অর্থনৈতিক বৃদ্ধিতে 'রাহুল-দাওয়াই' |
নতুন আশা ও স্বপ্ন নিয়ে টগবগ করে ফুটছে নতুন ভারত। এই নতুন ভারত যার বেশিরভাগটা জুরেই আছে যুবসম্প্রদায় তাদেরকে সংঘবদ্ধ করতে হবে, তবেই ভারতের আত্মাকে সঠিক দিশায় বয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে বলে আশা করেন রাহুল গাঁধী। কংগ্রেসের সহ-সভাপতি পদে অভিষেকের পর আজ নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত সিআইআই-র বার্ষিক সাধারণ সভায় এসে তিনি আরও বলেন যে দেশের অর্থনৈতিক বৃদ্ধি ঘটাতে আশু প্রয়োজন পরিকাঠামোর উন্নয়ন। সেই উন্নয়ন ঘটাতে সরকারের সঙ্গে কর্পোরেট সেক্টরগুলিকেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। ভারতকে বিশ্বের মানবসম্পদের শ্রেষ্ঠ ভাণ্ডার বলে অভিহিত করে তিনি আরও বলেন চাকরির অপ্রতুলতা ভারতবর্ষে সমস্যা নয়, সমস্যা হল সঠিক হাতে-কলমে শিক্ষা ও দক্ষতার অভাব। দেশের উন্নয়ন ঘটাতে এইসব বাধাগুলিকে অবশ্যই সরাতে হবে,প্রযোজন নিরপেক্ষ সরকারের। সেই সরকার গঠনে সামিল করতে হবে অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে থাকা মানুষকেও। http://www.anandabazar.com/4sironam.html |
গ্রেফতারের পর পুলিসি অত্যাচারে আহত ছাত্রনেতা জোসেফ হোসেনের অস্ত্রপচার সফল বলে জানালেন চিকিত্সকরা। তাঁর হাত বাদ দিতে হচ্ছে না। আপাতত বিপদ মুক্ত জোসেফ। আর ২-৩ দিনের মধ্যে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হতে পারে তাঁকে। তবে তাঁর কব্জিতে সার ফিরতে এখনও অন্তত ৫ থেকে ৬ মাস সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন চিকিত্সকরা। প্রয়োজন দীর্ঘ সময়ের ফিজিওথেরাপির।
বুধবার রাতে সিএমআরআই হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয় গুরুতর জখম জোসেফকে। বৃহস্পতিবার সকালে প্লাস্টিক সার্জারির মাধ্যমে তাঁর হাতের ক্ষতিগ্রস্ত শিরায় অস্ত্রোপচার করেন চিকিত্সকরা। প্রতিবাদ জানাতে ধর্মতলায় এসেছিলেন মুর্শিদাবাদের খড়গ্রামের এসএফআই নেতা জোসেফ হোসেন। সহকর্মীদের সঙ্গে গ্রেফতার হন। তারপর, বাসের মধ্যে চলে পুলিসি অত্যাচার। পুলিসের লাঠিতে বাসের কাচ ভেঙে জোসেফের হাতে ঢুকে যায়। ছিঁড়ে যায় ডান হাতের শিরা, ধমনী, স্নায়ু, মাংসপেশী। রক্ত বন্ধ না হওয়ায় শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। দীর্ঘ সাত ঘণ্টা ধরে তাঁর অস্ত্রোপচার হয়।
গভীর রাতে জ্ঞান আসার পর, বুধবার সকালে ২৪ ঘণ্টার উদ্যোগে জোসেফের কথা হয় তাঁর বাবার সঙ্গে। জোসেফের জন্য উদ্বিগ্ন খড়গ্রামের ভালকুন্ডি গ্রামের বাসিন্দারাও। বুধবার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে জোসেফকে দেখতে যান বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু, এবং বাম পরিষদীয় দলের সদস্যরা। যে হাতটা তিনি বাড়িয়ে দিতেন মানুষের দিকে, জোসেফের সে হাতেই আঘাতটা গুরুতর। এই হাতটা ফের স্বাভাবিক হবে কিনা, তা নিয়ে চিন্তায় ছিলেন জোসেফ। অস্ত্রপচারের পর আপাতত কিছুটা স্বস্তিতে তিনি।
মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মঙ্গলবার রাতেই অপারেশন হয়েছে জোসেফের হাতে৷ ঘণ্টা আটেকের লম্বা অপারেশনে জোড়া লেগেছে ছিঁড়ে যাওয়া ধমনী, মাংসপেশী, স্নায়ু৷ জ্ঞান ফেরে মাঝরাতে৷ হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন ২০ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড৷ ডাক্তার নিষেধ করেছেন তাঁকে উত্তেজিত হতে৷ তা-ও বহরমপুর কর্মাস কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রটির ক্ষোভ তুঙ্গে৷ জখম এসএফআই নেতার কথায়, 'কলকাতার ঘটনা৷ সংবাদমাধ্যম ছিল৷ তাই প্রকাশ্যে এল৷ আসলে সারা রাজ্যেই রোজ চলছে পুলিশের সন্ত্রাস৷ শাসকদলের মদতে গ্রামে গ্রামে অত্যাচার চলছে৷'
কী ভাবে জখম হলেন? 'আইন অমান্য করার পর পুলিশ বাসে তুলেছিল৷ রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ের কাছে হঠাত্ পুলিশ লাঠি চালাতে শুরু করল বাসের মধ্যে৷ আমার হাতেও একটা বাড়ি এসে পড়ল৷ লাঠির ঘায়ে ঠিক তখনই জানলার একটা কাচ ভেঙে সোজা ঢুকে গেল হাতে,' বলতে বলতে চোয়াল শক্ত হয়ে উঠছিল তরুণের৷ তাঁর অভিযোগ, হাত দিয়ে যখন ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরোচ্ছে, তখনও ভ্রুক্ষেপ নেই পুলিশের৷ পরে অবশ্য পুলিশের গাড়িই পৌঁছে দেয় হাসপাতালে৷ ডান কব্জির গুরুত্বপূর্ণ একজোড়া ধমনী ছিঁড়ে গিয়ে লিটারখানেক রক্ত বেরিয়ে যাওয়ায় শরীর কিছুটা নেতিয়ে গিয়েছিল বটে, কিন্ত্ত মনের জোর হারাননি জোসেফ৷ দীর্ঘ অস্ত্রোপচারের ধকল সয়েও তাই ক্রমাগত ধিক্কার জানিয়ে গিয়েছেন পুলিশ আর শাসকদলকে৷ চিকিত্সকের পরামর্শে সকাল থেকে পেটে পড়েছে শুধু চা আর বিস্কুট৷ ডান হাতটা 'সিলিং' করে বাঁধা৷ চিকিত্সকেরা বলেছেন, ৪৮-৭২ ঘণ্টা কাটার আগে বলা যাবে না জখম হাতের ভবিষ্যত্৷ আরও ভালো চিকিত্সার আশায় বুধবার রাতে জোসেফকে স্থানান্তরিত করা হয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে৷
আত্মীয়-বন্ধুরা বলছিলেন, জোসেফের এই লড়াকু মানসিকতা সেই ছোটবেলা থেকেই৷ ৫০-৬০ জন এসএফআই সদস্য-সমর্থককে নিয়ে কলকাতা পৌঁছেছিলেন খড়গ্রাম জোনাল কমিটির সম্পাদক জোসেফ৷ মেডিক্যালের জরুরি-বিভাগে মঙ্গলবার রাতভর টেনশনে কাটিয়েছে তাঁর বন্ধু সন্দীপ, সন্দীপন, মিঠু, এসএফআইয়ের মুর্শিদাবাদ জেলা সভাপতি ধ্রবজ্যোতি ঘোষ৷ তাঁদের কথায়, 'জোসেফের মা-বাবা জানেন, রাজনৈতিক লড়াইতে এমন ঘটনা মাঝেমধ্যে ঘটেই৷ ওঁরাও রাজনীতি করেন৷ বাবা আজাদ হোসেন পঞ্চায়েত সচিবের কাজ করেন৷ কো-অর্ডিনেশন কমিটির সদস্য৷ মা-ও পার্টিমেম্বার৷' ভোর হতেই বাস ধরে কলকাতায় এসেছেন জোসেফের মামা ইসমাইল মণ্ডল৷ টিভির খবর দেখেই স্কুল শিক্ষক মামা জানতে পেরেছিলেন, জখম ছেলেটি আসলে তাঁর ভাগ্নে৷ এই ঘটনার পরে কি তাঁরা ছাত্র রাজনীতিতে বাধা দেবেন জোসেফকে? ইসমাইলের চটজলদি জবাব, 'না, না৷ মসিউরের (জোসেফের ডাকনাম) প্রবল জেদ৷ একেবারে ভয়ডর নেই৷ ওর মা-বাবার মানসিকতাই পেয়েছে৷'
এই মানসিকতার কাছেই যেন নত হতে হচ্ছে শাসকদলকেও৷ বহরমপুরে মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমুল সভাপতি মহম্মদ আলি বলেন, 'খড়গ্রামের দলীয় নেতাদের বলেছি জোসেফের বাড়ি গিয়ে ওঁর পরিবারের পাশে দাঁড়াতে৷'
বাড়ির বাইশ বছরের তরতাজা ছেলে হারিয়ে গিয়েছে চিরতরে৷ সম্ভবত, সেই ক্ষতির গভীরতা বোঝেন কেবল এক পুত্রশোকে মূহ্যমান বাবা৷ তাই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাহায্যের আশ্বাস ফিরিয়ে দিতে দু'বার ভাবেননি নিহত এসএফআই নেতা সুদীপ্তর বাবা প্রণব গুপ্ত৷ বুধবার সকালে এসএসকেএমে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পরিবারকে তিনি যাবতীয় সাহায্য করতে প্রস্তুত৷
কিন্তু, সুদীপ্তর বাবা সাফ জানিয়ে দেন, টাকা পয়সার লোভ দেখাচ্ছেন ? আমি নেব না৷ আমি ভিক্ষা নেব না৷
অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, সুদীপ্ত কি রাস্তার সস্তা রাজনীতির আরও একজন শিকার? বুধবার ক্ষোভের রেশ টের পাওয়া গিয়েছিল তাঁর দিদির কথায়৷ কিন্তু, বৃহস্পতিবার সকালেই শোনা গেল ভিন্ন এক সুর৷
প্রতি-পক্ষ অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে একটি চাকরির আবেদনও জানান সুমিতা৷ কিন্তু, বৃহস্পতিবার আবার তাঁর স্বামী জানান, তাঁর স্ত্রী আবেগের বশে ওই মন্তব্য করেছিলেন৷ তাঁদের একমাত্র দাবি, দোষীরা শাস্তি পাক৷
বয়ানের এই ফারাক ঘিরে অবশ্য রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল, তবে কি দলের বিরুদ্ধে অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রীর কাছে চাকরির আর্জিতে অস্বস্তিতে পড়ে সিপিএম নেতৃত্বই পরিবারকে বয়ান বদলের জন্য চাপ দিয়েছে? যদিও সেই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন সিপিএম নেতা রবীন দেব৷
