মহম্মদ মহসিন
উলুবেড়িয়া: চোখের জল বাঁধ মানতা না মায়ের৷ মেয়েকে জন্ম দেওয়ার পর থেকেই একরত্তির জন্য নিত্য চোখের জল ফেলতেন মা৷ এ মেয়ের যে হাত দুটোই নেই!
মেয়ে অবশ্য এত সব পরোয়া করত না৷ বরং মায়ের মুখের দিকে তাকিয়েই মন শক্ত করত৷
মা যত চোখের জল ফেলতেন, দাঁতে দাঁত চেপে তত জেদ চাপত মেয়ের মনে-- বড় হতেই হবে৷ আর পাঁচ জন সহপাঠীর সঙ্গে বিস্তর ফারাক কমিয়ে আনতে পায়ে পেন তুলে নিয়েছিল সুভদ্রা৷ ধাপে ধাপে প্রাথমিক, মাধ্যমিকের গণ্ডি পার৷ হাত নেই তো কী হয়েছে! হার না মানা ইচ্ছাশক্তির পুঁজিটা তো ছিল৷ সেটা সম্বল করেই চোয়াল শক্ত করে এগিয়ে চলা৷ উচ্চমাধ্যমিকেও সফল হয়ে আজ কলেজের দোরে হাওড়া উলুবেড়িয়ার শ্রীরামপুর গ্রামের সুভদ্রা ভৌমিক৷ পা দিয়েই ভর্তির ফর্ম ফিল-আপ৷ শুক্রবার বাগনান কলেজের কলা বিভাগে ভর্তি হয়ে ১৯ বছরের সুভদ্রা বলছেন, 'আরও সিরিয়াস হয়ে পড়তে হবে৷ শিক্ষিকা হতে চাই বড় হয়ে৷'
মা ভবীরানি ভৌমিকের চোখ আজ ভেজা৷ তবে মেয়ের চিন্তায় নয়৷ এ অশ্রু আনন্দের৷ মা চেয়েছিলেন, আজন্ম প্রতিবন্ধকতা যেন মেয়ের জীবনে বাঁধা হয়ে না-দাঁড়ায়৷ সে জন্যই মেয়েকে সব শিখিয়েছেন, শুধু হাতের বদলে পা ব্যবহার করে৷ পেন ধরা থেকে শুরু করে কুয়ো থেকে বালতিতে জল তোলা, গেরস্থালির কাজকর্ম কিংবা চামচে করে খাওয়া-- সবই৷ প্রাইমারি স্কুলেও মেয়েকে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিলেন আর পাঁচটা ছেলেমেয়ে যে বয়সে স্কুলে যেতে শুরু করে, তখনই৷ তার পর বাগনানের ভূঞেড়া বিএনএস হাইস্কুলে৷ সেখান থেকেই মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক৷ সুভদ্রার বাবা প্রবোধবাবু বলছিলেন, 'ছোট থেকেই মেয়ের মনোবল দেখে অবাক হয়ে যেতাম৷ হাত নেই বলে সহপাঠীদের ব্যাঙ্গও সহ্য করতে হত ছোট্ট মেয়েটাকে৷ কিন্ত্ত ওর জেদ থেকেই যেন আমরাও বল পেয়ে গিয়েছিলাম বুকে৷'
বাবার সে বুক আজ আরও চওড়া৷ আটপৌরে বিষণ্ণ মুখটা আজ গাঁয়ের অন্যদের চেয়েও বেশি ঝলমলে৷ ক'জনই বা এতটা পারে? কলেজের মুখ তো অনেকেই দেখে না দু' হাত থাকার পরও৷ আর সুভদ্রার তো হাতেখড়ি হয়েছিল ডান পায়ে৷ সেখান থেকে বিএ ফার্স্ট ইয়ারের সফরটা যে নেহাত্ সহজ ছিল না, তা বলতে গিয়ে গর্ব ঝরে পড়ছে পড়শিদের গলায়৷ গর্বিত বাগনান কলেজের শিক্ষক-শিক্ষকারাও৷ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষা সোম মুখোপাধ্যায়ের কথায়, 'যাবতীয় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া হবে৷ এমনকী, ব্যক্তিগত ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে আর্জি জানাব যাতে পরীক্ষার সময়ে হোম সেন্টার পায় সুভদ্রা৷'
এতটা পথ হাঁটতে যে অকুণ্ঠ সমর্থন আর সাহায্য মিলেছে বেলুড় মঠ আর কাটালিয়ার আশাভবন সেন্টার নামের এক প্রতিবন্ধী পুনর্বাসন কেন্দ্রের, সে কথা বলতে গিয়ে চোখ ছলছল করে ওঠে সুভদ্রার৷ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন স্থানীয় টিউটোরিয়াল হোমের অধ্যক্ষ মোস্তাক আহমেদও৷ সুভদ্রার কলেজে পড়ার যাবতীয় ব্যয়ভার নিজেদের কাঁধে তুলে নিতে আগ্রহী তিনি৷ সুভদ্রার চোয়াল এখন আরও শক্ত৷ মায়ের চোখের জল মুছতে পেরেছে৷ এত শুভাকাঙ্ক্ষীর প্রত্যাশা এবার পূরণ করতে হবে যে৷
উলুবেড়িয়া: চোখের জল বাঁধ মানতা না মায়ের৷ মেয়েকে জন্ম দেওয়ার পর থেকেই একরত্তির জন্য নিত্য চোখের জল ফেলতেন মা৷ এ মেয়ের যে হাত দুটোই নেই!
