By Sushanta Kar
আপনি যদি ভারতের ইতিহাস পড়েন, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই স্কুল কলেজ পাঠ্য ইতিহাস বই রাজাদের কাহিনিতে ভরা। আর সেই রাজায় রাজায় যুদ্ধ লেগেই থাকত। যুদ্ধ না করে কোনো রাজার নিরাপদের থাকবার উপায় বলে কিছু ছিল না। কিন্তু যুদ্ধ বাদ দিলে সেই রাজারা দেবদ্বিজে খুব ভক্তি দেখাতেন। যিনি যত বিপদে পড়তেন তাঁর ভক্তি তত বেশি। যারা যত বেশি ধার ঋণ, তার তত বেশি দান দক্ষিণা প্রীতি। আপনার মনে হবে, আহা! এই না হলে ভারত! দেখো কত মহান দেশ ভারত। নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ বিগ্রহ করলেও পরের দেশ দখল করতে যায় নি, আর সময় পেলেই দান ধর্মে ব্যস্ত থেকেছেন। ---সত্য হলো উত্তরে হিমালয় টা যদি না থাকত এরা চীন দেশে গিয়েও জমি দান করা যায় কিনা তার জন্যে জীবন পাত করে মরত। দরকারে তার জন্যে যুদ্ধও করত। হিমালয় তা করতে দেয় নি, তাতেই হিন্দুত্ববাদীরা গৌরব করে দেখো, ভারত কখনো পররাজ্য আক্রমণ করে নি। এই কথা বলবার সময় অবশ্য ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়াতে সাম্রায্য বিস্তার কাহিনি গোপন করে রাখেন। এই 'দান' ব্যপারটিই হচ্ছে উদ্বৃত্ব আহরণের অপূর্ব এবং অদ্ভূৎ ভারতীয় কূটকৌশল। আর তাই তুর্ক কিম্বা মোঘল সুলতানেরাও ব্রাহ্মণে জমি দান করতে কোনোদিনই সামান্যও কার্পণ্য করেন নি। দানের আগে এককালীন খাজনা পাতি বুঝে নিতেন বলেই দান জিনিসটি হতো খুব লাভ জনক। এর পরে রাজস্ব আদায়ের অধিকার দানগ্রহীতা নিজে পেয়ে যেতেন। তিনি কৃষির বিস্তার ঘটাতেন, বসতি বাড়াতেন---অর্থনীতি সমৃদ্ধ হতো। রাজা আশা করতেন,তাতে তার অন্য পথে রাজস্ব বাড়বে। প্রায়ই ব্যুমেরাং হতো। এই দানপ্রাপ্তরাই যেহেতু গড়ে তুলেছিল ভারতীয় সামন্ত ব্যবস্থা, তাই তারা বা তাদের উত্তরাধিকারীরাই ক্রমে সেই উপরের রাজা বা সম্রাটকেই ক্ষমতাচ্যুত করে দিতেন। বাংলাদেশে সেনব্রাহ্মণ বংশের উত্থানও এই পথে। পতনও এই পথে...। তো দান দক্ষিণা করেও যুদ্ধ কিম্বা রক্তপাত আটকাতে কোনোদিন পারেনি কোনো ভারতীয় রাষ্ট্রগুলো।
No comments:
Post a Comment