সুদীপ্তর মৃত্যু ঘিরে ইতিমধ্যেই রাজ্য রাজনীতি সরগরম৷ সেই বিতর্কে ঘি ঢেলেছিল সুদীপ্তর দিদির অভিযোগ৷ এবার তাঁর বয়ান বদল বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ করল বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল৷
http://www.abpananda.newsbullet.in/kolkata/59-more/35296-2013-04-04-08-30-50
সস্তা প্রচারের হাতিয়ার সেই আইন অমান্য | ||
সন্দীপন চক্রবর্তী • কলকাতা | ||
ভাই এতটা সক্রিয় রাজনীতি করে জানলে চড় মেরে হলেও আটকাতেন! বুধবার কথা বলতে বলতে ডুকরে উঠলেন সুদীপ্ত গুপ্তর দিদি সুমিতা সেনগুপ্ত: তা হলে তো আর ভাইকে হারাতে হত না! ভাইকে হারানোর এক দিন পরে এবিপি আনন্দের ক্যামেরার সামনে ছাত্রদের রাজনীতিতে টেনে আনারই কড়া সমালোচনা করেন সুমিতাদেবী। যাঁদের ছেলেমেয়েরা রাজনীতি করেন, সেই সব বাবা-মায়ের প্রতি সুমিতার আবেদন, "দরকার হলে ওদের চড় মেরে আটকান। বাবা-মায়ের হাতে মার খেলে বাচ্চারা মরে না। পুলিশের লাঠি খেলে মরে!" এমন একটা দিনে সুমিতাদেবী এই ক্ষোভ জানিয়েছেন, যে দিন সামগ্রিক ভাবে ছাত্র রাজনীতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ছাত্রদের নিয়ে আইন অমান্যের মতো আন্দোলনে নেমে পড়াটাও সমালোচনার মুখে। রাজ্য রাজনীতির সঙ্গে যাঁরা ওয়াকিবহাল, রাজনীতির হাতিয়ার হিসেবে আইন অমান্য নিয়ে তাঁদের বক্তব্য, যুগ বদলেছে। সরকার বদলেছে। বদলেছে বিরোধী। নেতাদের মুখ বদলেছে। কিন্তু আইন অমান্যের ট্র্যাডিশন চলছেই! ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে গাঁধীর আইন অমান্যের ভিন্ন প্রেক্ষাপট এবং তাৎপর্য ছিল। যুগান্তর ঘটে গেলেও হরেক কিসিমের রাজনৈতিক দল সেই বহুল ব্যবহৃত অস্ত্র ছাড়েনি! এই ধরনের কর্মসূচিতে মুহূর্তের উত্তেজনায় অঘটন যে ঘটে যেতে পারে, নেতাদের অজানা নয়। আন্দোলনকারীরা পুলিশি ব্যারিকেড ভাঙতে গিয়ে সংযম হারাতে পারেন। আবার পুলিশও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কখনও সখনও বাড়াবাড়ি করে ফেলতে পারে। অতীত অভিজ্ঞতায় এমন দৃষ্টান্ত আছে বহু। | ||
শেষ শ্রদ্ধা। এসএফআই দফতরে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। ছবি: দেবাশিস রায় | ||
এই প্রশ্নকে আরও প্রাসঙ্গিক করে দিল মঙ্গলবারের ঘটনা। সে দিন ব্যারিকেড ভেঙে আইন অমান্যের আগে রীতিমতো তপ্ত ছিল আবহ। গাঁধীবাদী আইন অমান্যের পথে কখনও হাঁটেনি বামপন্থী দলগুলি। এ দিনও তার অন্যথা হয়নি। আইন অমান্যকে গুরুত্বপূর্ণ করে দেখাতেই ছাত্র-নেতারা আবহ তপ্ত করে তোলেন। জোরালো স্লোগানের সঙ্গে নেতারা মারমুখী চেহারা নেন বলেই জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। ফলে উল্টো দিকে পুলিশও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। রাজনীতিরই কেউ কেউ বলছিলেন, এ যেন যুদ্ধের আগে চিৎকার-চেঁচামেচি করে লড়াইয়ের হাওয়া তৈরি করা। এই অবস্থায় সব সময় সকলের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। ফলে ধাক্কাধাক্কি বা সংঘর্ষ হওয়াটা অসম্ভব কিছু নয়। এই হল্লার পরে যখন ধাক্কা দিয়ে ব্যারিকেড ভেঙে আইন অমান্য করতে যান ছাত্র নেতারা, তখন সেটা আর গাঁধীবাদী আন্দোলন থাকে না। এই ভাবে হল্লা তুলে আইন অমান্য এবং তাতে সুদীপ্তর মতো অল্প বয়সী ছাত্রদের জড়িয়ে ফেলা প্রকারান্তরে এই বিষয়টির সমালোচনা করেছেন সুমিতাদেবী। বলেছেন, "ছাত্রদের মন দিয়ে পড়াশোনা করা উচিত।" বলেছেন, "শিক্ষাঙ্গনে রাজনীতি বন্ধ হোক।" বলেছেন, "সিপিএমই ওর (সুদীপ্তর) মগজধোলাই করেছে। তাকে সব রকম ভাবে ব্যবহার করেছে।" মগজ ধোলাইয়ের জেরেই যে সুদীপ্তর মতো তরতাজা বহু ছাত্রছাত্রী আইন অমান্যের মতো আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন, সে কথা বলছেন অনেকেই। তাঁদের বক্তব্য, এই ধরনের আন্দোলনে ছাত্রদের ব্যবহার করাটা অনেক সহজ। না বুঝেই যথেষ্ট ঝুঁকির মধ্যে গিয়ে পড়েন তাঁরা। পুলিশ যে কোনও সময় মারমুখী হয়ে উঠতে পারে, ফলে বাড়তে পারে প্রাণের আশঙ্কা এ সব জেনেও রাজনৈতিক নেতারা আইন অমান্যের মতো এমন ঝুঁকিপূর্ণ আন্দোলন থেকে বিরত হন না! কেন? রাজনীতির কুশীলবেরাই একান্ত আলাপে স্বীকার করেন, এতে প্রচার পাওয়া যায় ভাল। সামান্য একটু গোলমাল বাধিয়ে দিতে পারলে আজকের ২৪ ঘণ্টার নিউজ চ্যানেলের জমানায় তো আরও কপাল খুলে গেল! প্রশাসকেরা মনে করেন, সরকারি আইন, প্রশাসনের নিয়ম-নীতি মানছি না এইটা দেখাতে পারলে বেশ বীরত্ব দেখানো যায়। তাই ঝুঁকি, উত্তেজনা, সংঘর্ষ এবং ক্ষয়ক্ষতি, মায় প্রাণহানির পরোয়া না-করে আইন অমান্যের চল দিব্যি চালু! | ||
| ||
এবং কী আশ্চর্য! পৃথিবীর আর যে কোনও বিষয়ে যাঁরা ভিন্ন মেরুতে অবস্থান করবেন, আইন অমান্যের বেলায় তাঁরা ভাই ভাই! বাম-ডান, সিপিএম-তৃণমূল সবাই নানা সময়ে নানা কারণে আইন অমান্য করেছে। ভবিষ্যতেও করবে। আন্দোলনের এমন ধারার যে বিকল্প নেই, সমস্বরে তা-ই বলছেন সিপিএমের শ্যামল চক্রবর্তী, তৃণমূলের সুব্রত মুখোপাধ্যায়, কংগ্রেসের মানস ভুঁইয়া। এমনকী, এসইউসি-র প্রভাস ঘোষও। ছয়-সাতের দশকে বাম ছাত্র আন্দোলনের বিখ্যাত জুটি ছিলেন শ্যামল-সুভাষ। বিশ্বব্যাঙ্কের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রবার্ট ম্যাকনামারার সফরের বিরুদ্ধে কলকাতা কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন তাঁরা! সুভাষ চক্রবর্তী প্রয়াত। তাঁর এককালীন সঙ্গী, সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শ্যামলবাবু বলছেন, "রাজনৈতিক দল হিসাবে আমাদের লক্ষ্য এমন আন্দোলনের কর্মসূচি নেওয়া, যাতে সমাজের সব অংশের মানুষ অংশগ্রহণ করতে পারেন। আইন অমান্য সেই রকমই একটা যুগোত্তীর্ণ আন্দোলনের পদ্ধতি। ব্যারিকেড পেরিয়েও আন্দোলনকারীরা তো পুলিশের কাছেই যায়! এতে অশান্তির কিছু নেই। 'সিস্টেমে'র প্রতি অনাস্থা প্রকাশের জন্য প্রতীকী অর্থে এই আন্দোলন করা হয়। সব দল করে। আগেও হয়েছে, এখনও হয়।" তবে একই সঙ্গে বর্ষীয়ান নেতা শ্যামলবাবুর বক্তব্য, "আমরা বহু আইন অমান্য করেছি। কিন্তু পুলিশের হেফাজতে চলে যাওয়ার পরে মঙ্গলবার কলকাতায় যেমন ঘটনা ঘটেছে, কখনও কোথাও হয়েছে বলে শুনিনি!" বস্তুত, মঙ্গলবার শহরে প্রশাসন তথা শাসক দলের ভূমিকাও সব মহলকে বিস্মিত করেছে! ওই দিন বাম ছাত্র সংগঠনগুলির আইন অমান্যের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে। একই জায়গায় পরে বামফ্রন্টের পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে অবস্থানেরও অনুমতি ছিল। কিন্তু তৃণমূল যে রাতারাতি মেট্রো চ্যানেলে অবস্থান কর্মসূচি নিয়েছিল, তার কোনও আনুষ্ঠানিক অনুমতিই ছিল না! স্বভাবতই প্রশ্ন, শাসক দলই যদি আইনের শাসনের তোয়াক্কা না-করে, বিরোধীদের কাছে কী প্রত্যাশা করা হবে? ধর্মতলাকে কেন্দ্র করে কাছাকাছি সময়ে তিনটি কর্মসূচি পুলিশের ঘাম ছুটিয়ে দিয়েছিল। যদিও অপ্রীতিকর ঘটনাটি শেষ পর্যন্ত ঘটেছে প্রেসিডেন্সি জেল চত্বরে। বর্তমান শাসক দলের নেতারাও নীতিগত ভাবে আইন অমান্যে অন্যায়ের কিছু দেখছেন না। বামেদের যেমন শ্যামল-সুভাষ, কংগ্রেসের ছাত্র পরিষদের তেমনই সোনালি জুটি ছিল প্রিয়-সুব্রত। অধুনা রাজ্য সরকারের বর্ষীয়ান মন্ত্রী সুব্রতবাবু সাফ বলছেন, "আইন অমান্যের কোনও বিকল্প এখনও কেউই ভেবে উঠতে পারেনি। স্বাধীনতার পর থেকে এই আন্দোলনটাকে বড় জায়গায় নিয়ে গিয়েছে কমিউনিস্টরা। আমরা ওদের দেখে অনেক কিছুই শিখেছি। এটাও শিখেছি! একটা দল এই আন্দোলন করে যদি বড় হতে পারে, আমরাই বা কেন পারব না?" ছাত্র পরিষদের এই বিখ্যাত প্রাক্তনীর মতে, নীতি ও আদর্শের ভিত্তিতে আইন অমান্য হলে তাতে অন্যায় কিছু নেই। কিন্তু সে আন্দোলন যদি ক্ষমতার খেলার অংশ হয়, শুধু ছবি তোলা উদ্দেশ্য হয় তা হলে তার পরিণতি ভাল হতে পারে না। আর ঝুঁকি, হিংসার আশঙ্কা? সুব্রতবাবুর জবাব, "সেটা নেতৃত্বের উপরে নির্ভর করে। আমাদের সৌভাগ্য, প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির মতো এক জন সেনাপতি পেয়েছিলাম! ছাত্রদের উপরে যার 'সুপ্রিম কন্ট্রোল' ছিল। আমার মনে আছে, এক বার পুলিশের ব্যাজ খুলে নেওয়ার ডাক দেওয়া হল। এক ঘণ্টা আগে প্রিয়দা বলল, কেউ ও সব করবে না। কেউ কিন্তু পুলিশের উর্দি বা টুপিতে হাত দেয়নি!" ছাত্র পরিষদেই হাতে খড়ি-হওয়া কংগ্রেস নেতা মানস ভুঁইয়া যুক্তি দিচ্ছেন, "কোনও সিদ্ধান্ত পছন্দ না-হলে গণতন্ত্রে আমি কি বোমা মারতে পারি? পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরাতে পারি? না! ১৪৪ ধারা ভেঙে চোখে আঙুল দিয়ে সরকারকে দেখাতে পারি, তোমার নিয়ম মানছি না! আইন অমান্য আন্দোলনের দর্শনটা এই জায়গায়।" তাঁর মতে, পুলিশ বা আন্দোলনকারীদের ভুলে কোনও ঘটনা ঘটলে তা আলাদা প্রশ্ন। কিন্তু গাঁধীবাদী এই আন্দোলনের ঘরানা সেটা নয়। কলকাতার রাস্তায় আইন অমান্যের নামে পুলিশের মনে বছরের পর বছর ভয় ধরিয়ে দিত এসইউসি। প্রতি বছর ৩১ অগস্ট তারা নিয়ম করে আইন অমান্য করে। এসইউসি-র সাধারণ সম্পাদক প্রভাসবাবুর ব্যাখ্যা, "প্রাক্-স্বাধীনতা আমল থেকে চলে-আসা এই আন্দোলনের ঐতিহ্য ত্যাগ করতে হবে, এমন কোনও কারণ তো ঘটেনি! মিছিল, অবস্থান, ধর্মঘটের মতো এটাও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের একটা পদ্ধতি। আন্দোলনকারীরা জানে, তারা গ্রেফতার বরণ করবে। পুলিশও জানে, আন্দোলনকারীরা গ্রেফতার বরণ করবে। এতে সমস্যা কোথায়?" প্রভাসবাবু উদাহরণ দিচ্ছেন, ১৯৯০ সালে তাঁদের আইন অমান্যে পুলিশের গুলিতে মাধাই হালদারের প্রাণ গিয়েছিল। সেটা পরিস্থিতি মোকাবিলার ব্যর্থতা। আন্দোলনের নয়। আন্দোলন নির্বিকল্প! সুদীপ্ত গুপ্তের প্রাণ এমন কী আর দামি? |
এসএফআই নেতা সুদীপ্ত গুপ্তর মৃত্যুর প্রতিবাদে শহর জুড়ে প্রতিবাদের ঝড়৷ মিছিল, মিটিং, সমাবেশ৷ এদিন সন্ধে ছ'টা নাগাদ গড়িয়া থেকে বামেদের মিছিল শুরু হয়৷ গাঙ্গুলি বাগান, বাঘাযতীন হয়ে নেতাজি নগর পর্যন্ত মিছিল যায়৷ মিছিলে পা মেলান সূর্যকান্ত মিশ্র, সুজন চক্রবর্তী, রবীন দেব, তড়িত্ তোপদার, মনোজ বন্দ্যোপাধ্যায় সহ বহু বাম নেতা-কর্মী৷ এরপর নেতাজি নগরে সভা করেন তাঁরা৷
সুদীপ্ত গুপ্তর মৃত্যুর ঘটনাকে ছোট ও তুচ্ছ ঘটনা বলায় মুখ্যমন্ত্রীর সমালোচনায় সরব হন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র৷
এদিন সুদীপ্ত গুপ্তর বাড়ি যান প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য ও সিপিএম নেতা কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়৷ সুদীপ্তর বাবার সঙ্গে বেশকিছুক্ষণ কথা বলেন তাঁরা৷ ক্ষোভ উগরে দেন সদ্য পুত্র হারা বৃদ্ধ৷
সুদীপ্তর মৃত্যুকে ছোট ঘটনা আখ্যা দেওয়ায় মুখ্যমন্ত্রীর সমালোচনায় সরব হন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য৷
এদিকে, সুদীপ্ত গুপ্তর মৃত্যুর প্রতিবাদে এদিন হাইকোর্ট, সিটি সিভিল কোর্ট ও ব্যাঙ্কশাল কোর্ট চত্বরে বিক্ষোভ দেখান গণতান্ত্রিক আইনজীবী ফেডারেশনের সদস্যরা৷ তাঁদের দাবি, সুদীপ্তর মৃত্যুর ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত করতে হবে৷ না হলে তাঁরা আইনি পদক্ষেপ করবেন৷
http://www.abpananda.newsbullet.in/kolkata/59-more/35313-2013-04-04-15-00-26
বেঙ্গালুরু ও কলকাতা:সুদীপ্ত গুপ্তর মৃত্যুর ঘটনাতেও ছোট ঘটনার তত্ত্ব খাড়া করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ অন্যদিকে, সংবাদমাধ্যমকে এখনই সিদ্ধান্তে না পৌঁছতে পরামর্শ দিল কলকাতা পুলিশ৷ পাশাপাশি, সুদীপ্ত গুপ্তকে লাঠি দিয়ে মারার অভিযোগ কার্যত খারিজ করে দিয়েছে পুলিশ৷ এদিকে,রাজ্যপাল এম কে নারায়নন তদন্ত শেষ হওয়ার আগে কোনওরকম সিদ্ধান্তে না পৌঁছানোর জন্য এদিন কার্যত বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীকে৷ রাজনৈতিক মহলের মতে, মুখ্যমন্ত্রী থেকে পুলিশ, সবাই সুদীপ্তর মৃত্যু নিয়ে তদন্ত শেষ হওয়ার আগেই যেভাবে 'দুর্ঘটনা'র সিদ্ধান্তে পৌঁছে গিয়েছেন, হয়ত তার জেরেই রাজ্যপালের এই আবেদন৷
আজ বেঙ্গালুরু পৌঁছে সুদীপ্তর মৃত্যু সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, একটি ছোট ও তুচ্ছ ঘটনা৷ পুলিশি অত্যাচারের অভিযোগ খারিজ করে দিয়ে তিনি বলেন, এটি দুর্ঘটনা৷ এমনকী সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট দেখে নিন৷ এর কিছুক্ষণ আগে লালবাজারে এক সাংবাদিক সম্মেলনে কলকাতা পুলিশের বিশেষ অতিরিক্ত কমিশনার, সদর জাভেদ শামিম সুদীপ্তর দেহে লাঠি বা রডের আঘাতের কোনও চিহ্ন পাওয়া যায়নি বলে জানিয়ে বলেন, তদন্ত শেষ হওয়ার আগেই কোন সিদ্ধান্ত উপনীত হওয়া যায় না
কিন্তু, তিনি নিজে কিংবা মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধান্তে পৌঁছে গেলেও, সংবাদমাধ্যমকে পরামর্শ দেওয়ার সুযোগ ছাড়লেন না বিশেষ অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (সদর) জাভেদ শামিম৷ তাঁর অভিযোগ, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম সুদীপ্তর মৃত্যুর কারণ নিয়ে সিদ্ধান্তমূলক রিপোর্ট করছে৷ যার ফলে মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হতে পারে৷ কিন্তু, তদন্ত শেষ হওয়ার আগেই মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশমন্ত্রীর রায় ঘোষণা তদন্তকে প্রভাবিত করবে না? কয়েক মুহূর্ত আগে সংবাদমাধ্যমকে পরামর্শ দেওয়া জাভেদ শামিম কিন্তু এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলেন না৷
যে জাভেদ শামিম সংবাদমাধ্যমকে পরামর্শ দিচ্ছেন, তিনি কিন্তু নিজেই ঘটনার দিন তদন্ত শুরু হওয়ার আগে দুর্ঘটনার তত্ত্ব সামনে এনেছিলেন৷ তার পরের দিন খোদ মুখ্যমন্ত্রী৷ তবে, এসব সত্ত্বেও, মুখ্যমন্ত্রীর পাশে দাঁড়ানোর কিন্তু আপ্রাণ চেষ্টা করলেন জাভেদ শামিম৷
উল্লেখ্য, পুলিশ-প্রশাসন, এমনকি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী প্রথম থেকেই সুদীপ্ত গুপ্তর মৃত্যুর ঘটনায় দুর্ঘটনার তত্ত্ব খাড়া করতে চাইছেন বলে বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ উঠেছে৷ মুখ্যমন্ত্রী তদন্ত শেষ হওয়ার আগেই পার্কস্ট্রিট, কাটোয়ায় গণধর্ষণের ঘটনাকে সাজানো আখ্যা দিয়েছিলেন৷ রায়গঞ্জ কলেজে অধ্যক্ষ নিগ্রহের ঘটনাকে ছোট্ট আখ্যা দিয়েছিলেন তিনি৷ এধরনের বিভিন্ন ঘটনাকে খাটো করে দেখানোর যে প্রবণতা তিনি দেখিয়েছেন সুদীপ্তর মৃত্যুর মতো মর্মান্তিক ঘটনাতেও তা বজায় রাখলেন৷।
গতকালই এসএসকেএম হাসপাতালে গিয়েও সুদীপ্তর মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশের ল্যাম্পপোস্টে ধাক্কার তত্ত্বে সিলমোহর দিয়ে তিনি বলেছিলেন, তাঁদের দলের অনেক কর্মীও ট্রেনে যেতে গিয়ে পোস্টে ধাক্কা লেগে মারা গেছেন৷ এদিনও বিচারবিভাগীয় তদন্তের প্রসঙ্গ তিনি এড়িয়েই গিয়েছেন৷
এভাবে মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে দেওয়ার পর ঘটনার তদন্ত আর সঠিক পথে এগোতে পারে কিনা, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করা হয়েছে বিভিন্ন মহল থেকে৷ মুখ্যমন্ত্রীর অবস্থানকেই কার্যত সমর্থন করে সুদীপ্ত গুপ্তকে লাঠি দিয়ে মারার অভিযোগ আজ কার্যত খারিজ করে দিয়েছে পুলিশ৷ এদিন, জাভেদ শামিম দাবি করেন, সুদীপ্তর মাথায় ভোঁতা স্থির বস্তুর আঘাতের উল্লেখ রয়েছে ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে৷ লাঠি, বা রডের আঘাতের কোনও চিহ্ন নেই৷
http://www.abpananda.newsbullet.in/state/34-more/35310-2013-04-04-13-29-24
পুলিশের মারের ফলেই সুদীপ্তর মৃত্যু হয়েছে--পরিবার ও এসএফআই নেতারা মঙ্গলবারই এই অভিযোগ করেছিলেন৷ অন্য দিকে, পুলিশ-প্রশাসনের তরফে দাবি করা হয়, লাইটপোস্টে ধাক্কা লেগেই মারা গিয়েছেন ওই তরুণ৷ বেপরোয়া বাস চালানোর ফলেই ধাক্কা লাগে৷ এই তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা করতেই বুধবার বাস-চালককে গ্রেপ্তার করা হয়৷ আর তার পরেই বাস সংগঠনের তোপের মুখে পড়ে প্রশাসন৷ বেঙ্গল বাস-সিন্ডিকেটের শীর্ষ নেতা দীপক সরকারের বক্তব্য, 'ধৃত ছাত্রদের পুলিশই জোর করে বাস থেকে নামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল৷ তখনই সম্ভবত মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে৷ চালক বা খালাসি তো ছাত্রদের ধাক্কা মারেননি, তা হলে তাঁদের কেন দায়ী করা হবে? চালক-খালাসি দোষ করলে ছাত্ররাই রুখে দাঁড়াতেন৷'
