে পারছে না, এটা দুঃখজনক । তবে আরেকটা দিক লক্ষ্য করুন, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ শিক্ষার বারোটা বাজিয়েছেন। গন্ডায় গন্ডায় জিপিএ ফাইভ দেয়া হচ্ছে। টেলিফোন করে নম্বর বাড়িয়ে দেয়ার জন্য নির্দেশের কথাও শোনা যায়। নাহিদ সাহেব এতো বেশি জিপিএ ফাইভ দিয়েছেন যে, ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি পরীক্ষা দিতে এসে পাশ করেছে মাত্র দুই জন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যখন এ নিয়ে প্রশ্ন তুলল, তখন তো শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ করা উচিৎ ছিল। আবার দেখুন, সেখানে মাদরাসা ছাত্ররা ঠিকই উত্তীর্ন হচ্ছে।
হোয়াট এ শেম! আরো লজ্জাকর হলো তাদেরকে ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হতে দেয়া হচ্ছে না। আমার কথা হচ্ছে, মাদরাসাকে আধুনিক করো। তাদেরকে বাংলাদেশের ইতিহাস শেখাও। তা না করে তাদের পড়তে দেয়া হবে না। এ কোন যুক্তি!
দু’পক্ষকেই বোমাবাজি ও প্রাণহানি বন্ধ করতে হবে
বিরাজমান অচলাবস্থা থেকে উত্তোরনের কী কোন উপায় নেই? জানতে চাইলে ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, অবশ্যই উত্তোরণের উপায় আছে। সমস্যা সমাধানের চাবিকাঠি একমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে। তিনি যদি নমনীয় হন তবে এই অবস্থা দূর করা সম্ভব। আর তা যদি না হয়, তবে ইতিহাসের নিজস্ব একটা গতি আছে, সে পথেই যাবে।
জাফরুল্লাহ আরো বলেন, আমি মনে করি, খালেদা জিয়াকে বলতে হবে যে, অবরোধে গুলি ও বোমাবাজি থাকবে না। সঙ্গে সঙ্গে ওনাকে সরকারের প্রতিও আপিল করতে হবে যে, সরকারও যেন বোমাবাজি না করে। ওনাকে আপিলটা করতে এরকম যে, অবরোধ চলবে- তবে কোন প্রাণহানি ঘটবে না। খালেদা জিয়া রাস্তায় বেরিয়ে বলতে পারেন- আপনারা গাড়ি চালাবেন না, হেটে যান। সন্ত্রাসবিহীন অবরোধের কথা তিনি বলতে পারেন। তিনি জনগণের উদ্দেশ্যেও বলতে পারেন, আপনারা লক্ষ্য রাখবেন সরকার যেন গুলি করে মানুষ হত্যা না করতে পারে। বোমাবাজি করতে না পারে।
খালেদা জিয়ার উদ্দেশ্যে জাফরুল্লাহ বলেন, হুকুমের আসামী হয়ে জেলে গিয়ে মরার চেয়ে ওনার রাস্তায় বেরিয়ে মরা ভাল। অবশ্য, দু’পক্ষকেই বোমাবাজি ও প্রাণহানি বন্ধ করতে হবে। #
No comments:
Post a Comment