মেয়ে অবশ্য এত সব পরোয়া করত না৷ বরং মায়ের মুখের দিকে তাকিয়েই মন শক্ত করত৷
মা যত চোখের জল ফেলতেন, দাঁতে দাঁত চেপে তত জেদ চাপত মেয়ের মনে-- বড় হতেই হবে৷ আর পাঁচ জন সহপাঠীর সঙ্গে বিস্তর ফারাক কমিয়ে আনতে পায়ে পেন তুলে নিয়েছিল সুভদ্রা৷ ধাপে ধাপে প্রাথমিক, মাধ্যমিকের গণ্ডি পার৷ হাত নেই তো কী হয়েছে! হার না মানা ইচ্ছাশক্তির পুঁজিটা তো ছিল৷ সেটা সম্বল করেই চোয়াল শক্ত করে এগিয়ে চলা৷ উচ্চমাধ্যমিকেও সফল হয়ে আজ কলেজের দোরে হাওড়া উলুবেড়িয়ার শ্রীরামপুর গ্রামের সুভদ্রা ভৌমিক৷ পা দিয়েই ভর্তির ফর্ম ফিল-আপ৷ শুক্রবার বাগনান কলেজের কলা বিভাগে ভর্তি হয়ে ১৯ বছরের সুভদ্রা বলছেন, 'আরও সিরিয়াস হয়ে পড়তে হবে৷ শিক্ষিকা হতে চাই বড় হয়ে৷'
মা ভবীরানি ভৌমিকের চোখ আজ ভেজা৷ তবে মেয়ের চিন্তায় নয়৷ এ অশ্রু আনন্দের৷ মা চেয়েছিলেন, আজন্ম প্রতিবন্ধকতা যেন মেয়ের জীবনে বাঁধা হয়ে না-দাঁড়ায়৷ সে জন্যই মেয়েকে সব শিখিয়েছেন, শুধু হাতের বদলে পা ব্যবহার করে৷ পেন ধরা থেকে শুরু করে কুয়ো থেকে বালতিতে জল তোলা, গেরস্থালির কাজকর্ম কিংবা চামচে করে খাওয়া-- সবই৷ প্রাইমারি স্কুলেও মেয়েকে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিলেন আর পাঁচটা ছেলেমেয়ে যে বয়সে স্কুলে যেতে শুরু করে, তখনই৷ তার পর বাগনানের ভূঞেড়া বিএনএস হাইস্কুলে৷ সেখান থেকেই মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক৷ সুভদ্রার বাবা প্রবোধবাবু বলছিলেন, 'ছোট থেকেই মেয়ের মনোবল দেখে অবাক হয়ে যেতাম৷ হাত নেই বলে সহপাঠীদের ব্যাঙ্গও সহ্য করতে হত ছোট্ট মেয়েটাকে৷ কিন্ত্ত ওর জেদ থেকেই যেন আমরাও বল পেয়ে গিয়েছিলাম বুকে৷'
বাবার সে বুক আজ আরও চওড়া৷ আটপৌরে বিষণ্ণ মুখটা আজ গাঁয়ের অন্যদের চেয়েও বেশি ঝলমলে৷ ক'জনই বা এতটা পারে? কলেজের মুখ তো অনেকেই দেখে না দু' হাত থাকার পরও৷ আর সুভদ্রার তো হাতেখড়ি হয়েছিল ডান পায়ে৷ সেখান থেকে বিএ ফার্স্ট ইয়ারের সফরটা যে নেহাত্ সহজ ছিল না, তা বলতে গিয়ে গর্ব ঝরে পড়ছে পড়শিদের গলায়৷ গর্বিত বাগনান কলেজের শিক্ষক-শিক্ষকারাও৷ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষা সোম মুখোপাধ্যায়ের কথায়, 'যাবতীয় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া হবে৷ এমনকী, ব্যক্তিগত ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে আর্জি জানাব যাতে পরীক্ষার সময়ে হোম সেন্টার পায় সুভদ্রা৷'
এতটা পথ হাঁটতে যে অকুণ্ঠ সমর্থন আর সাহায্য মিলেছে বেলুড় মঠ আর কাটালিয়ার আশাভবন সেন্টার নামের এক প্রতিবন্ধী পুনর্বাসন কেন্দ্রের, সে কথা বলতে গিয়ে চোখ ছলছল করে ওঠে সুভদ্রার৷ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন স্থানীয় টিউটোরিয়াল হোমের অধ্যক্ষ মোস্তাক আহমেদও৷ সুভদ্রার কলেজে পড়ার যাবতীয় ব্যয়ভার নিজেদের কাঁধে তুলে নিতে আগ্রহী তিনি৷ সুভদ্রার চোয়াল এখন আরও শক্ত৷ মায়ের চোখের জল মুছতে পেরেছে৷ এত শুভাকাঙ্ক্ষীর প্রত্যাশা এবার পূরণ করতে হবে যে৷
No comments:
Post a Comment