সরাসরি রাজ্য সরকারকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন মিনিবাস অপারেটর্স কমিটির সাধারণ সম্পাদক অবশেষ দাঁ-ও৷ তিনি মনে করেন, নিজেদের দায় এড়াতেই চালককে ধরেছে প্রশাসন৷ তাঁর বক্তব্য, 'পুলিশ ওই বাস নিয়ে নেওয়ার পর তা পুলিশের সম্পত্তি৷ তাই তখন বাসের চালককে পুলিশের নির্দেশেই চলতে হয়৷ বাসের দায়িত্ব পুলিশ নিলে তা সরকারের খাস দখলে চলে যায়৷ তখন যাত্রীদের সব দায়িত্বই পুলিশের৷' অবশেষবাবুর অভিয়োগ, 'সরকার নিজেদের গাফিলতি ঢাকতেই চালককে ধরেছে৷ অত্যন্ত অন্যায় কাজ করেছে সরকার৷'
সংশ্লিষ্ট বাসের মালিক তাঁদের সাহায্য চাইলে সবরকম সহযোগিতাতেও যে তাঁরা প্রস্ত্তত--জানিয়ে দিয়েছেন দীপকবাবু, অবশেষবাবুরা৷ অনিচ্ছাকৃত মৃত্যু ঘটানোর ধারায় চালক রাজু দাসকে অভিযুক্ত করে কোর্টে পাঠিয়েছিল পুলিশ৷ আদালত অবশ্য এ দিনই তাঁর জামিন মঞ্জুর করে৷
ফের তৃণমূলের ফেসবুক-অস্বস্তি৷ ফেসবুকে এসএফআই নেতা সুদীপ্ত গুপ্তর মৃত্যুর ঘটনায় প্রতিবাদ ও শোকপ্রকাশ করায় পশ্চিম মেদিনীপুরের তৃণমূল কংগ্রেসের ছাত্রসংগঠন টিএমসিপি নেতার ওপর মানসিক চাপ সৃষ্টির অভিযোগ উঠল দলের বিরুদ্ধেই৷ প্রতিবাদে সংগঠনের জেলা সম্পাদক পদ থেকে ইস্তফা দিলেন শুভজিত্ দাস৷ শুভজিতের দাবি, ফেসবুকে তিনি নিহত এসএফআই নেতা সুদীপ্ত গুপ্তর একটি ছবিতে কমেন্ট করেন৷
ফেসবুকে তিনি লেখেন, সুদীপ্ত যেখানে থাকুন ভালো থাকুন৷ রাজনীতি নিজেকে ছাড়া কাউকে চেনে না৷ রাজনীতি খুব খারাপ৷ সুদীপ্তর মৃত্যুতে আমার চোখেও জল এসে গিয়েছে৷
শুভজিতের অভিযোগ, এরপরই দলের ওপরতলা থেকে তাঁর ওপর মানসিক চাপ সৃষ্টি করা হয়৷ প্রতিবাদে এদিন তিনি পশ্চিম মেদিনীপুরের তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সম্পাদক পদ থেকে ইস্তফা দেন৷ শুভজিত শিলাদিত্য চৌধুরি ও অম্বিকেশ মহাপাত্রের পরিণতির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেছেন, তিনি সন্ত্রস্ত বোধ করছেন।
এবিষয়ে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডার দাবি, শুভজিতের ছাত্র পরিষদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ছিল৷ তাঁকে আগেই সংগঠন থেকে সাসপেন্ড করা হয়৷
http://www.abpananda.newsbullet.in/state/34-more/35306-2013-04-04-12-10-46
যেমন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা বিভাগের এসএফআই বিরোধী ছাত্র সংগঠন ফ্যাস-এর ডাকে বুধবার একটি মিছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়ার্ল্ডভিউ চত্বর থেকে ৮বি বাস স্ট্যান্ড পর্যন্ত যায়৷ ফ্যাসের সদস্য-সমর্থকদের পাশাপাশি এই মিছিলে যোগ দেন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র সংগঠন ডিএসএফ-ও৷ সুদীপ্তর মৃত্যুর প্রতিবাদে ও রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ার অভিযোগ তুলে ক্যাম্পাসে ব্ল্যাক ব্যাচিং করেন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের নকশালপন্থী ছাত্র সংগঠন আইসি৷ পাশাপাশি কলেজস্ট্রিটে প্রতীকি পথ অবরোধও করেন তারা৷ আর সুদীপ্তর নিজের ক্যাম্পাস রবীন্দ্রভারতীতেও এদিন অস্থায়ী শহীদবেদী তৈরি করে তাতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান পড়ুয়া থেকে শিক্ষাকর্মী সকলেই৷ রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথমবর্ষের ছাত্রী পায়েল সরকারের কথায়, 'আমরা কোনও রাজনীতি করি না৷ আমরা জানিও না জানতে চাইও না কে কী রাজনীতি করতেন৷ শুধু এটুকু বলতে পারি যেভাবে পুলিশের লাঠির আঘাতে একটা তরতাজা প্রাণ চলে গেল, তাকে তীব্র ভাষায় ধিক্কার না জানালে এমন ঘটনা একদিন আমার সঙ্গেও ঘটতে পারে৷' পাশাপাশি কলেজ স্কোয়ার থেকে প্রতিবাদ-মিছিলে অংশ নেন নকশালপন্থী ও মাও-মনস্ক পড়ুয়ারাও৷ প্রায় ২৫০ জন ছাত্রছাত্রী এই মিছিলে যোগ দেন৷ মিছিলের অভিমুখ ছিল ধর্মতলার দিকে৷ কিন্ত্ত পুলিশ সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারের কাছে সেই মিছিল আটকে দেয় বলে অভিযোগ আন্দোলকারিদের৷ প্রতিবাদে সাময়িক পথ-অবরোধও করেন পড়ুয়ারা৷ পরে অবশ্য পুলিশি মধ্যস্থতায় সেই অবরোধ উঠে যায়৷
কিন্ত্ত রাজনীতিতে যারা সুদীপ্তর ঘোর বিরোধী তাদের কেন এমন কর্মসূচী? গুরুদাশ কলেজের প্রথমবর্ষের ছাত্র প্রতীক সেনগুপ্তর কথায়, 'আমি নিজে এসএফআইয়ের ঘোর বিরোধী হলেও, এই সরকার যেভাবে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ করা এবং বিরোধীদের পিটিয়ে মেরে ফেলার নীতি নিয়েছে, তা গণতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক৷ সরকার এবং প্রশাসনের বোঝা উচিত এরাজ্য থেকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে ছাত্রঐক্যের সম্ভাবনা এখনও মরে যায়নি৷ যার জ্বলন্ত উদাহরণ সুদীপ্ত গুপ্তর মৃত্যুতে সব পক্ষের এইভাবে পথে নামা৷' নকশালপন্থীদের পাশাপাশি বুধবার রাজ্যজুড়ে কালাদিবস পালন করেছে কংগ্রেসের ছাত্রসংগঠন ছাত্রপরিষদও৷ আজ শোকদিবস পালনেরও ডাক দিয়েছে তারা৷
আন্দোলন করতে গিয়ে পুলিশের লাঠির আঘাতে নিহত ছাত্র সুদীপ্ত গুপ্তর মৃত্যু কী তবে রাজ্যে ছাত্র ঐক্যের বার্তাই বয়ে নিয়ে আসছে? নাকি এই পর্ব মিটে গেলে, ক্ষমতার লড়াইয়ে ফের সংঘর্ষে লিন্ত হবেন যুযুধান পড়ুয়ারা? সেকথা অবশ্য সময়ই বলবে৷ কিন্ত্ত ঘটনার জেরে রাজ্যের ছাত্র-যুবদের মধ্যে যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের জনপ্রিয়তা এক ধাক্কায় অনেকটাই হ্রাস পেল, তা মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল৷
এসএফআইয়ের রাজ্য কমিটির সদস্য সুদীপ্ত গুপ্তর মৃত্যুর প্রতিবাদে ইস্তফা দিলেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা সম্পাদক শুভজিৎ দাস।
জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান রমাপ্রসাদ গিরির কাছে তিনি তাঁর ইস্তফা পত্রটি জমা দেন। এক বিবৃতিতে শুভজিৎ জানিয়েছেন, রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতিতে তিনি শঙ্কিত। অম্বিকেশ মহাপাত্র, শিলাদিত্যর চৌধুরীর সহ একাধিক ইস্যুতে তিনি বিচলিত। ভবিষ্যতে কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গেই আর যুক্ত হতে চান না বলেও জানান তিনি।
http://zeenews.india.com/bengali/zila/subhajit-das-resigns-agaist-sudipta-gupta_12480.html
ছাত্রনেতা সুদীপ্ত গুপ্তের মৃত্যুর ঘটনায় কার্যত স্তম্ভিত বুদ্ধিজীবীদের একাংশ। প্রেস বিবৃতি দিয়ে অবিলম্বে দোষীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা। সুদীপ্ত গুপ্তের মৃত্যুর জন্য রাজ্য প্রশাসনের প্রধানকে দায়ী করেছেন বিশিষ্ট চিত্র পরিচালক মৃণাল সেন। এসএফআই নেতা সুদীপ্ত গুপ্তর মৃত্যু নাড়িয়ে দিয়ে গিয়েছে গোটা রাজ্যকে। মৃণাল সেন বলেন, আমি মনে করি মুখ্যমন্ত্রীই এই ছেলেটির খুনি।
সোশাল নেটওয়ার্কিং সাইটে ঘটনার জন্য তীব্র ধিক্কার জানিয়েছেন অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। ঘটনায় স্তম্ভিত বুদ্ধিজীবীদের একাংশ প্রেস বিবৃতি দিয়ে প্রশাসনের ভূমিকার সমালোচনায় সরব হয়েছেন। বিবৃতিতে তাঁরা জানিয়েছেন, আমরা আতঙ্কের সাথে লক্ষ্য করছি গণতন্ত্রের বিকাশের যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে এই সরকার ক্ষমতায় এসেছিল, তা আজ কদর্য উপহাসে পরিণত হয়েছে। একের পর এক মর্মান্তিক ঘটনা তারই সাক্ষ্য বহন করছে। অবিশ্বাস্য রাষ্ট্রীয় হিংস্রতার বলি তেইশ বছরের তরুণ সুদীপ্ত গুপ্তের মৃত্যু আমাদের স্তম্ভিত ও বিমূঢ় করেছে।
http://zeenews.india.com/bengali/kolkatta/chief-minister-is-murderer-says-mrinal-sen_12470.html
পাশাপাশি যে ভয়াবহ উদাসীনতায় প্রশাসন কার্নিভালের নিশিবাসরে মগ্ন হয়ে রইলো, তাকে ধিক্কার জানানোর ভাষাও আমাদের জানা নেই। আমরা দাবি করছি, অবিলম্বে খুনি পুলিসদের শাস্তি দিক সরকার এবং দল ও প্রশাসনকে সমাজবিরোধীমুক্ত করুক। তা যদি না হয়, এই বল্গাহীন রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সর্বস্তরের মানুষের গণ প্রতিরোধ গড়ে উঠবে।
বাম ছাত্র সংগঠনের আইন অমান্য কর্মসূচির সময় রানি রাসমণি রোড থেকে সুদীপ্ত সহ বহু ছাত্র নেতা কর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিস। প্রাইভেট বাসে করে প্রেসিডেন্সি জেলে নিয়ে যাওয়ার সময় সুদীপ্তকে বাসের ভিতর বেধড়ক মারধর করা হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান অনুযায়ী, বাসের বাইরেও নির্মম ভাবে লাঠিপেটা করা হয় তাঁকে। এর জেরে পুলিসি হেফাজতেই অত্যধিক রক্তক্ষরণে মৃত্যু হয় সুদীপ্তর। ঘটনার নিন্দায় সরব গোটা রাজ্য।
বেঙ্গালুরু: কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই৷ তবে বৃহস্পতিবার অন্য আড্ডায় মাতলেন মান্না দে৷ তাঁর এদিনের আড্ডায় খোদ এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ অসুস্থ মান্না দে-কে আজ দেখে গেলেন মমতা৷ শুভেচ্ছাবার্তা দিয়ে তাঁর শতায়ু কামনা করলেন৷ বিশেষ সঙ্গীত মহাসম্মান পুরস্কার তুলে দিলেন ৯৪-এ পা দেওয়া শিল্পীকে ৯৪টা গোলাপ উপহার দিয়ে৷ কফি হাউস নয়, দুজনের আড্ডা জমল বেঙ্গালুরুতে কিংবদন্তী শিল্পীর মেয়ের বাড়িতে৷ চা, বিস্কুট থেকে মিষ্টিমুখ৷ একেবারে ঘরোয়া মুডে নস্টালজিক দু'জনেই৷ বিশেষ সঙ্গীত মহাসম্মান পুরস্কার পেয়ে আপ্লুত মান্না দে বললেন, যতদিন বাঁচবেন, গান গেয়ে যাবেন৷ পায়ের অস্ত্রোপচারের পর বিশেষ হাঁটাচলা করতে পারেন না তিনি৷ তাই সারাদিন মেয়ের বাড়িতেই থাকেন তিনি৷ কিংবদন্তী শিল্পীর প্রতিক্রিয়া, এই দিনটা তাঁর জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত৷ শরীর ভালো নেই বলে যাওয়া হয় না কলকাতায়৷ কফি হাইসের সেই আড্ডাটাওতো আর নেই৷ তাই চোখে জল ভরে আসে শিল্পীর৷
আশাবুল হুসেন৷ এবিপি আনন্দ৷
কমিশনের সচিব সুজয় হালদার জানান, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে ছাত্র-মৃত্যুর ঘটনা জানতে পেরে কমিশনের পক্ষ থেকে স্বতঃপ্রণোদিত ভাবেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ এর আগে অম্বিকেশ মহাপাত্রের ঘটনা বা ধনেখালিতে পুলিশ হেফাজতে এক তৃণমূল কর্মীর মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশের রিপোর্ট পাওয়ার পরেই নিজস্ব তদন্ত-কমিটি তৈরি করেছিল কমিশন৷ এই দুই ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারের কাছে সুপারিশও করেছে কমিশন৷
কমিশন সূত্রের খবর, একই দিনে একই সঙ্গে পুলিশ-রিপোর্ট তলব এবং নিজস্ব তদন্ত-কমিটি গঠনের ঘটনা কার্যত নজিরবিহীন৷ পুলিশ প্রকৃত তথ্য ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করতে পারে--এমন সন্দেহেই কমিশন তড়িঘড়ি নিজস্ব তদন্ত-কমিটি গড়েছে বলে মনে করছে বিভিন্ন মহল৷ বুধবার ছাত্র-মৃত্যুর বিষয়টি নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনায় বসেন কমিশনের ফুল বেঞ্চ৷ বেঞ্চ মনে করে, পুলিশের মারে এক তরুণ ছাত্রের মৃত্যুর যে অভিযোগ উঠেছে--তা গুরুতর৷ বিষয়টিকে তাই বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে৷ দুপুরে আলোচনার পরেই কমিশনের পক্ষ থেকে কলকাতা পুলিশের নগরপাল সুরজিত্ করপুকায়স্থকে এ বিষয়ে তদন্ত করে ৭ দিনের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়৷ নির্দেশে বলা হয়, এক জন অতিরিক্ত কমিশনার পদমর্যাদার কাউকে দিয়ে যেন ঘটনার তদন্ত করিয়ে রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়৷ সেই সঙ্গে সিদ্ধান্ত হয়, মানবাধিকার কমিশনের এডিজি এবং রেজিস্ট্রারকে নিয়েও একটি তদন্ত কমিটি তৈরি করা হবে৷ যাঁরা সমান্তরাল ভাবেই পুরো ঘটনার তদন্ত করবেন৷ কথা বলবেন প্রত্যক্ষদর্শী এবং বাড়ির লোকজনের সঙ্গেও৷ খতিয়ে দেখা হবে সব অভিযোগ৷ দু'টি রিপোর্ট চেয়ারম্যানের কাছে জমা পড়ার পর প্রকৃত ঘটনা সম্পর্কে সিদ্ধান্তে আসবে কমিশন৷ সেই মতো পদক্ষেপ করা হবে৷
মঙ্গলবার ধর্মতলায় এসএফআইয়ের আইনঅমান্য কর্মসূচি থেকে ছাত্রছাত্রীদের গ্রেন্তার করে বাসে প্রেসিডেন্সি জেলে নিয়ে যায় পুলিশ৷ অভিযোগ, বাস প্রেসিডেন্সি জেলের সামনে পৌঁছলে পুলিশ ধাক্কা মেরে ভিতর থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের বাইরে পাঠানোর চেষ্টা করে৷ সে সময়ে ছিটকে পড়ে ল্যাম্পপোস্টে ধাক্কা খান সুদীন্ত৷ তাঁর মাথায় আঘাত লাগে৷ ওই অবস্থাতেও তাঁকে পুলিশ লাঠিপেটা করে বলে অভিযোগ৷ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছাত্রী ডোনা গুন্ত হেস্টিংস থানায় পুলিশের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন৷
নয়াদিল্লি: অনেকেরই মতে এই মুহূর্তে ভারতের 'মোস্ট এলিজিবল ব্যাচেলর' তিনি৷
অনেকের আবার মনের ইচ্ছা, ভারতের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হোন তিনি৷ কিন্তু এসবে তাঁর মন নেই৷ তিনি রাহুল গাঁধী৷ দিনকয়েক আগেই দলীয় সাংসদদের সঙ্গে বৈঠকে তাঁর প্রধানমন্ত্রিত্বের প্রসঙ্গ ওঠা মাত্রই ধমক দিয়েছিলেন রাহুল৷ বিয়ে নিয়েও নিজের মত খোলসা করেছেন সম্প্রতি৷ দলের একাংশ এখন থেকেই তাঁকে ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে প্রজেক্ট করার জন্য উঠেপড়ে লাগলেও তা থেকে দূরত্ব বজায় রেখেই যে তিনি এগোতে চান, বৃহস্পতিবার বণিকসভা সিআইআই-এর বার্ষিক সাধারণ সভায় তা স্পষ্ট করে দিলেন রাহুল৷ কঠিন বিষয়টা হাসির মোড়কে পেশ করলেন কংগ্রেসের সহ-সভাপতি৷ বললেন, বিয়ে করার কথা, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কথা, সবই অবান্তর প্রশ্ন৷ এসবের যৌক্তিকতা নেই৷ নামের সঙ্গে গাঁধী থাকলেই রাজনীতিতে আসাটা জন্মগত অধিকার হয়ে যায়৷ বিরোধীদের অনেকেই সনিয়া-রাহুলের বিরুদ্ধে এভাবেই আক্রমণ শানান৷ সত্যটা স্বীকার করে নিলে অনেক সময় সেই আক্রমণের ধার যে অনেকটা কমে যায়, তা ভালভাবেই জানেন রাহুল৷ তাই হয়ত সেই পথেই হাঁটলেন তিনি৷
তবে, বৃহস্পতিবার রাহুল যখন কৌশলে প্রধানমন্ত্রিত্বের দৌড় থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখলেন, তখন প্রধানমন্ত্রী হওয়ার মনোবাসনা ফের স্পষ্ট করলেন নরেন্দ্র মোদী৷ প্রধানমন্ত্রী হওয়ার বাসনা স্পষ্ট করে দিয়ে তিনি বললেন, গুজরাতের ঋণ চুকিয়েছি, এবার দেশের ঋণ মেটাতে হবে৷
রাহুল বনাম মোদি৷ দু'জনেই মুখে স্বীকার না করলেও লড়াইটা ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে বলে মত রাজনৈতিক মহলের৷ নির্বাচন এখনও দূরে, তাই আপাতত কথার লড়াই চলছে৷ দু'জনেই অবশ্য কৌশলে একে অপরের নাম মুখেও আনছেন না৷ তবে তা সত্ত্বেও অদৃশ্য লড়াইটা কিন্তু চলছে৷
বণিকসভা সিআইআইয়ের বার্ষিক সাধারণ সভায় ভারতকে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দেওয়ার জন্য শিল্পমহলকে ধন্যবাদ জানান সনিয়া পুত্র। তাঁর ভাষণে বলেন, ১৯৯১ সালে তিনি যখন বিদেশে পড়তে গিয়েছিলেন, তখন বিশ্বের দরবারে ভারত সম্পর্কে কেউ ভালভাবে কিছু জানত না। কিন্তু বর্তমানে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। এই মুহূর্তে নতুন নতুন চিন্তা ভাবনা ও গঠনমূলক কাজের জন্য ভারত অনেক এগিয়ে গিয়েছে।
আজকের সভায় রাহুল যা যা বলেছেন, তা একবার দেখে নেওয়া যাক:
- আজ আমি এখানে আসতে পেরে সম্মানিত অনুভব করতে পারছি।
- ১০০ বছর আগে ভারত শুধু একটা দেশ ছিল না, একটা শক্তির উত্স ছিল।
- আজ ভারতের যা অবস্থা, তার পিছনে রয়েছে শিল্পমহলের অবদান।
- গত কয়েক বছরে, ভারতে শিল্পে মারাত্মক উন্নতি করেছে।
- নতুন চিন্তা - ভাবনা নিয়ে ভারত এখন স্বপ্ন দেখছে।
- সরকার একা কোনও গঠনমূলক কাজ করতে পারে না।
- ভারতের যুবসমাজ যথেষ্ট আশাবাদী এবং লড়াকু।
- কলেজ,বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিকাঠামোগত পরিবর্তন আনতে হবে। এমন পরিবর্তন, যা ভবিষ্যতে কাজে লাগবে।
- তিনি আরও প্রশ্ন তোলেন, হাভার্ডের থেকে পাওয়া একটা ডিগ্রি এবং লখনউয়ের একটি ডাক্তারি কলেজের পড়ার খচর সমান হবে।
- কর্মক্ষেত্রে, জাত, ধর্ম নির্বিশেষে প্রত্যেকের সমান অধিকার থাকা উচিত্।
- তিনি আরও বলেন, ভারতের সবকিছু আছে, শুধু সমানভাবে বন্টন হয়ে না, তাই এত অসমতা এই দেশে।
- কোনও একজন ব্যক্তিকে দিয়ে সমস্ত সমস্যার সমাধান করানোর চেষ্টা করা উচিত্ নয়।
- আমাদের সমস্ত সমস্যার সমাধান কোনও ব্যক্তি ঘোড়ায় করে এসে সমাধান করবে না। আমাদের নিজেদের এগিয়ে এসে করতে হবে।
- http://www.abpananda.newsbullet.in/national/60-more/35295-2013-04-04-07-11-51
সুদীপ্তর মৃত্যুর পর সেই পুরোনো অবস্থানে ফিরে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বেঙ্গালুরু একটি অনুষ্ঠানে পৌঁছিয়ে পুলিসের হেফাজতে ছাত্র মৃত্যুর ঘটনাকে তিনি `ছোট ঘটনা`, `তুচ্ছ ঘটনা` বললেন। এদিন তিনি আরও বলেন, `এটি দুর্ঘটনা। কোনও পুলিসি অত্যাচার হয়নি। ময়না তদন্তের রিপোর্টে দুর্ঘটনাই বেরোবে।` তদন্ত চলাকালীনই মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্য নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি করল।
অন্যদিকে আজই সাংবাদিক সম্মেলনে মৃত্যু নিয়ে ব্যাখ্যা দেন কলকাতা পুলিসের জয়েন্ট সিপি হেডকোয়ার্টার জাভেদ শামিম।
তিনি জানান, `কীভাবে সুদীপ্ত গুপ্তের মৃত্যু সেই নিয়ে তদন্ত চলছে।` তদন্ত শেষ হওয়ার আগে কোনওরকম মন্তব্য করা উচিত নয় বলে জানিয়েছেন শামিম। মৃত্যু সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে তদন্তে প্রভাব ফেলতে পারে কি না সেই বিষয় প্রশ্ন করা হলে সাংবাদিকদের এড়িয়ে যান শামিম। এমনকী ঘটনার ৪৮ ঘণ্টা কেটে যাওয়ার পর ঘটনাস্থলে ফরেনসিক দল যাওয়ায় তথ্যপ্রমাণ কতটা সংরক্ষিত থাকবে, সেই প্রশ্নও এড়িয়ে যান জাভেদ শামিম।
তিনি জানান ভোঁতা কিছুর আঘাত লাগে সুদীপ্ত গুপ্তর মাথায়। অমসৃণ মেঝেতে পড়ে যাওয়ার ফলে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে দেহে। প্রাথমিক ময়না তদন্ত রিপোর্টে এমন তথ্যই পাওয়া গেছে বলে দাবি করলেন জয়েন্ট সিপি হেড কোয়ার্টার জাভেদ শামিম। সুদীপ্তর দেহে রড, কাচের আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি বলেও জানিয়েছেন তিনি।
অন্যদিকে সুদীপ্ত গুপ্তর মৃত্যু নিয়ে পুলিসি অত্যাচারের যে অভিযোগ উঠছে, ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে সেই অভিযোগই আরও জোরালো হচ্ছে। শুধুমাত্র মাথাতেই নয়, সুদীপ্তর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে। তাঁর চোয়ালে গুরুতর জখম রয়েছে। দু চোখের মাঝখানে, অর্থাত্ কপালেও মিলেছে আঘাতের চিহ্ন। ময়নাতদন্তের ভিডিও রেকর্ডিং করা হয়েছে।
কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচন বন্ধ করা চলবে না। এই দাবিতে রাস্তায় নেমেছিলেন সুদীপ্ত-জোশেফরা। পুলিসি হেফাজতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন ২৩ বছরের সুদীপ্ত। তাঁর মৃত্যুর বিচারবিভাগীয় তদন্ত চেয়ে বৃহস্পতিবার গড়িয়া থেকে নেতাজি নগর পর্যন্ত মিছিলে পা মেলালেন হাজারো মানুষ। শহর জুড়ে প্রতিবাদের ঝড়৷ মিছিল, মিটিং, সমাবেশ৷ এদিন সন্ধে ছ'টা নাগাদ গড়িয়া থেকে বামেদের মিছিল শুরু হয়৷ গাঙ্গুলি বাগান, বাঘাযতীন হয়ে নেতাজি নগর পর্যন্ত মিছিল যায়৷ মিছিলে পা মেলান সূর্যকান্ত মিশ্র, সুজন চক্রবর্তী, রবীন দেব, তড়িত্ তোপদার, মনোজ বন্দ্যোপাধ্যায় সহ বহু বাম নেতা-কর্মী৷
গড়িয়া থেকে শুরু হয়ে মিছিল শেষ হল নেতাজিনগর কলেজে, যেখানে এক সময় পড়তেন সুদীপ্ত। যে জায়গা ছিল তাঁর রাজনীতির আঙ্গিনা।
এদিকে, সুদীপ্ত গুপ্তর মৃত্যুর প্রতিবাদে এদিন হাইকোর্ট, সিটি সিভিল কোর্ট ও ব্যাঙ্কশাল কোর্ট চত্বরে বিক্ষোভ দেখান গণতান্ত্রিক আইনজীবী ফেডারেশনের সদস্যরা৷ তাঁদের দাবি, সুদীপ্তর মৃত্যুর ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত করতে হবে৷ না হলে তাঁরা আইনি পদক্ষেপ করবেন৷
পুলিস হেফাজতে সুদীপ্ত গুপ্তর মৃত্যুর ঘটনায় কোণঠাসা রাজ্য সরকার। এই পরিস্থিতিতে সাংবাদিক সম্মেলনে মৃত্যু নিয়ে ব্যাখ্যা দিলেন কলকাতা পুলিসের জয়েন্ট সিপি হেডকোয়ার্টার জাভেদ শামিম। তার সঙ্গে তদন্ত শেষ হওয়ার আগে মিডিয়াকে কোনও রকম নির্ধারক মন্তব্য পেশ না করার অনুরোধও জানালেন শামিম।
ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী সুদীপ্তর দেহে রড বা কাচের আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি বলে দাবি করেছেন জয়েন্ট সিপি। তিনি জানিয়েছেন ভোঁতা কিছুর সঙ্গে সুদীপ্ত গুপ্তর মাথার সংঘর্ষ হয়। অমসৃণ মেঝেতে পড়ে যাওয়ার ফলে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে দেহে। তবে এখনও পর্যন্ত ময়নাতদন্তের সার্বিক রিপোর্ট আসা বাকি।
তদন্তে শেষ হওয়ার আগে কী ভাবে মুখ্যমন্ত্রী সুদীপ্তর মৃত্যুর কারণ নিয়ে মন্তব্য করলেন সে কথা জিজ্ঞাসা করা হলে প্রাথমিক ভাবে মুখ্যমন্ত্রীকে আড়াল করার চেষ্টা করেন শামিম। তবে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে তদন্তে প্রভাব ফেলতে পারে কি না সেই বিষয় প্রশ্ন করা হলে সাংবাদিকদের এড়িয়ে যান তিনি। এমনকী ঘটনার ৪৮ ঘণ্টা কেটে যাওয়ার পর ঘটনাস্থলে ফরেনসিক দল যাওয়ায় তথ্যপ্রমাণ কতটা সংরক্ষিত থাকবে, সেই প্রশ্নও এড়িয়ে যান জাভেদ শামিম।
আইন অমান্য কর্মসূচিতে পুলিস হেফাজতে ছাত্রনেতার মৃত্যুর তদন্ত শুরু করল ফরেনসিক টিম। আজ প্রেসিডেন্সি জেলের সামনে পিসিএইচ পিডব্লুউডি ৩৭ যে বিদ্যুতের খুঁটিতে লেগে সুদীপ্তর মৃত্যু হয় বলে বিতর্ক, সেই জায়গা ঘুরে দেখেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা। ঘটনাস্থল থেকে রক্ত এবং অন্যান্য নমুনা সংগ্রহ করে ফরেন্সিক দল। তদন্ত রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে রাজ্য ফরেন্সিক ল্যাবরোটরিতে। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে ফরেন্সিক রিপোর্ট পাওয়া যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
অন্যদিকে সুদীপ্ত গুপ্তর মৃত্যু নিয়ে পুলিসি অত্যাচারের যে অভিযোগ উঠছে, ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে সেই অভিযোগই আরও জোরালো হচ্ছে। শুধুমাত্র মাথাতেই নয়, সুদীপ্তর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে। তাঁর চোয়ালে গুরুতর জখম রয়েছে। দু চোখের মাঝখানে, অর্থাত্ কপালেও মিলেছে আঘাতের চিহ্ন। ময়নাতদন্তের ভিডিও রেকর্ডিং করা হয়েছে।
মঙ্গলবার রাসমণি রোডে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের সময় গ্রেফতারের পর এসএফআই সমর্থকদের বাসে করে প্রেসিডেন্সি জেলে নিয়ে যাচ্ছিল পুলিস। তেমনই একটি বাসে ছিলেন সুদীপ্ত গুপ্ত। পুলিসের দাবি, জেলের কাছে পৌঁছতেই বাসের ভিতর বচসা শুরু হয়। কিন্তু ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী যা জানিয়েছেন, তার সঙ্গে পুলিসের বক্তব্যের বিন্দুমাত্র মিল নেই। তাঁদের বক্তব্য আইন অমান্য কর্মসূচীর পর গ্রেফতার হলে বাস থেকে নামানোর সময় সুদীপ্ত সহ বেশ কয়েকজনকে পুলিস বেধড়ক মারে। তাঁদের আরও অভিযোগ, বাস থেকে নামতে গিয়ে পুলিসের ধাক্কায় পড়ে যান সুদীপ্ত। তার পরেও তাঁর উপর মার পড়তে থাকে বলেও জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
হেস্টিংস থানায় পুলিসের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছেন সুদীপ্তর বন্ধু এবং প্রত্যক্ষদর্শী ডোনা।
ছাত্রবিক্ষোভ কর্মসূচিতে যোগ দিতে গিয়ে নিথর হয়ে গিয়েছে ২৩ বছরের সুদীপ্ত। আড্ডার ফাঁকে একবার রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইতে শুরু করলে, যে সুদীপ্ত থামতে চাইতেন না, আজ তিনি চিরঘুমে আচ্ছন্ন। মর্গে ময়না তদন্তের পর তাঁর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তাঁর কলেজে। নেতাজি নগর কলেজ থেকে স্নাতক পাশ করেন সুদীপ্ত। কলেজে চোখের জল বাঁধ মানছে না। শান্ত অথচ দৃপ্ত এই ছাত্রের হঠাৎ চলে যাওয়া মেনে নিতে পারছেন না কেউই। অধ্যক্ষ থেকে সাধারণ ছাত্র ছাত্রী, কান্নায় ভেঙে পড়েছে গোটা নেতাজি নগর কলেজ।
কলেজ থেকে বাড়ি নিয়ে যাওয়া হবে মরদেহ। সেখান থেকে এসএফআইয়ের রাজ্য দফতরে নিয়ে যাওয়া হবে এই রাজ্য কমিটির সদস্যের দেহ। দীনেশ মজুমদার ভবন থেকে এর পর ছাত্ররা মিছিল করে সুদীপ্তের শেষকৃত্যের জন্য দেহ নিয়ে যাওয়া হবে কেওড়াতলায়।
কোনওদিনই হিংসাশ্রয়ী রাজনীতিতে বিশ্বাস করতেন না সুদীপ্ত গুপ্ত। অথচ তাঁকেই কিনা হিংসার শিকার হতে হল! ছেলের অকাল মৃত্যুতে এটাই আক্ষেপ বাবা প্রণবকুমার গুপ্তের। পুলিস কী করে এমন নির্মম অত্যাচার চালাতে পারে, সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাচ্ছেন না তিনি। গত বছর স্ত্রীকে হারিয়েছেন। নববর্ষের আগে হারালেন তেইশ বছরের ছেলেকে। পুলিসের মারে নিহত ছাত্রনেতা সুদীপ্ত গুপ্তর বাবা তবু মানসিক ভাবে অটল। ছেলের মৃত্যুর ঘটনায় দোষী পুলিসকর্মীরা যাতে উপযুক্ত শাস্তি পান, তার জন্য আইনি লড়াই চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
ভাইয়ের অকাল মৃত্যুতে চোখের জল বাঁধ মানছে না দিদি সুমিতা সেনগুপ্তের। চিরদিনের মতো হারিয়ে যাওয়ার দিনেও দিদির বাড়িতে স্নান করতে গিয়েছিলেন সুদীপ্ত। দিদির বাড়িতে সেটাই তাঁর শেষবারের মতো যাওয়া। কথাটা মনে করলেই কেঁদে উঠছেন সুদীপ্তর দিদি।
গতকাল বাম ছাত্র সংগঠনের আইন অমান্য কর্মসূচির সময় রানি রাসমণি রোড থেকে সুদীপ্ত সহ বহু ছাত্র নেতা কর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিস। প্রাইভেট বাসে করে প্রেসিডেন্সি জেলে নিয়ে যাওয়ার সময় সুদীপ্তকে বাসের ভিতর বেধড়ক মারধর করা হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান অনুযায়ী, বাসের বাইরেও নির্মম ভাবে লাঠিপেটা করা হয় তাঁকে। এর জেরে পুলিসি হেফাজতেই অত্যধিক রক্তক্ষরণে মৃত্যু হয় সুদীপ্তর। ঘটনার নিন্দায় সরব গোটা রাজ্য।
এসএফআইয়ের তরফে হেস্টিংস থানায় এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। পৃথক ভাবে অভিযোগ দায়ের করেছেন সুদীপ্তর বাবা প্রণবকুমার গুপ্ত। ইতিমধ্যে এসএসকেএম হাসপাতালে সূদীপ্তর দেহের ময়নাতদন্ত শুরু হয়েছে। বেলা বারোটা নাগাদ সুদীপ্তর দেহ নিয়ে যাওয়া হবে এসএফআইয়ের কার্যালয়ে। সেখান থেকে প্রথমে নেতাজিনগর কলেজ, এবং পরে তাঁর দেহ নিউ গড়িয়ার বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হবে। শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে কেওড়াতলা মহাশ্মশানে।
পুলিসের হেফাজতে সুদীপ্তর মৃত্যুর প্রতিবাদে আজ রাজ্যজুড়ে বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে সিপিআইএম। ধিক্কার দিবস পালন করছে বাম যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআই।
এসএফআইয়ের ছাত্রনেতা সুদীপ্ত গুপ্তের পুলিস হেফাজতের মৃত্যুর প্রতিবাদে আজ রাজ্যজুড়ে ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে এসএফআই। সেই মর্মে কলকাতার বিভিন্ন কলেজ সহ আশুতোষ কলেজের সামনেও সকাল থেকে বিক্ষোভ দেখান এসএফআই কর্মীরা। তবে দুপুরে উত্তেজনা ছড়ায় আশুতোয় কলেজ চত্বরে।
ধর্মঘট সফল করতে ছাত্রদের কাছেই আবেদন জানিয়েছিল কলেজ এসএফআই নেতৃত্ব। পরীক্ষার্থীদের ধর্মঘটের আওতার বাইরে রাখা হলেও ফর্ম ফিল আপ করতে আসা ছাত্রছাত্রীদের ফিরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়। এসএফআই নেতৃত্বের অভিযোগ, কলেজে ফর্ম ফিলআপ করার শেষদিন শনিবার হলেও তৃণমূল ছাত্র পরিষদ এবং কলেজ কর্তৃপক্ষ মিলিতভাবে রটিয়ে দেয় আজই শেষদিন। এরফলে তৈরি হয় চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলা। এসএফআই কর্মীদের হেনস্থা করার অভিযোগ উঠেছে পুলিসের বিরুদ্ধেও।
পুলিসের হেফাজতে ছাত্রনেতা সুদীপ্ত গুপ্তর মৃত্যুর প্রতিবাদে আজ রাজ্যজুড়ে ছাত্র ধর্মঘট পালন করছে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলি। কলকাতার বিভিন্ন রাস্তার পাশাপাশি হাজরা মোড়েও আজ সকাল এগারোটা থেকে এগারোটা পনেরো পর্যন্ত অবরোধ কর্মসূচিতে যোগ দেন কয়েকশো এসএফআই এবং ডিওয়াইএফআই কর্মী সমর্থক।রাস্তা অবরোধকে ঘিরে পুলিসের সঙ্গেও বচসায় জড়িয়ে পড়েন এসএফআই সমর্থকরা।
কলকাতা: এসএফআই নেতা সুদীপ্ত গুপ্তর মৃত্যুতে শিক্ষামহলে শোকের ছায়া নেমে এসেছে৷ এই প্রেক্ষাপটে শিক্ষাক্ষেত্রে প্রতিযোগিতামূলক রাজনীতি বন্ধ হওয়া উচিত বলে জানিয়ে এই ধারণার সমর্থনে জোরালো সওয়াল করলেন সুগত মারজিত৷ অন্যদিকে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনই নির্বাচন করানোর সম্ভাবনা কার্যত উড়িয়ে দিলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু৷ বললেন, শিক্ষার রাজনীতিকরণ হওয়া উচিত নয়৷
একটি ছাত্রের মৃত্যুর জেরে ভরা চৈত্রেই রাজ্য রাজনীতিতে কালবৈশাখী৷ কেন অকালে চলে যেতে হল সুদীপ্ত গুপ্তকে? সদ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডী পেরোনো সুদীপ্তর দু'চোখেও তো অনেক স্বপ্ন ছিল৷ কেন স্বপন কোলের মতো তাঁর স্বপ্নও নিমেষে চুরমার হয়ে গেল? কেন বৃদ্ধ বয়সে পুত্রশোকের যন্ত্রণা-বিদ্ধ হয়ে বাকি জীবন কাটাতে হবে তাঁর বাবা প্রণব গুপ্তকে?
উত্তর খুঁজতে গিয়ে অনেকেই চলে যাচ্ছেন রোগের শিকড়ে, যা প্রোথিত হয় বহু বছর আগে৷ ছাত্র-রাজনীতি করে রাজনীতির মূলস্রোতে উঠে আসার একাধিক উদাহরণ আছে এ রাজ্যে৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি থেকে সুভাষ চক্রবর্তী, শ্যামল চক্রবর্তী, অনেক নাম৷ কিন্তু শিক্ষাঙ্গনে রাজনীতির এই দাপট কতটা যৌক্তিক, এই বিতর্ক আজও চলছে৷ অনেকেই শিক্ষাঙ্গনকে সম্পূর্ণভাবে রাজনীতিমুক্ত করার পক্ষপাতী৷ তাঁদের কথা অনুযায়ী, শিক্ষাঙ্গনে শুধুই শিক্ষার চর্চা হওয়া উচিত৷ যেখানে রাজনৈতিক দলগুলির পতাকার তলায় নির্দিষ্ট রঙের অনুগত হয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মেতে উঠবেন না৷ শিক্ষা শেষের আগেই বৃহত্তর রাজনৈতিক ময়দানে টেনে নামানো হবে না ছাত্র-ছাত্রীদের৷ ছাত্রদের দাবিদাওয়া সীমাবদ্ধ থাকবে তাঁদের নিজস্ব প্রয়োজনের মধ্যে, সেখানে রাজনীতির অনুপ্রবেশ ঘটবে না৷ এমনই অভিমত জানিয়েছেন উচ্চ শিক্ষা সংসদ চেয়ারম্যান সুগত মারজিত্৷ অবিলম্বে ছাত্র নির্বাচনের দাবিতে আইন-অমান্যকে কেন্দ্র করেই মৃত্যু হল সুদীপ্তর৷ কিন্তু সেই নির্বাচন অবিলম্বে করার যে কোনও ইচ্ছা সরকারের নেই তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু৷
সুদীপ্তর মৃত্যু নড়িয়ে দিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলিকেও৷ ছাত্র-রাজনীতির পক্ষে সওয়াল করা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরাও এখন জোর গলায় স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারছেন না৷ সুদীপ্তর মৃত্যুর ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক, দুঃখজনক বলেও মন্তব্য করে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের মন্তব্য, এধরনের ঘটনা না ঘটাই ভালো৷ তবে ছাত্রদের রাজনীতি করা উচিত্ কিনা, এই প্রশ্নে তাঁর মন্তব্য, এটি বিতর্কের বিষয়৷
রাজনৈতিক মহলের মতে, শিক্ষাকে রাজনীতিমুক্ত করার দাবি দীর্ঘদিনের৷ কিন্তু আজও তা বাস্তবায়িত হয়নি৷ রাজনৈতিক দলগুলির অঙ্গুলি হেলনেই কাজ করে চলেছে ছাত্র সংগঠনগুলি৷ এর অবসান ঘটলে হয়ত আর অকালে ঝরে যাবে না সুদীপ্ত-স্বপনরা৷(ছবি: ফাইল চিত্র)
http://www.abpananda.newsbullet.in/state/34-more/35318-2013-04-04-15-56-47
রূপকলা কেন্দ্রের অ্যানিমেশন বিভাগের ফাইনাল ইয়ারের ছাত্রী ত্রিপর্ণা নাগের রহস্য মৃত্যু ঘিরে চাঞ্চল্য৷ দানা বাঁধছে বিতর্ক৷ কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবি, ২৬ মার্চ কলেজের মধ্যে বিষ খান ত্রিপর্ণা৷ এরপরই বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের এক অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনারের মধ্যস্থতায় তাঁকে সল্টলেকের একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়৷ পরে খবর পেয়ে সেখানে পৌঁছোন ত্রিপর্ণার বাবা৷ প্রথম থেকেই ত্রিপর্ণা কোমাচ্ছন্ন ছিলেন৷
পরিবারের দাবি, সেখানে চিকিত্সা ব্যয় সাপেক্ষ হওয়ায় ১ এপ্রিল তাঁকে এসএসকেএমে স্থানান্তরিত করা হয়৷ বুধবার দুপুরে তাঁর মৃত্যু হয়৷
কলেজ আত্মহত্যার কথা বললেও, ত্রিপর্ণার পরিবার তা মানতে নারাজ৷ ত্রিপর্ণার পরিবারের প্রশ্ন, কলেজে এই ঘটনা ঘটলেও, কর্তৃপক্ষ পুলিশকে কিছু জানাল না কেন? তাঁদের অভিযোগ, এই ক'দিনে কর্তৃপক্ষ তাঁদের সঙ্গে ফোনে একবারও যোগাযোগ করেননি৷
যদিও, অভিযোগগুলি অস্বীকার করেছেন রূপকলা কেন্দ্রের অধিকর্তা সুনীতা হাজরা৷
বাস্তবে দেখা গিয়েছে, সংবাদমাধ্যম রূপকলা কেন্দ্রে যাওয়ার পরই তড়িঘড়ি অধিকর্তা ও অন্যান্য পড়ুয়ারা এসএসকেএমের উদ্দেশে রওনা হন৷ অধিকর্তার দাবি, তাঁরা পুলিশকেও আগেই বিষয়টি জানিয়েছেন৷ কিন্তু, সল্টলেক ইলেকট্রনিক কমপ্লেক্স থানার তরফে জানানো হয়েছে, ২৬ মার্চের ঘটনা রূপকলা কেন্দ্র থেকে জানানো হয়নি৷ সল্টলেকের যে বেসরকারি নার্সিংহোমে ত্রিপর্ণাকে ভর্তি করানো হয়, তারা ভর্তির খবর জানায় বিধাননগর দক্ষিণ থানাকে৷ ইলেকট্রনিক কমপ্লেক্স থানা এই ঘটনার খবর ভবানীরপুর থানা মারফত প্রথমবার জানতে পারে বুধবার তাঁৰ মৃত্যুর পর৷ সেই তথ্যের ভিত্তিতে থানায় ডায়েরি করা হয়েছে৷
ত্রিপর্ণার পরিবারের প্রশ্ন, কেন পুলিশের মধ্যস্থতায় হাসপাতালে ভর্তি করা হল? বিধাননগর কমিশনারেটের ওই অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার সমরেন্দ্র দাসের বক্তব্য, ত্রিপর্ণা তাঁর মেয়ের সহপাঠী৷ তাঁর যাতে দ্রুত চিকিত্সা হয়, সেজন্য তিনি নার্সিংহোমের রিস্ক বন্ডে সই করেন৷ পরে তাঁর বাবা সেখানে পৌঁছোন৷ত্রিপর্ণার পরিবারের দাবি, তাঁরা শুক্রবার থানায় অভিযোগ করবেন৷
http://www.abpananda.newsbullet.in/kolkata/59-more/35314-2013-04-04-15-09-38
কলকাতাঃ সুদীপ্ত গুপ্তর মৃত্যুর প্রতিবাদ জানাতে ছাত্র ধর্মঘটের নামে এসএফআইয়ের বিরুদ্ধে দাদাগিরির অভিযোগ উঠল৷ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মঘটের যৌক্তিকতা নিয়েই এ বার প্রশ্ন উঠে গেল৷
আর ফিরবেন না সুদীপ্ত৷ তাঁর ভবিষ্যতের সব স্বপ্ন নিমেষে শেষ হয়ে গিয়েছে মঙ্গলবার৷ কিন্তু, যাঁদের ভবিষ্যত্ এখনও অপেক্ষায়? প্রতিবাদের চোটে এখন তাঁরাও চরম বিভ্রাটে৷ সুদীপ্তর মৃত্যুর প্রতিবাদে ছাত্র ধর্মঘট ঘিরে বৃহস্পতিবার উত্তপ্ত হয়ে উঠল শহরের একাধিক কলেজ৷ দুর্ভোগে পড়েন পড়ুয়ারা৷
আশুতোষ কলেজে সকাল সাড়ে এগারোটা থেকে কলেজের গেটে পিকেটিং শুরু করে এসএফআই৷ বৃহস্পতিবারই কলেজে প্রথম বর্ষের ফর্ম ফিল আপ ছিল৷ এসএফআইয়ের দাবি, ফর্ম ফিল আপের শেষ দিন ১১ এপ্রিল৷ সুদীপ্তর মৃত্যুর প্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষের কাছে বৃহস্পতিবার ছাড়া অন্য দিন ফর্ম ফিল আপের জন্য আবেদন জানানো হয়৷ কিন্তু, টিএমসিপি সমর্থকরা পড়ুয়াদের ভুল বোঝায়, বৃহস্পতিবারই ফর্ম ফিল আপের শেষ দিন৷ ফলে ছাত্ররা জোর করে কলেজে ঢুকতে চায়৷যদিও টিএমসিপি এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে৷ এসএফআই সমর্থকদের দাবি, তাঁরা কাউকে জোর করেননি৷
দীনবন্ধু অ্যান্ড্রুজ কলেজে এসএফআইয়ের কর্মী, সমর্থকরা ছাত্রছাত্রীদের ঢুকতেই দেননি বলে অভিযোগ৷ এখানেও এদিন প্রথম বর্ষের পরীক্ষার ফর্ম ফিল আপ ছিল৷ কিন্তু কলেজে ঢুকতে না পারায় ফর্ম পূরণ করতে পারেননি বহু ছাত্রছাত্রী৷ কলেজে ঢুকতে না পারায় তৃতীয় বর্ষের অনেক পড়ুয়া অ্যাডমিট কার্ড পাননি বলেও অভিযোগ৷
রাজাবাজার সায়েন্স কলেজের সামনেও সকাল থেকে অবস্থান করেন এসএফআই সমর্থকরা৷ উপস্থিতির হারও ছিল বেশ কম৷
কিন্তু, এসএফআই-র এই আচরণ নানা মহলে একাধিক প্রশ্ন তুলে দিয়েছে৷ প্রশ্ন, এক ছাত্রের মৃত্যুর প্রতিবাদে করতে গিয়ে এত ছাত্রের ভবিষ্যত্ নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অধিকার কে দিয়েছে এসএফআই-কে? সুদীপ্তর মৃত্যুতে শোকাহত-মর্মাহত গোটা ছাত্র সমাজ৷ কিন্তু, সুদীপ্তর মৃত্যুর প্রতিবাদ একজন ছাত্র কীভাবে করবে, তা একান্তই তাঁর ব্যক্তিগত বিষয়, সেই প্রতিবাদের ভাষা কী হবে, তা জোর করে চাপিয়ে দেওয়ার অধিকার কি আদৌও এসএফআই-এর আছে? নীরবতা অনেক সময় সরব প্রতিবাদের চেয়েও ভয়ঙ্কর হয়, এটুকু বোধগম্য করে কেন এসএফআই নেতারা সুদীপ্তর বিচারের ভার ছাত্রকূলের স্বতঃস্ফূর্ত মানসিকতার ওপর ছেড়ে দিচ্ছেন না? তাহলে কি বাম আমলে শিক্ষার রন্ধ্রে রন্ধ্রে রাজনীতি প্রবেশ করিয়ে 'অনিলায়নের' যে অভিযোগ উঠেছিল, তা এখনও চালিয়ে যেতে চাইছে বামেরা? প্রশ্ন উঠেছে রাজনৈতিক মহলে৷
http://www.abpananda.newsbullet.in/kolkata/59-more/35297-2013-04-04-09-09-46
একটি ছাত্রের মৃত্যু, দেখুন স্লাইড শো
http://zeenews.india.com/bengali/kolkata/father-wants-punishment_12458.html
ছাত্রনেতা সুদীপ্ত গুপ্তর মৃত্যুর প্রতিবাদে আজ বেঙ্গালুরুতেও বিক্ষোভ দেখান এসএফআই সমর্থকেরা। মুখ্যমন্ত্রী পৌঁছানোর আগেই এই বিক্ষোভ কর্মসূচি নেওয়া হয়। মুখ্যমন্ত্রী এদিন মান্না দের বাড়িতে একটি পুরস্কার দেওয়ার অনুষ্ঠান গিয়েছিলেন। মান্নাদের কল্যাণনগরের বাড়ির সামনেও বিক্ষোভ দেখান এসএফআইয়ের সমর্থকরা।
চেন্নাইতেও আজ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কুশপুতুল দাহ করেন এসএফআই সমর্থকেরা। বিক্ষোভ হয় পুদুচ্চেরিতেও। দুই শহর মিলিয়ে মোট ৩৬ জন এসএফআই সমর্থককে গ্রেফতার করেছে পুলিস।
পুলিসের মারে সুদীপ্ত গুপ্তের মৃত্যুর প্রতিবাদে আজ দিল্লির বঙ্গভবনে বিক্ষোভ দেখালেন এসএফআই সমর্থকেরা। সুদীপ্তর মৃত্যু ল্যাম্পপোস্টে ধাক্কা লেগে, পুলিসের এই তত্ত্ব সমর্থন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্য সরকারের এই ভূমিকায় রীতিমতো ক্ষুব্ধ এসএফআই সমর্থকেরা। ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছেন তাঁরা।
বঙ্গ ভবনের গেট এবং দেওয়াল টপকে ভিতরে ঢুকে পড়েন বিক্ষোভকারীরা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান সিপিআইএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি। তিনি বলেন, পুলিস রিপোর্ট অনুযায়ী মুখ্যমন্ত্রী দাবি করছেন ল্যাম্পপোস্টে ধাক্কা লেগে মৃত্যু হয়েছে সুদীপ্ত গুপ্তর। কিন্তু পুলিস তো রাজ্য সরকারের অধীন। তাহলে কেন বিচারবিভাগীয় নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি মুখ্যমন্ত্রী মানবেন না। এই দাবিতে দেশজুড়ে বিক্ষোভ চলবে বলে জানিয়েছেন ইয়েচুরি। একইসঙ্গে তাঁর মন্তব্য, পশ্চিমবঙ্গে হিংসার ঘটনা যেভাবে বাড়ছে তা গণতন্ত্রের পক্ষে বিপজ্জনক।
গতকালও বঙ্গভবনের সামনে রাজ্য সরকারকে দায়ী করে বিক্ষোভ দেখায় ছাত্রসংগঠন জেএনইউএসিউ। রাতে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কুশপুতুল পোড়ান।
ছাত্রনেতা সুদীপ্ত গুপ্তের মৃত্যুতে আলোড়িত গোটা দেশ। প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া একজন ছাত্রনেতার মৃত্যুকে মেনে নিতে পারছেন না ছাত্রসংগঠন জেএনইউএসিউ-এর সদস্যরা। বুধবার দিল্লির বঙ্গভবনের সামনে বিক্ষোভ দেখান তারা। রাতে বিক্ষোভে সামিল হন জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা। পোড়ানো হয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কুশপুতুল।
No comments:
Post a Comment